Tuesday 1 May 2018

পৃথিবীর সবচেয়ে সরল রাসায়নিক বিক্রিয়া :পর্ব 2

     পৃথিবীর সবচেয়ে সরল রাসায়নিক বিক্রিয়া

                                দুই.

           “খাঁচার ভিতর অচিন পাখি
                ক্যামনে আসে যায়
             ধরতে পারলে মন-বেড়ি,
                দিতাম পাখির পায়!”

পাখি মানে পরমাণু শান্তশিষ্ট না হলে ধরা মুশকিল! আগে ওকে ঠান্ডা মাথায় ঠান্ডা করতে হবে, সাধক বুঝেছিলেন।

সুপারসোনিক জেটের থেকেও দ্রুতগামী পরমাণুদের ছয় দিকের লেজারের ঝর্ণাধারায় ধুইয়ে শীতল করলে তাদের বেগ কমে নিদেনপক্ষে অলিম্পিক স্প্রিন্টারদের মতো হয় (“লেজারের ঝর্ণাধারায়” দ্রষ্টব্য)! আলোকীয় এই চিটেগুড়ে পরমাণুপুঞ্জ যখন ছটফটাচ্ছে তখন এর সাথে সঠিক দিক থেকে সঠিক মাপের চারমুখো চৌম্বকক্ষেত্র (সাধারণ চুম্বক দুইমুখো, উত্তর আর দক্ষিণ মেরু) বসিয়ে দিলে ষোলকলা পূর্ণ। পরমাণুগুলো এখন পিঁপড়ের মতো হেঁটে বেড়াবে, আলো আর চুম্বকের সম্মিলিত খাঁচার ভেতর! অবশ্য খাঁচা না বলে একে তিহার জেলখানাও বলা যায়। বাই চান্স কোন পরমাণু পাঁচিল টপকে পালাতে গেলে লেজারের ফোটন পুলিশ তাকে লাথি মারতে মারতে একেবারে ফাঁদের মধ্যিখানে এনে ফেলবে। একেবারে আঁটোসাঁটো নিরাপত্তা ব্যবস্থা! গোপন কথাটি হলো, ক্ষারধাতুর পরমাণুগুলোকে সহজে এমন জেলে বন্দি বানানো যায়। আর একটা লোমহর্ষক ব্যাপার, জেলখানার ভেতর বাতাসের চাপ আমাদের ঘরের চাপের দশ লক্ষ কোটি ভাগের মাত্র এবং মাত্র-- একভাগ! সুতরাং পরমাণুগুলো নিজেদের মধ্যে মারামারি বা ধাক্কাধাক্কি করতে পারে না। এতে করে ওরা খুব শান্ত শিষ্ট হয়ে যায়। তাপমাত্রা নেমে যায় এক কেলভিনের দশলক্ষভাগের একভাগে!! ছয়দিক থেকে আসা লেজার রশ্মি আর চারমুখো চুম্বকের ফাঁদে পড়ে প্রায় বায়ুশূন্য একটা স্থানে মেঘের মতো ভেসে থাকে একগোছা পরমাণু। মোটের উপর এই হলো গিয়ে মোট-- MOT Magneto Optical Trap.

আর এইটাই হলো বিজ্ঞানীর জন্য “পরমাণুর হাঁড়ি”!! এই পরীক্ষায় দুটো এরকম হাঁড়ি আছে যার একটার মধ্যে ফেলা আছে কয়েকদানা বাঁশকাঠি চালের মতো সিজিয়াম পরমাণু আর অন্যটাতে কয়েকদানা গোবিন্দভোগ চালের মতো সোডিয়াম পরমাণু। “জল” মানে ফাঁকা জায়গা এতো বেশী হাঁড়িতে যে চালের দানাগুলো খুব দূরে দূরে থেকে লাফালাফি করছে! আপনাকে একটা কাঠি দিয়ে চাল তুলে দেখতে বলা হলো চাল সেদ্ধ হয়েছে কি না?

লাফালাফি করা চালের দানাকে আপনি একটা কাঠিতে তুলতে হিমসিম খেতে পারেন, কিন্তু যদি আপনাকে দুটো কাঠি বা একটা চিমটে দেওয়া হয় তবে আপনি আরো ভালো ভাবে একটা চালের দানা তুলে দেখতে পারবেন, এ বিষয়ে হলফ করে বলা যায়। চিমটে দিয়ে আপনি তাহলে ঠিক কি করেন? তাগ্ করেন বা ফোকাস করেন চালের দানাকে।
ঠিক একইভাবে পরমাণুর আপাতঠান্ডা হাঁড়ি থেকে একটা পরমাণুকে তুলতে বিজ্ঞানীর চাই শক্তপোক্ত ফোকাসওয়ালা লেজার রশ্মি। এটাই হলো গিয়ে আলোকীয় চিমটে।

দৃশ্যটি ভাবুন। যেন মহাকাশযান থেকে লেজার রশ্মি নীচে পড়লো আর চোখের পলকে তুলে নিল গরু মোষ নেতা এমনকি আপনাকেও! কল্পবিজ্ঞানের মধ্যে বিজ্ঞানের হালকা ছোঁয়া তো থাকবেই।

এগিয়ে আসুন, যতই উদ্ভট শোনাক, আলোকীয় চিমটে কিন্তু সত্যি।

© শ্রুতিসৌরভ বন্দ্যোপাধ্যায়

3 comments:

  1. তুমি কেমন করে কলম চালাও গুণী!

    ReplyDelete
    Replies
    1. গুণী পাঠকের একটি মন্তব্য কোটি অর্বূদ সংখ্যক অক্সিজেন অণুর সমান।

      Delete
    2. This comment has been removed by the author.

      Delete