অষ্টম গর্ভ
Will the curtain rise?
Will you open the eighth act?
Claim the center stage?
Elemental haiku
By Mary Soon Lee
(DOI: 10.1126/science.aan2999
Science 357 (6350), 461-463.)
ব্রিটিশ ফিকশন লেখিকার সৃষ্ট ‘হাইকু’টির বঙ্গানুবাদ করলে দাঁড়ায় খানিকটা এরকম,
‘উত্তোলিবে যবনিকা?
উন্মোচিবে অষ্টমাঙ্ক তুমি?
মঞ্চমধ্যখানে, দাঁড়াইবে কি আসি?’
কে এই তুমি? নারী-পুরুষ-উদ্ভিদ-প্রাণী-ভাইরাস-ব্যাকটেরিয়া কেউ নয়! সে এক জড়, বলা ভালো মৌলিক পদার্থ, এমন মৌল যা এখনো জন্মায় নি!
এলিমেন্ট নাম্বার একশো উনিশ। যাকে তৈরী করতে বিশ্বের তাবত্ মানুষ-ব্রম্ভার দল নেমে পড়েছে কোমর বেঁধে--জার্মানিতে, রাশিয়ায়, জাপানে, এবং হয়তো লোকচক্ষুর অন্তরালে আরো কোথাও। কিন্তু কেন? কিসের কৃতিত্ব আছে এই মৌল আবিষ্কারের মধ্যে? আসলে মানুষ চায় তার কৌতূহলের নিরসন করতে, এর আগের একশো আঠারো খানা মৌল আবিষ্কারের (এবং সৃষ্টির) পরে আরো এগোনো যায় কি না, বাড়ানো যায় কি না পর্যায় সারণীর সীমানা! সে আবার কি?
কাট টু 1869 সাল। পঁয়ষট্টিটা তাসের কার্ডে পঁয়ষট্টি রকমের মৌল আর তাদের চরিত্র সংক্ষেপে লিখে, রাতের পর রাত জেগে, পঁয়ত্রিশ বছরের এক রাশিয়ান যুবক মিল খুঁজে চলেছেন তাদের মধ্যে। এমন ভাবে সাজাতে হবে যেন শপিং মলের বিভিন্ন তলার বিভিন্ন ডিপার্টমেন্টের মতো থাকে তারা। যেভাবে দোতলায় জিন্সের সেকশনে জিন্স ই থাকে, ডিটারজেন্ট বা বিস্কুট থাকে না, এক্কেবারে সেরকম! যা করতে আগেও অনেকে চেষ্টা করেছেন, কিন্তু পঁয়ষট্টিটা মৌল নিয়ে সামলাতে পারেন নি।
শপিং মলের জিনিসকে তো দেখা যায়, চরিত্রগত ভাবে তারা আলাদা তা বোঝা যায়, ছোঁয়া যায়। মৌলের ভৌত আর রাসায়নিক চরিত্র কে বলে দেবে? কেন? মৌল যা দিয়ে তৈরী তা দিয়ে। এক এক মৌল এক এক রকমের পরমাণু দিয়ে তৈরী। তাই পরমাণুর কোনো বৈশিষ্ট্য দিয়ে মৌলগুলোকে আলাদা করতে হবে। রাশিয়ার রসায়নবিদ দিমিত্রি মেন্ডেলিভ এরকম যে বৈশিষ্ট্য বেছে নিলেন সেটার নাম ‘পারমাণবিক গুরুত্ব’। সাদা বাংলায়, দাঁড়িপাল্লায় একপিস হাইড্রোজেন পরমাণুকে বাটখারা হিসেবে চাপিয়ে অন্য পরমাণু একপিস তার তুলনায় কত ভারি সেটার মাপ। আর সেই পারমাণবিক গুরুত্বের নিরিখে সাজাতে হবে মৌল গুলোকে। পেতে হবে একটা ছক। সুবিধা হবে ঠিক যেরকম সুবিধা শপিং মলের বিক্রেতা পেয়ে থাকেন, ছকে মৌলের অবস্থান জানলেই কেল্লাফতে! মৌল সম্বন্ধে যাবতীয় তথ্য হাতের মুঠোয়। সেই লক্ষ্যে দিন রাত এক করে অনেক দেশেই খাটছিলেন বিজ্ঞানীর দল।
কি যেন প্যাটার্ন সামনে আসছে, অথচ লিখে ফেলা যাচ্ছে না এমন যাচ্ছেতাই অবস্থা! অবশেষে হাড়ভাঙা খাটনির শেষে স্বপ্নের ঘোরে মেন্ডেলিভ একদিন এক ছক দেখলেন, জনশ্রুতি তাই বলে, আর দেখামাত্র চোখটোখ খুলে স্যাটাস্যাট লিখে ফেললেন একটা প্যাটার্ন, টেবিলের মতো, মানে পায়া ছাড়া টেবিল অবশ্যই। সে টেবিলের উপরে চৌকো চৌকো কতগুলো খোপ কাটা, আড়াআড়ি আর লম্বালম্বি। 1869 সালের 6 মার্চ মেন্ডেলিভ প্রকাশ করে ফেললেন ক্রমবর্ধমান পারমাণবিক গুরুত্ব অনুযায়ী মৌলের পর্যায় সারণী বা Periodic Table, যা বাকি সবার প্রকাশিত টেবিলাকার ছককে জনপ্রিয়তায় ছাপিয়ে গেল, মূলতঃ দুটো কারণে। প্রথমতঃ, মেন্ডেলিভ ছকের বেশ কিছু স্থান ছেড়ে রেখে করলেন ভবিষ্যত্ বাণীঃ “এইসব মৌল এখনো মানুষ আবিষ্কার করতে পারে নি বটে, কিন্তু আবিষ্কার হলে দেখা যাবে এদের ভৌত আর রাসায়নিক ধর্ম এই এই এই।” আর দ্বিতীয়তঃ, বাকি সবার মতো পারমাণবিক গুরুত্বকে বেশী গুরুত্ব না দিয়ে মাঝে মাঝে ধর্মগুলো মিলিয়ে মৌলগুলোকে সাজিয়ে দেয়া। ব্যস, জিনিয়াসের ‘জাদু’ আর ভবিষ্যত্ বাণী কে না পছন্দ করে। তাই মার্কেটে রীতিমতো হিট হয়ে গেল মেন্ডেলিভের জিনিয়াস পর্যায় সারণী। কালক্রমে আড়াআড়ি লাইনগুলোর নাম হল পর্যায় বা পিরিয়ড, আর লম্বালম্বি লাইনগুলোর নাম গ্রুপ বা শ্রেণী। শ্রেণীর মৌলগুলো যেন সবাই দোকানের তাকে রাখা জিন্সের প্যান্ট, কোমরের মাপ পরপর বেড়ে গেছে বটে তবু জিনিসগুলো জিন্স বটে। আর পাশাপাশি রাখা মৌলগুলো যেন জিন্সের প্যান্টের পরে কটনের প্যান্ট, তারপর সিন্থেটিকের জামা, এইরকম বিভিন্ন ধর্মওয়ালা মৌল। আর এইভাবে গোটা ছকটা হলো প্রাচীন কি আধুনিক সকল রসায়নবিদের কাছে একটা মহাভারত! “যে মৌল নাই এ টেবিলে, তা নাই বিশ্বে!” আর ঠিক একবছর পরে 2019 সালে বিশ্বজুড়ে় পালিত হতে চলেছে সে আবিষ্কারের দেড়শো বছর।
ফ্ল্যাশব্যাক, বিংশ শতকের শুরু। বিজ্ঞান কিন্তু থেমে থাকছিল না। মৌল আবিষ্কার এগিয়ে চলেছিলো পদার্থবিদ্যা, গণিত আর রসায়নে নিত্যনূতন আবিষ্কারের মতোই। সোজা কথায়, ছক বেড়ে চলেছিল দৈর্ঘ্যে ও প্রস্থে। গোলমাল আর বিতর্ক পর্যায় সারণী তৈরীর আদিকাল থেকে পিছু ছাড়ে নি! 1911 সালে আর্নেস্ট রাদারফোর্ডের পরীক্ষায় জানা গেল পরমাণুর ভেতরে থাকে পজিটিভ চার্জওয়ালা নিউক্লিয়াস, আর কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ যে বছর নোবেল পেলেন সে 1913 সালে হেনরী মোজলে পরীক্ষা করে প্রমাণ করে দিলেন, নিউক্লিয়াসের চার্জ হলো মৌলগুলোর একটা নিজস্ব চরিত্র। তাই সিদ্ধান্ত হলো ‘পারমাণবিক গুরুত্ব’ এর বদলে পারমাণবিক নিউক্লিয় চার্জ অনুসারে সাজানো হোক পর্যায় সারণী। পরে জানা যাবে, নিউক্লিয়াসের চার্জের কারণ প্রোটন কণা, আর সবশেষে মানুষের ধারণা হবে, পরমাণুর কেন্দ্রের প্রোটন কণার সংখ্যাই খেলছে আসল খেলা, যে সংখ্যা পাল্টে গেলে মৌল যায় পাল্টে। এর নাম পারমাণবিক সংখ্যা। এই সংখ্যার ভিত্তিতে যখন সাজানো হলো সারণী, তখন অনেক পুরোনো দ্বন্দের নিষ্পত্তি হয়ে গেল।
এইরকম 1869 সালে মেন্ডেলিভের পর্যায় সারণী প্রকাশের পরে অন্ততঃ সাতশো বার সংস্কার হয়েছে তার বিভিন্ন রূপে! সে ইতিহাস সংক্ষেপে লিখতে গেলেও খাতার পাতার সেলুলোজ ভেঙে গ্লুকোজ হয়ে যাবে! দীর্ঘ পর্যায় সারণীর যে সংস্করণ আজ একজন মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী পড়ে, তার মোট পর্যায় সাতটা, শ্রেণী আঠারোটা। এই ছকে এক, দুই থেকে শুরু করে মোট খোপ আছে একশো আঠারোটা। তার মধ্যে প্রাকৃতিক মৌল যেমন আছে, তেমনি আছে মানুষের ল্যাবরেটরিতে তৈরী কৃত্রিম মৌল। মৌলদের এই সুবিশাল চিড়িয়াখানায়, 2016 সালে সর্বশেষ এন্ট্রি চারটে মৌল-- 113 নং নাইহোনিয়াম, 115 নং মস্কোভিয়াম, 117 নং টেনেসিন, 118 নং ওগানেসন। বলা বাহুল্য এরা প্রত্যেকেই কৃত্রিম। বাকি মৌলগুলো এর আগেই আবিষ্কার হয়ে গেছিলো। একশো আঠারোতম মৌল, ওগানেসন, আবিষ্কারের পরে সবকটা খোপ পূর্ণ হলো পর্যায়সারণীর। সাতপর্যায়ওয়ালা সারণী দি এন্ড! এরপরে আরেকপিস নূতন মৌল আবিষ্কার মানে সারণীতে অষ্টম পর্যায়ের সংস্থান করা, দেড়শো বছরের প্রাচীন ঐতিহ্যের গায়ে খোদাই করে কংক্রিটের নূতন ইমারত দাঁড় করানো। আর তাই মেরি সুন্ লি তাঁর হাইকুতে তুলে ধরেন প্রশ্ন, এই ‘মৌলিক’ নাটকের অষ্টম অংক সত্যিই হবে কি না!
পর্যায় সারণীর অষ্টম গর্ভে যে মৌলের পরমাণু জন্মাবে, তাকে কি সত্যিই পরমাণু বলা যাবে? কেমনই বা হবে সেই অষ্টম গর্ভের মৌলটার রসায়ন?
এখনো পর্যন্ত জানা গেছে যে প্রকৃতিতে এক থেকে আটানব্বইখানা প্রোটনওয়ালা পরমাণু বর্তমান। শেষেরগুলো অতি কম পরিমাণে হলেও প্রাকৃতিক মৌল হিসেবে পাওয়া গেছে। এরপরের নিরানব্বই থেকে একশো আঠারোটা প্রোটন গুঁজে পরমাণু তৈরী করার কৃতিত্ব কেবল মানুষ-ব্রম্ভাদের! এইখানে জানিয়ে রাখা যাক যে পরমাণুর নিউক্লিয়াসে কেবল প্রোটন বাবাজী থাকেন না, কেবলানন্দের মত উপস্থিত--নিস্তড়িত্ ভারী কণা নিউট্রন (একমাত্র ব্যতিক্রম সাধারণ হাইড্রোজেনের পরমাণু যাতে কেবল একটাই প্রোটন নিউক্লিয়াস তৈরী করে)। ডাকার সুবিধার জন্য এদের একসাথে নিউক্লিয়ন বলতে পারি। নিউক্লিয়নগুলোকে একজায়গায় ধরে রেখেছে নিউক্লীয় বল। না হলে পজিটিভ চার্জওয়ালা প্রোটন নিজেদের মধ্যে গুঁতো আর ঠ্যালা মেরে ছিটকে যেত চতুর্দিকে! নিউক্লিয়াস বলে আর কিছু থাকতো না! মুশকিল হয় যখন নিউক্লীয় পরিবারে মেম্বার মানে নিউক্লিয়ন বাড়তে বাড়তে দুশো আট নয় পেরিয়ে যায়! ওইটুকুনি জায়গায় কি আর এতো নিউক্লিয়নের পাত পেড়ে খাওয়া দাওয়া হয় বাবা! তাই অনেকেই তেজ দেখিয়ে বেরিয়ে যায়। ভাঙন ধরে ফ্যামিলিতে! এই ঘটনার নাম স্বাভাবিক তেজস্ক্রিয়তা আর মৌলগুলোকে আমরা বলি প্রাকৃতিক তেজস্ক্রিয় মৌল। (অবিশ্যি মানুষ নিজের প্রয়োজনে সময়ে অসময়ে শান্তশিষ্ট নিউক্লীয় পরিবারকেও খুঁচিয়ে ঘা করে তেজস্ক্রিয় করেছে, সেটা আলাদা ব্যাপার।) এইরকম ভাঙন আর তেজের ঠ্যালায়, সম্ভবতঃ, নিরানব্বই নম্বর মৌল আইনস্টাইনিয়াম, যাতে 254 খানা নিউক্লিয়ন থাকে, তার সময় থেকে প্রকৃতি হাল ছেড়ে দিয়েছিল! এবার একা মানুষের পালা মৌল তৈরী করার।
নক্ষত্রের নকল করে সে চালালো এক্সপেরিমেন্ট। সাদা বাংলায়, কুড়ি থেকে তিরিশ প্রোটনয়ালা হালকা হালকা পরমাণু নিয়ে চাপে তাপে গুঁজে দাও সত্তর থেকে আশি প্রোটনয়ালা পরমাণুর পেটে! নতুন পরমাণুটার প্রোটন সংখ্যা তাহলে একশোর কাছাকাছি হবে, ব্যস, প্রকৃতি যা পারে নি তা মানুষ পারবে। কিন্তু গুঁজতে গিয়েই সমস্যা! ভারী পরমাণুর গায়ে তুমি গুঁজবে হালকা পরমাণু আর তারা তোমার ইশারায় বসে থাকবে? কভি নেহি, ওরা ছুটে বেড়াবে দিগ্বিদিক কণা ছোটানোর মেশিনে আর বিজ্ঞানীকে আশায় আশায় থাকতে হবে কখন ওদের লাগবে ধাক্কা, আর মিশে যাবে ওরা, একটা নূতন পরমাণুর জন্ম হবে!
ঠিক এইভাবে কয়েকশো কোটির মধ্যে মাত্র একটা সংঘর্ষে একপিস নূতন সুপার হেভি বা অতি ভারী পরমাণু সৃষ্টি হয়েছে, কণা ছোটানোর মস্ত মস্ত ইয়াব্বড়ো যন্ত্রে! হ্যাঁ, তারা তো তেজস্ক্রিয় বটেই। যে সময়কালে একতাল সুপার হেভি পরমাণুদের মধ্যে পঞ্চাশ শতাংশ পরমাণু ভেঙে যায় সেটা প্রায় এক দিন বা কয়েক মিনিট অথবা মাত্র কয়েক মিলিসেকেন্ড হতে পারে! আসলে মানুষে ঠেসে দিয়েছে, প্রোটন আর নিউট্রনগুলো শুনবে কেন? নিউক্লীয় বন্ধন শক্তি চাইবে নিউক্লিয়নগুলোকে আটকে রাখতে পিন্ডের মধ্যে আর প্রোটনগুলোর ভেতরে কুলম্বীয় ঠেলাঠেলি চাইবে ওদের মুক্ত করে দিতে। এইবার জোর করে যেটুকু সময়ের জন্য পরীক্ষার হলে আটকে রাখা যায় আর কী! তা করতে গিয়ে একশো তেরো প্রোটনের পর থেকে তৈরী হয়েছে একরকম বিতিগিচ্ছিরি পরিস্থিতি! পরমাণু ভুগতে শুরু করেছে কুলম্বীয় হতাশায়! পরমাণুর সুগঠিত শরীর বেঁকাচোরা হতে শুরু করেছে। দুই বিপরীতমুখী বলের টানাটানিতে পরমাণুর গায়ে হয়েছে ফুসকুড়ি, চামড়া গেছে ফেটে!
তাহলে এই অবস্থায় কদ্দুর ঠাসা যাবে প্রোটন? ডিরাক-ফকের তাত্ত্বিক হিসেব বলছে, সংখ্যাটা একশো বাহাত্তর হতে পারে! মিশিগান স্টেট বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিদ্ উইটোল্ড নাজারুয়িক(https://doi.org/10.1038/s41567-018-0163-3) অবশ্য অতোদূর নিয়ে ভাবেন নি। একশো আঠারো নাম্বার মৌল ওগানেসনেই তিনি যে পরিমাণ কুলম্বীয় হতাশা দেখেছেন সম্প্রতি জুন 2018 তে, তাতে করে একশো উনিশ নাম্বার মৌলটাতে ‘পরমাণু’ বলে আদৌ কিছু থাকবে না কি কে জানে! এসব পরমাণু, যাদের ভেতরে গাদা গাদা নিউক্লিয়ন, যারা কয়েক মিলিসেকেন্ডও বাঁচে না, ভেঙে টেঙে ছেছেত্তরা হয়ে যায়, তারা কি সত্যিই পরমাণু নামে ডাকার যোগ্য!
তাহলে পরমাণুর সংজ্ঞা কি হবে? বিজ্ঞানীদের মতে, একটা পরমাণুকে তখনই পরমাণু বলে ধরা হবে যখন তার কোন নিউক্লিয়াসের অায়ু (টেকনিক্যালি, অর্ধায়ু) এক সেকেন্ডের দশলক্ষ কোটিভাগের একভাগের (দশ টু দি পাওয়ার মাইনাস চোদ্দো) বেশী হবে, আর তার অস্তিত্বের পরীক্ষামূলক, সন্দেহাতীত প্রদর্শন করা যাবে! বলা বাহুল্য, এখনো অব্দি এক থেকে একশো আঠারো নাম্বার প্রতিটা মৌলের পরমাণুই এই টেস্ট উতরে গেছে। এই সময়কালটা গুরুত্বপূর্ণ এই কারণে যে মোটামুটি এই সময়ের মধ্যে কোন নিউক্লিয়াস, তার চারপাশের ইলেকট্রনগুলোকে ধরে, একখানা পরমাণু খাড়া করতে পারে! যদি তা না পারে তাহলে তো মৌলটার রসায়ন টসায়ন কিছুই জানা গেলো না! সে পরমাণুকে আর পরমাণু টরমাণু বলে ডাকা যাবে কি?
এলিমেন্ট নাম্বার একশো উনিশ, পর্যায় সারণীর অষ্টম গর্ভের প্রথম মৌল, তাই আবিষ্কারের আগেই ভাবাচ্ছে বিশ্বের তাবড় তাবড় বিজ্ঞানীদের। এর জেরে পদার্থবিদ্যা বা রসায়নের মৌলিক ধারণাতেই আঘাত নেমে আসবে কি না সেটাও প্রশ্ন লাখ টাকার!
জনশ্রুতি, দিমিত্রি মেন্ডেলিভকে এক ইন্টারভিউতে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল, What’s your favourite element in Periodic Table?
--Surprise! বলেছিলেন মেন্ডেলিভ।
প্রায় দেড়শো বছর পূর্তি হতে চলেছে সে আবিষ্কারের, সেই সারপ্রাইজ এখনো বোধহয় ফুরোয় নি।
© শ্রুতিসৌরভ বন্দ্যোপাধ্যায়