Saturday 28 July 2018

মাস্টারমহাশয়ের স্কুটয়েড কোষ


এ কি এ কি ক্লাসের মদ্যে মোবাইল বন্ধ করো বাবারা, হেডু/প্রিন্সিপাল দেখলে আমার চাকরি চলে যাবে,,,,,অ্যাঁ, তাহলে এই দ্যাখো, এএএই লেখো, আবরণী কলা, ওরে ঘেঁপু, মোবাইল ব্যাগের ভেতরে বাপ্ আমার, তাহলে আমরা দেখলাম আবরণী কলা কিভাবে আঁকতে হয়, অ্যাই ছোঁড়া, এ দিকে মন দে, বোর্ডে যা আঁকলাম তা এঁকে ফ্যালো। এ কি মারতে আসছিস কেন, মাস্টারকে সম্মান দিবিনে বাপ্, মেরে নাক ফাটাবি, মোবাইল বন্ধ করতে বলে এট্টু থাবড়ে দিয়েচি বলে। হ্যাঁ তাপ্পর লেখো বাবারা, আবরণী কলার অবস্থান, গঠন কাজ, কি অবস্থা, অ্যাঁ! প্রতিটি কোষ, প্রিজমের মতো বা চোঙার মতো, এ্যাঁ তাইলে হয়, হয় এরম ঠিকঠাক প্যাকিং।

(মাস্টারমশাই বোর্ডে এঁকে ফেললেন আবরণী কলা)

কি বললি, নোতুন তথ্য আচে? হ্যাঁ ওই এমাসের নেচার পত্রিকায় যেটা বেরিয়েচে সেটা তো? (http://www.nature.com/articles/s41467-018-05376-1)
হ্যাঁ রে ঘেপু, মোবাইল ব্যাগে ঢোকাও বাবা, খেঁদি, মা আমার, সংসারের গল্প এট্টু ক্লাসের পরে করো, ভোঁদু জানতে চাইচে, এট্টু বলি। হ্যাঁ কি বলচিলাম রে, ও হ্যাঁ, ওই যেখানে পন্ডিতেরা হিসাব নিকেশ করে দেকিয়ে দিয়েচেন, অ্যাঁকাচোরা জায়গায় চামড়ার কোষ কিভাবে থাকে! তখন তাদের জ্যামিতিক গঠনটাই পাল্টে যায়, প্রিজমের মতো বা চোঙার মতো নয়, ওরা থাকে বিটলে পোকা দেখেচিস ঘেপু, হ্যাঁ বিটলে পোকার পিঠে যে ওই শক্ত ঢালের মতো জিনিসটে থাকে, ওর মতো আকারের হয়ে যায়, যাকে বলে স্কুটেলামের মতো। আর তাই এরকম আকারকে বলে দন্ত্য স এ ক এ হ্রস্ব উ, ট, অন্তঃস্থ এ কার, ড, মানে স্কু ট য়ে ড। লিখে ফ্যালো। এরম ভাবে থাকলে, ছবি দ্যাখো, ছবি, সবচাইতে ভালো প্যাকিং হয়, শক্তি বাঁচে প্রকৃতির। তাহলে আমরা জানলাম যে চামড়ার কোষগুলো অবস্থাবিশেষে স্কুটয়েড আকারে সজ্জিত থাকে, মাথা আর পায়ের দিক এইরোম দলে মুচড়ে। কেমন? স্কুটয়েড একটা নোতুন, আনকোরা নোতুন জ্যামিতিক আকার। চামড়া শুধু? রক্তের নালির আবরণ থেকে শুরু করে লিভার কিডনিদের আবরণের লাইনিং পর্যন্ত এইভাবে স্কুটয়েড কোষ দিয়ে তৈরী বলে মনে করা হচ্চে।

কি বললি? এ সব জেনে কি ঘন্টাটা হবে? তবে শোন্, মানুষের কাজে বানানোর নকল অঙ্গের চামড়া বানাতে এই ধারণাটা খুব কাজে লাগবে, বুঝলি তো? কত লোকের উবগার হবে বলতো, চামড়ার কোষগুলো এরম স্কুটয়েড আকারে থাকে, এটা জানতে পারার পর। তোদের যাতে মনে থাকে এট্টা ছড়া লিখিচি তাই, শুনে দ্যাখো বাবারা, মায়েরা,

আমরা চামড়া-কোষ,
মিলেমিশে থাকি স্কুটয়েড সেজে,
যেখানে যেমন থোস্! কেমন?

ওঃ!! মোবাইল ঢোকা বলচি বেয়াদপ ছোঁড়া, উঃ!

(ছাত্র কর্তৃক মাস্টারমহাশয়ের নাকে একটি মৃদু আপার কাট প্রদান)

ছাত্র হয়ে মাস্টারের নাকে ঘুষি মেরে ফাটিয়ে দিলি বাপ?
হায় হায়! নাকের উপরের দিককার স্কুটয়েড কোষগুলো সব ফাটিয়ে দিলি বাবা! তাইতো তাইতো, তা নইলে যা নোতুন আবিষ্কার হচ্ছে তার প্রয়োগ দেখবো কি করে!

© শ্রুতিসৌরভ বন্দ্যোপাধ্যায়

Sunday 8 July 2018

পোলারিটন বা শক্তিপদের খোঁজে

শক্তিপদ, বাড়ী আছো?

শক্তিপদ বলে কেউ বাড়ী আছে নাকি খোকা? আর বলো কেন, যে দিকে তাকাও সেদিকে হয় জিনিস, নয় শক্তি! বিশ্বেস না হয় নিজের দিকে দেখো, ওই যে হাতে টানা ফোনটা নিয়ে আঙুল টেনে যাচ্ছো, ওগুলো কি? আঙুল, ফোনের পর্দা, তোমার মা যিনি এই মাত্তর তোমায় ঠেঙাতে উপরে উঠে আসছেন তুমি সাড়া দিচ্ছো না বলে, তোমার ঘরের মেঝে, দেয়াল, সব এমনকি এই গ্রহ, এ সব জিনিস ছাড়া আর কী বলতে পারো? আর ওই যে তোমার রদ্দিমার্কা ফোনের ব্যাটারি গরম হয়ে তাপ ছাড়ছে, এই যে লেখাটা পড়ছো আর জ্ঞান দিচ্ছি বলে গাল পাড়ছো, এগুলো থেকে যে আলো ছাড়ছে বলে দেখছো, এগুলো শক্তির বিভিন্ন রূপ ছাড়া আর কী বলতে পারো?

শক্তিপদ এসব হিসেবের মধ্যে আসে না! সত্যি কথা বলতে কি, ও আসলে আধা শক্তি আধা পদার্থ বা পদ, তাই ওর নাম রেখেছিলাম “শক্তিপদ”। পন্ডিতেরা অবিশ্যি ওদেরকে পোলারিটন বলে ডাকেন, ও কি, এই অব্দি শুনে ভাবছো বুঝি আমি চাঁদা চাইবো? না না, দাঁড়াও, তোমায় একটু সিম্পিল করে বলি। রোসো, হ্যাঁ, পোলারিটন অনেক রকমের আছে বটে, তবে আমি প্রথমে তোমার ওই গিটারটা একটু বাজাই দাও!

ঝ্যাং! এই যে শব্দটা করলাম এটা কেন হলো বলো তো! কি বললে, তাও জানো না! আরে এই তো গিটারের এই আগার খুঁটি আর পাছার খুঁটি এ দুয়ের ভেতরে টান টান করে বাঁধা তারটাকে একটু টেনে ছেড়ে দিলাম, আর ওম্নি সে তারে ঢেউ খেলে বাতাসে এক জব্বর ঘাই মারলো, তুমি শুনলে, ঝ্যাং! এবার আমি গোটা ব্যাপারটাকে স্লো মোশানে নিয়ে যাচ্ছি, আরে চিন্তা নেই, আমি এটা তোমাদের সিনেমার ফাইট দেখে শিখেছি, এই দেখো, তারটা এই উঠলো, এই নামলো, ঢেউয়ের এই মাথা আর এই হলো পা, কেমন, তালে পাশাপাশি এই যে দুটো ঢেউয়ের মাথা, ওদের ভেতর যতটা ফাঁক, তার নাম তরঙ্গদৈর্ঘ্য। সব রকমের শক্তিই এইরকম ঢেউয়ের আকারে ছোটে, তাই আলোরও এমনি ঢেউ হয়, আর সে ঢেউয়েরও হয় তরঙ্গদৈর্ঘ্য।

আহা, চুল খাড়া হয়ে যাচ্ছে যে রাগে, এসো, ভজার সেলুনে যাই, খানিক চুল না ছাঁটলে তোমার মাথায় শক্তিপদর গপ্পোটা ঢোকাতে পারবো না যে। এই তো বসো দেখি এই সিটে, কী সুন্দর সামনে পেছনে আয়না, কত প্রতিবিম্ব তৈরী হয়েছে তোমার বিটকেলে মাথাটার! সামনের দিক পেছনের দিক সব কেন দেখতে পাচ্ছো বলতো? আরে আলোর ঢেউ এ দুটো আয়নায় বারবার ধাক্কা খেয়ে ফিরে আসছে আবার ধাক্কা খাচ্ছে, যাকে তোমরা বলো প্রতিফলন আর কি। তোমারো প্রতিবিম্ব তাই আয়নায় যে কতবার তৈরী হচ্ছে তার ইয়ত্তা নেই।

বিজ্ঞানীরা ঠিক এইরকম খাড়া দুটো আয়নার মাঝে আলোর ঢেউ রেখে আশ্চর্য সব বিষয় দেখেছেন। তবে সে আয়না তোমার ভজার সেলুনের এরকম গাব্দা আয়না নয়। পন্ডিতেরা বলেন, একটা গোটা ঢেউ তৈরী হয় একবার উঠে তারপর নেমে। সেই গোটা একপিস আলোর ঢেউয়ের আবার আদ্দেক করলে যা হয়, ঐটুকু ছোটো অংশকে তাঁরা আটকেছেন দুই আয়নার মাঝে, যাদের ইনজিরিতে বলে অপটিক্যাল রেজোনেটর, যেন ঠিক গিটারের ওই আগার আর পাছার খুঁটি! যেহেতু ঐটুকু অংশ মাত্তর 1 মাইক্রোমিটার মতো, সেহেতু এই আয়নাদুটোকে বিজ্ঞানীরা ছোটো করে বলেন, মাইক্রোরেজোনেটর।

কি বললে? এ সবের মধ্যে শক্তিপদ কই? আরে ঐ তো, ঐ দুটো মাইক্রোরেজোনেটরের মাঝে তৈরী হবে শক্তিপদ! তার জন্য আয়নার মাঝে একরকমের কুয়ো খুঁড়ে রাখতে হবে বাপু, জলের নয়, ইলেকট্রনের! যে কোন জিনিসেই গিজগিজ করছে ইলেকট্রন, অথচ সহজে জিনিস থেকে তার বেরনোর জোর নেই, যতক্ষণ না বাইরে থেকে কেউ শক্তির দড়ি টেনে বের করে দিচ্ছে। কাজেই সব জিনিসই আসলে যেন ইলেকট্রনের কুয়ো। না না তাই বলে এই তোমার মাস্টারমশাইয়ের মতো গোব্দাপারা জিনিসকে ঐ মাইক্রোরেজোনেটরের মাঝে রাখলে হবে না! বিজ্ঞানীরা ওখানে রাখেন---মাত্তর এক পরমাণু পুরু একরকম জিনিস! এর মধ্যে অবশ্যই ইলেকট্রন আছে, কিন্তু জিনিসটা এমন যে সে ইলেকট্রনগুলো আলো ফেললে তার থেকে শক্তি নিয়ে হাওয়া খেতে বাইরে বেরিয়ে পড়ে।
এসব জিনিস হলো অর্ধপরিবাহী বা সেমিকন্ডাক্টর, ইস্পেশাল অবস্থা না হলে, যেমন আলো ফালো না খাওয়ালে, এনারা ইলেকট্রনগুলোকে কুয়ো থেকে বার হতে দিতে চান না। এখানে এইসব সেমিকন্ডাক্টরগুলো কোয়ান্টাম কুয়ো হিসেবে কাজ করে।

সেই কুয়োতে যেমন ব্যাঙ ছিলো তার মায়ের কাছে, কোয়ান্টাম কুয়োতে তেমনি ইলেকট্রনগুলো যে যার নিজের জায়গায় আটকে থাকে এমনি সময়। জায়গাগুলো ইলেকট্রনদের মায়ের মতো আটকে রেখেছে। গোল বাধলো যখন আলোর ঢেউ এসে পড়লো ওই কুয়োতে। বিজ্ঞানীরা ছোট্টো এক পিস আলোর ঢেউ ফেললেন দুই মাইক্রোরেজোনেটরের মাঝে, কোয়ান্টাম কুয়োর উপর। ব্যস্! ইলেকট্রনগুলো একটু ঢেউয়ের ধাক্কাতে নড়ে চড়ে উঠে পালালো মায়ের কোল থেকে, হাওয়া খেতে বেরিয়ে গেলো। ইলেকট্রনের অভাবে কোল খাঁ খাঁ করতে থাকে আর বেরিয়ে যাওয়া ইলেকট্রন গুলোকে ডাকে আয় আয়, বেশিদূরে যাস নে। কোলের ডাক এড়াবে ইলেকট্রনদের সে সাধ্যি নেই! সত্যিই তো, পন্ডিতেরা ছোট্টো একটু ঢেউ পাঠিয়েছে, সেটা নিয়ে আর কদ্দুর যাবে ইলেকট্রন! ফাঁকা কোলের ভিতর ইলেকট্রনেরা আবার ঝাঁপিয়ে পড়ার আগে একরকম অদ্ভূত অবস্থার সৃষ্টি হয়। কোলটাকে ঘিরে কিছুক্ষণের জন্য ইলেকট্রনগুলো গোল গোল পাক খায়, ভাবটা এমন, কী মজা, মায়ের কাছে ফিরে যাই, ফিরে যাই! এইরকম অবস্থাটার সাথে পরমাণুর গঠনের একটা মিল পাওয়া যাচ্ছে কি? মানে নিউক্লিয়াসকে ঘিরে যেমন ইলেকট্রন ঘোরে পরমাণুতে, তেমনি এখানে নিজেরি ফেলে আসা জায়গা ঘিরে ঘুরছে ইলেকট্রন। পন্ডিতেরা বললেন, এই অবস্থাটাই একরকমের ছদ্মবেশী কণা, নাম দিলেন, এক্সাইটন।

আহা, আরেকটু ধৈর্য্য ধরতে পারবে না বুঝি? এক্সাইটন বেশীক্ষণ তো বেঁচে থাকে না, কারণ ইলেকট্রনরা তারপরে মায়ের কোলে গিয়ে চুপটি করে বসে, কিন্তু তার আগে যে আলোর ঢেউটা খেয়ে বাইরে বেরিয়ে গেছিলো, সেটাকে বমি করে বাইরে বার করে দিতেই হয়! কিন্তু বেরিয়েই বা আলোর ঢেউ যায় কোথায়! বিজ্ঞানীরা এমন এক কায়দা করে রেখেছেন যে সে ঢেউ কেবলি ঘুরপাক খায় দুই আয়নার মতো মাইক্রোরেজোনেটরের মাঝে। আর কুয়োটাকেও এমনি ভাবে বসানো মাইক্রোরেজোনেটরের মাঝে যে তার ইলেকট্রনগুলোকে ফের ঐ ঢেউ গিলতে হয়। কাজেই, আবার সেই এক্সাইটন জন্মায়, আবার সে বমি করে আলোর ঢেউ বার করে দেয়, আবার সে ঢেউ এক্সাইটন বানায়! কেবলি যখন এইরকম ঢেউ আর এক্সাইটন একে অন্যকে তৈরী করেই চলে তখন যে অবস্থা হয়, সেটা আধা পদার্থ আধা শক্তি, আধা কণা, আধা ঢেউ! কাজেই তাকে “শক্তিপদ” না বলে আর জো কি! বিজ্ঞানীদের মতে, এটাও একরকমের ছদ্মবেশী কণা, এর নাম পোলারিটন।
যে সব কিম্ভূত স্বভাব এই সব ছদ্মবেশী কণাদের তা একদিনে শুনলে তোমার হাত থেকে টানা ফোনটা পড়ে যেতে পারে, তাই আপাতত বলছি না।

কি বললে? তোমার ভালো নাম শক্তিপদ? এঃ হেঃ, আগে বলতে হয়! শুদুমুদু এতো বকে মরলুম! এই নাও তোমার চিঠি, ঠিকানাটা এটাই তো https://www.google.co.in/url?sa=t&source=web&rct=j&url=https://m.youtube.com/watch%3Fv%3DsWmvZ0IGrsU&ved=0ahUKEwiIodvq74_cAhWDTX0KHeqYCAAQo7QBCCQwAA&usg=AOvVaw1iXQyYV_3Z3HgQgFom3opn

*********
© শ্রুতিসৌরভ বন্দ্যোপাধ্যায়