Monday 8 October 2018

নিয়ন্ত্রিত বিবর্তনঃ রসায়ন নোবেল ২০১৮, ১ম ভাগ


নিয়ন্ত্রিত বিবর্তনঃ রসায়ন নোবেল ২০১৮, ১ম ভাগ

১.
জীবন যেদিকে বয় সেইদিকে গেলে,
ইভোলিউশান ঘটে, পুস্তকে মেলে!
সাড়ে তিন বিলিয়ন বছরেরো আগে,
জলের ভেতরে প্রাণচিহ্নেরা জাগে,
এক প্রাণ থেকে আসে অন্য সে প্রাণে,
এককোষ, বহু হয়, জেনেটিক দানে
নূতনেরা তোলে ঝড়, পুরোনো পালায়,
যোগ্যরা টিকে থাকে, পাল্টে চালায়
জীবনের সংগ্রাম, লেখা থাকে জিনে,
প্রকৃতি সুবিধা মতো তাকে নেয় চিনে।
যে জীব যে পরিবেশে টিকে থাকে বেঁচে,
সেটার চাহিদা বুঝে প্রোটিন এনেচে
DNAরা, প্রকৃতির কন্ট্রোল করা
বিবর্তনের খেলা, জিন বুঝে গড়া
হলো কতো প্রোটিনের বড়ো বড়ো অণু,
তার রসায়ন সৃজে দনু থেকে মনু।

২.
কোষের ভেতরে থাকে নিউক্লিয়াস, এ তো
সকলেই পড়েছেন, তার ভেতরে তো
DNA প্যাঁচালো যেন মালগাড়ী চলে,
এক এক কামরা তার, তাকে জিন বলে!
সেই জিনে থাকা কোড নির্দেশ দিলে
প্রোটিন গঠিত হয়, ইঁটে ইঁটে মিলে।
কুড়িয়ে বাড়িয়ে কুড়ি রকমের ইঁটে,
ঘেঁটেঘুঁটে দেঁড়েমুশে জটিলতা গিঁটে!
এনজাইমের অণু এমনই আসলে,
বিক্রিয়া তাড়াতাড়ি হয় তার কোলে!
কারো কোলে এটা ঘটে, কারো কোলে ওটা,
যার যার নিজ কাজ, না গুলিয়ে ছোটা।
কোষ থেকে বার করা উত্সেচকেরা,
ল্যাবেতেও সাকসেসফুল হয় এরা,
নামী দামী বিক্রিয়া সহজে ও দ্রুত
হয়ে যায়, প্রোডাক্টে থাকে না তো খুঁত-ও!

৩.
রোজকার কাজে লাগা জিনিস বানাতে
এনজাইমেরা যদি হেল্প করে হাতে,
দূষণ তো কম হয়, সম্পদও বাঁচে,
কেমিস্টকে শিরে তুলে দুনিয়াটা নাচে!
প্রকৃতির একটুকু না করেও ক্ষতি,
রসায়নশিল্পকে দেয়া যায় গতি।
মুশকিল একটাই: এনজাইমেরা,
কী করবে, করবে না, ঠিক করে এরা
নিজেরাই, মানুষের হাত নেই তাতে,
পণ্ডিতে ভেবে মরে, দিনে আর রাতে।
কাজের উত্সেচক--- মনমতো ভাবে,
তৈরী করার হ্যাপা, কে বা সামলাবে?
কুড়ি রকমের ইঁটে হাজারে হাজারে
কম্বিনেশান হয়, তাদের সাজা রে,
তার পরে যদি কিছু এনার্জি বাঁচে,
টেস্ট করে দেখা যাবে, কপালে কী নাচে!

৪.
ঊনিশশো আশি হ’তে ইউ এস এ-বাসী
ফ্রান্সিস আর্নল্ড, বড়ো প্রত্যাশী,
খোদার উপরে খোদকারী করা নেশা,
দিনরাত এক করা, গবেষণা পেশা।
ভেবেছেন এরকমই অনেকের আগে,
আইডিয়া ডুবে যায়, আইডিয়া জাগে!
উত্সেচকের সংশ্লেষ ছেড়ে যদি
কপি করে ফেলা যায় সময়ের নদী
যেমনটা প্রকৃতিতে প্রোটিন বানায়,
নূতন নূতন সব, তেমনটা প্রায়,
প্রকৃতি বানিয়ে দেন প্রোটিনের অণু,
কি প্রোটিন হবে সেটা কোড করে হনু
জিনগুলো, আর যদি সেই জিন ধরে,
বদলিয়ে দেয়া যায়, ল্যাবে কিছু করে,
জেনে রেখো তাকে বলে মিউট্যান্ট জিন,
ওর থেকে জন্মাবে অন্য প্রোটিন।

৫.
এইভাবে আর্নল্ড এগিয়ে গেছেন,
মিউট্যান্ট জিন করে, তাকে পুরেছেন
ব্যাকটিরিয়ার কোষে, সেই কোষে এসে,
জিন তার কোড বুঝে নিয়ে সংশ্লেষে
এনজাইমের মেলা, আনকোরা যত,
তার থেকে বেছে নেয়া হলো মনমতো,
এনজাইমের অণু, সেরকম দেখে,
যাকে দিয়ে কাজ চলে সব দিক রেখে।

ওষুধ, জ্বালানী, আর বিকল্প খানা,
পরিধান বস্ত্র, কী থাকার ঠিকানা,
এসবের যত অণু তাদের বানাতে,
ভারী ধাতু, বিষ গ্যাস, বাদ যায় যাতে,
ভয়ানক অ্যাসিডের সাহায্য ছাড়া,
মানুষ বানাতে চায় নূতন এক ধারা,
সেই ধারা শুরু হয়েছিলো যাঁর হাতে,
পৃথিবী চাইলো তাঁকে শ্রদ্ধা জানাতে।

**********
যে যুগে বিবর্তন, ল্যাবে হলো শুরু
ফ্রান্সিস আর্নল্ড, সে যুগের গুরু।

© শ্রুতিসৌরভ বন্দ্যোপাধ্যায়