tag:blogger.com,1999:blog-45035796333526545062024-03-13T01:03:51.881-07:00বাংলায় বিজ্ঞানA blog for science education in simple Bengali language.SHRUTI SAURABHhttp://www.blogger.com/profile/06397705002239295269noreply@blogger.comBlogger23125tag:blogger.com,1999:blog-4503579633352654506.post-86419249658856331002019-04-15T21:07:00.003-07:002019-04-15T21:07:58.799-07:00এসো, এসো, এসো প্রিয়<p dir="ltr"></p>
<p dir="ltr">ওকে ভালোবাসি, বললো সূর্য্যতপা।</p>
<p dir="ltr">মৃত্তিকা দাঁতে দাঁত চিপে বললেন, অকৃতজ্ঞ! আজ থেকে তোমার জল, খাবার, সব বন্ধ! যারা তোমায় নিয়ে এলো, বড় করলো, তুমি তাদেরকে মন না দিয়ে দেবে কাকে, ওই কালো কুচ্ছিত পোকাটাকে!</p>
<p dir="ltr">সূর্য্যতপা কেঁদে ককিয়ে উঠে বললো, না মা, ওকে কালো কুচ্ছিত বলো না। ও কিরকম খাটতে পারে, তুমি দেখো নি, ঐ মানুষের থেকেও অনেক বেশী। ওই পারে, হ্যাঁ, শুধু ওইই পারে, আমায় নিয়ে যেতে, দূরে, দূরে, আরো দূরে! </p>
<p dir="ltr">মৃত্তিকা নির্মমভাবে ব্যঙ্গের হাসি হেসে উঠলেন, খোঁড়া মেয়ের সখ দেখ না, দূরে যাবে! তোর বাপ একদিন খুব গর্ব করে তোকে নিয়ে এসে দিয়েছিলো আমার কোলে, তারপর তো তার আর পাত্তা নেই। একলা মা হয়ে তোমার মতো খোঁড়া মেয়ে মানুষ করার কি জ্বালা তুমি কি বুঝবে? মরুৎ জানতো, সব জানতো, তুই যে এরকম প্রতিবন্ধী হবি, আগেই জানতে পেরে সে কাপুরুষের মত পালিয়ে গেছে!</p>
<p dir="ltr">জলভরা চোখে সূর্য্যতপা বললো, বাবার কী দোষ মা, আমার জাতটাই তো এরকম, আমার কোথাও যাওয়ার কোনো জো নেই! খালি একজায়গায় দাঁড়িয়ে সবার সেবা করা।</p>
<p dir="ltr">পাদপদের যে কোথাও চলে ফিরে যাবার উপায় নেই, মৃত্তিকা জানেন। তবু ছেলে মেয়ের এমন কষ্ট পাওয়া তিনি সহ‍্য করতে পারেন না। দুই রকমের সন্তান তাঁর, তার মধ‍্যে এই পাদপজাতি তাঁর চক্ষের মণি, ওরা অসহায় বলে আগলে রাখতে চান সবসময়। বকাঝকার মধ‍্যেও তাই মিশে থাকে স্নেহ, মায়া, মমতা। </p>
<p dir="ltr">সূর্য্যতপা সেটা বোঝে। </p>
<p dir="ltr">ওর যে না বুঝলে চলে না। কৃষ্ণভ্রমরের ডানা ঝাপটানোর শব্দে ওর হৃদয়ে কী যেন একটা হয়, ও নিজেও জানে না! ওর না আছে কান, না আছে নাক, না আছে মুখ। তবু ও শুনতে পায় কৃষ্ণের আসার শব্দ।</p>
<p dir="ltr">এসো কৃষ্ণ, এসো আমার ঘরে এসো, আরো হাজারো একটা শব্দের মাঝে আমি তোমার বাঁশি আলাদা করে শুনতে পাই, আমি শুনতে পাই, আমরা সূর্য্যতপারা শুনতে পাই, আমার মতো আরো অনেক অনেক গাছ, শুনতে পায়। মানুষ, তুমি শুনতে পাচ্ছো? আগের চাইতে কুড়িগুণ বেশি মধু তৈরী করেছি বুকে, হে কৃষ্ণ, তুমি এসো, আমায় নিয়ে চলো, যে জগৎ দেখিনি, যাকে দেখিনি, তাকে দেখাও, ভ্রমর, তুমি এসো,</p>
<p dir="ltr">এসো, এসো, এসো প্রিয়, এসো আমার ঘরে,<br>
আমার মনের অন্তঃপুরে স্বপ্নভেজা পথটি ধরে।</p>
<p dir="ltr">স্বপ্নভেজা পথ ধরে হাঁটতে হাঁটতে এগিয়ে যাচ্ছে উদ্ভিদ, প্রিয় কৃষ্ণভ্রমর তাকে হাঁটিয়ে ছুটিয়ে উড়িয়ে নিয়ে যায়। যেখানে সে কোনোদিন স্বপ্নেও যাবার কথা ভাবে নি, একদিন সেখানে সে ছড়িয়ে যায়। একদিকে ভ্রমর, আরদিকে তার ভালোবাসার উদ্দেশ্য। </p>
<p dir="ltr">একদিন পরাগসংযোগ সম্পূর্ণ হয়। সম্পূর্ণ হয় ইজরায়েলের তেল-আভিভ বিশ্ববিদ্যালয়ের জীববিজ্ঞান ডিপার্টমেন্টের গবেষণাটি (https://doi.org/10.1101/507319)। হ‍্যাঁ, সূর্য্যতপা (sun-drop or evening primrose) এবং হয়তো ওর মতো আরো অনেক গাছেরা শুনতে পায়। শুনতে পায় তাদের বহু-প্রতীক্ষিত শব্দটি, এমনকি পারিপার্শ্বিক কলরবের ভেত‍র থেকে স্ক‍্যান করে নেয় সেটি। মৌমাছির ডানা-ঝাপটানোর শব্দে তার মকরন্দ-ক্ষরণ বেড়ে যায় কুড়ি গুণ। যাতে তার পায়ে লেগে পরাগরেণু ছড়িয়ে পড়তে পারে, জীবন যে একটাই, আর জগৎ অনেক বড়ো, প্রিয়।</p>
<p dir="ltr">© শ্রুতিসৌরভ বন্দ‍্যোপাধ‍্যায়</p>
SHRUTI SAURABHhttp://www.blogger.com/profile/06397705002239295269noreply@blogger.com0tag:blogger.com,1999:blog-4503579633352654506.post-75156994135896168132018-12-01T10:29:00.001-08:002018-12-01T10:29:47.957-08:00পাথর থেকে মানুষ?<p dir="ltr">পাথর থেকে মানুষ এলো?</p>
<p dir="ltr">আত্মা, পরমাত্মা এবং অতৃপ্ত আত্মা, এই তিন নিয়ে সর্বকালের সর্বদেশের রূপকথা এবং ধর্মের জগত্।<br>
ঠিক কোন সময়টাকে জন্ম বলে সেটা মাথায় না রাখার কারণে মানুষের মনে আত্মা পরমাত্মা ইত্যাদি ধারণার উদ্ভব হয়েছে। মানুষের বাচ্চা মায়ের পেট থেকে বেরনোর আগে কি জ্যান্ত ছিল না? তারো আগে ভ্রূণটাও ছিল জ্যান্ত। তারো আগে জাইগোট, সেটাও তো মরা জিনিস নয়, তাতেও প্রাণ আছে। আর জাইগোট যে শুক্রাণু আর ডিম্বাণু দিয়ে তৈরী, তাতেও আছে প্রাণ। তারা বেরচ্ছেও জীবিত প্রাণীর শরীর থেকে। তাহলে আমরা জন্মালামটা ঠিক কখন, মরে তো কোনসময়ই ছিলাম না! আমরা গোড়া থেকেই জ্যান্ত, পরিপূর্ণ মানুষ হিসেবে না হোক, ক্ষণপদওয়ালা সেই আদিকোষের সময় থেকেই। আমাদের যে এই বাঁচার শক্তিটা, এটা প্রাণ থেকে প্রাণে বয়েই আসছে। জড়ে এ শক্তি নেই, আর চোখের সামনে কোন জড়বস্তুতে প্রাণসঞ্চার হতে দেখিও না। সুতরাং মানুষের মনে প্রাচীনকাল থেকেই ধারণা, প্রাণ একটা শক্তির মত, হতে পারে আত্মা, অথবা অন্য কিছু, যেটা একটা কোন বস্তু নয়, যেটা লৌকিক নয়, অলৌকিক।</p>
<p dir="ltr">বিজ্ঞানের চ্যালেঞ্জটা ঠিক যে এইখানে এই ধারণার সাথে লড়াইয়ে সেটা বললে একটু ভুল হবে, বিজ্ঞানের চ্যালেঞ্জ তার নিজের গতকালের ধারণার সাথেও। অবিশ্বাস হলে মনে করিয়ে দিতে হয় সেই পচা জিনিস থেকে স্বতস্ফূর্তভাবে মশামাছি উদ্ভবের তত্ত্বের কথা। জীবাণু বলে যে একটা জীব আছে, লুই পাস্তুর সেটা আবিষ্কার করে লোককে জানালে, বিজ্ঞান মেনে নিয়েছে রোগের পিছনে জীবাণুর কারসাজির ব্যাপারটা। ভাগ্যিস প্রচলিত ধর্মের মতো গোঁ বা ইগো, কোনোটাই বিজ্ঞানের নেই! সত্যের দিকে যাবার রাস্তাটা ঠিকঠাকভাবে খুঁজে বার করাতেই যেন তার যত আগ্রহ।</p>
<p dir="ltr">কিন্তু এরপরে রাস্তাটা ঠিক কোনদিক থেকে এসেছে তা জানতে গিয়ে বিজ্ঞান অনেকদূর ভেবে ফেলেছে। জড় পদার্থ তো গোড়া থেকেই ছিল এ গ্রহে। সেখান থেকে এলো কি করে জীবন, যাকে প্রাণশক্তি চালায়? </p>
<p dir="ltr">প্রাণ মানে এমন একটা সত্তা যা নিজে থেকে অন্য প্রাণের জন্ম দেয়, নিজেই নিজের জেরক্স অন্ততঃ বানাতে পারার ক্ষমতা তার থাকা চাই। সবথেকে ছোট যে অণুটার এরকম ক্ষমতা আছে মানুষে তার নাম দিয়েছে নিউক্লিক অ্যাসিড। প্রথমদিকের সেই দিনগুলোতে প্রাণহীন পৃথিবী হয়তো ভেবেছিল, জড়বস্তু থেকে কোনভাবে সেই অণুটার কোন অংশ তৈরী করতে পারলেই কেল্লাফতে! কিন্তু ঠিক কিভাবে তখনকার পরিবেশ সেটা বানাতে পারলো, সেটা আজও মানুষে সম্পূর্ণ বুঝে উঠতে পারে নি। বিভিন্ন পরীক্ষা থেকে বিভিন্ন সিদ্ধান্ত পাওয়া গেছে এবং যাচ্ছে। জিগস্ পাজল্ সাজানোর মত করে আস্তে আস্তে অবশ্য স্পষ্ট হচ্ছে ছবিটা। সে তালিকায় সম্প্রতি নূতন সংযোজন আটলান্টিক সাগরের তলদেশ খুঁড়ে তুলে আনা তথ্যগুলো।</p>
<p dir="ltr">আটলান্টিক সাগর, পৃথিবীর দ্বিতীয় বৃহত্তম মহাসাগর। দুহাজার সাল নাগাদ শুরু করে আজ অব্দি তার তলদেশে মানুষের তৈরী যন্ত্রপাতি অনেক উঁকিঝুঁকি মেরেছে। সমুদ্রের মেঝে তো আমাদের রাঙাকাকিমার গাল কিংবা ভূগোলের স্যারের টাকের মতো মসৃণ নয়, বরং পদিপিসিমার শীতকালের ফাটা গোড়ালির মত! ঐসব ফাটলদের ইংরেজিতে বলে ভেন্ট, ওর থেকে উঠে আসে পৃথিবীর গরম পেটের ভাপ। এরকম ফাটলওলা জায়গাকে ইংরেজিতে বলে হাইড্রোথার্মাল ফিল্ড। সারা পৃথিবীর সাগরের তলায় এরকম অনেক ফিল্ড আছে। বেশীরভাগ এইসব অঞ্চলে ডুবন্ত আগ্নেয়গিরি থাকে। কালো ধোঁয়ার মত গ্যাস বেরিয়ে আসে এইসব ফাটল থেকে, সালফার আর হাইড্রোজেন যার প্রধান উপাদান। চারপাশের জল গরম তো থাকেই, উপরন্তু ভালো মত অ্যাসিডিক হয়ে ওঠে। </p>
<p dir="ltr">আশ্চর্য্যের এই যে, মধ্য-আটলান্টিকের এই জায়গার ফাটলগুলো যেন আর সব ফাটলগুলোর মতো নয়। এরকম একটা আবিষ্কৃত জায়গার নাম মানুষে দিয়েছে লস্ট সিটি হাইড্রোথার্মাল ফিল্ড। এ জায়গা প্রায় দেড় থেকে দু মিলিয়ন বছরের বুড়ো জায়গা! জায়গা বলা হল বটে, তবে জায়গা না বলে জলের তলার এক বিরাট পাহাড়ের মাথা বললে ভুল হবে না। আসলে আটলান্টিক সাগরের যে সবচাইতে নীচু মেঝে, তার থেকে এই জায়গাটা 14000 ফুট উঁচুতে আছে। পাহাড়টার নাম দেয়া হয়েছে আটলান্টিস। সবটাই জলের নীচেকার ব্যাপার! আটলান্টিসের সবচাইতে উঁচু চূড়োটা সাগরের পিঠ থেকে 700 ফুট নীচে! পাহাড়টার 16 কিমি ছড়ানো মাথা, যেটার নাম লস্ট সিটি, সেখানে গোটা তিরিশেক নল আকারের চক বা ক্যালসিয়াম কার্বোনেটের স্তূপ আছে। চিমনির মত এইসব নল থেকে সবসময় মিথেন আর হাইড্রোজেন গ্যাস বেরোচ্ছে। এই অব্দি শুনে মনে হওয়া স্বাভাবিক যে মিথেনের উত্স মরা জীবদেহ। কিন্তু রাসায়নিক বিশ্লেষণ অন্য কথা বলছে!</p>
<p dir="ltr">আটলান্টিস তৈরী হয়েছে আয়রন, ম্যাগনেসিয়াম আর বালি দিয়ে তৈরী একরকম আগ্নেয় শিলা দিয়ে। একে বলা হয় পেরিডোটাইট। পেরিডোটাইটের সাথে সাগরের নোনা জল এক রাসায়নিক বিক্রিয়া করে মিথেন আর হাইড্রোজেন গ্যাস তৈরী করছে। না, কোন জৈবরাসায়নিক বিক্রিয়া নয়, নিখাদ ভৌতরসায়ন! মিথেনের মত হাইড্রোকার্বন তৈরী হবার সাথে সাথে সৃষ্টি হচ্ছে আরো অন্যান্য হাইড্রোকার্বন, অ্যামোনিয়া, এবং বিভিন্ন অ্যামোনিয়া পরবর্তী রাসায়নিক অণু, যেমন ফরমামাইড ইত্যাদি। এগুলো যেহেতু ক্ষারীয় চরিত্রের, তাই আশেপাশের গরম জল অবধারিত ভাবে ভালোমত ক্ষারীয় (pH 9 থেকে 11), যেটা সাগরের তলায় বিরল ঘটনা! </p>
<p dir="ltr">ফ্রান্সের বিজ্ঞানী বেনেডিক্ট মেনেজ আর তাঁর সাঙ্গোপাঙ্গো মিলে সাংঘাতিক সব তথ্য সংগ্রহ করে চলেছেন সেইসব জায়গার জলের নমুনা পরীক্ষা করে। লস্ট সিটি অঞ্চলের সাগরের মেঝে ফুটো করেও 170 মিটার নীচে নেমে গেছে তাঁদের যন্ত্র। তুলে এনেছে জলকাদার নমুনা। সেসব দেখেশুনে যন্ত্রে বলছে, সেখানে ট্রিপ্টোফ্যান নামে এক অ্যামিনো অ্যাসিড রয়েছে। অ্যামিনো অ্যাসিড জুড়ে জুড়ে প্রোটিন তৈরী হয় সবাই জানে। ওখানে জনপ্রাণী নেই, তার পচা অংশ নেই, তো ট্রিপ্টোফ্যান এলো কোত্থেকে? ল্যাবরেটরিতে ইন্ডোল নামে একরকমের জৈবযৌগ থেকে ট্রিপ্টোফ্যান তৈরী করা যায় এবং তাতে কোন প্রাণীর সাহায্য লাগে না, তো দেখা যাক ঐ নমুনাতে এরকম ইন্ডোল অণু আছে কি না? যন্ত্র পরীক্ষা করে বলে দিল, আজ্ঞে হ্যাঁ। ইন্ডোল আছে, এবং কোন জৈব সাহায্য ছাড়াই ট্রিপ্টোফ্যান ঐখানে তৈরী হয়েছে। কোনভাবে পেরিডোটাইট আর নোনা জল মিলেই কার্বন, নাইট্রোজেন আর হাইড্রোজেন দিয়ে তৈরী ইন্ডোল অণু হয়েছে। ইন্ডোল থেকে ট্রিপ্টোফ্যান তৈরীর রাস্তায় অনুঘটক হিসেবে কাজ করতে পারে সম্ভবত স্যাপোনাইট নামে একরকম পাললিক শিলা।</p>
<p dir="ltr">ইন্ডোল আর ট্রিপ্টোফ্যান-এর এই অজৈব উত্পত্তিলাভের পরে ডিএনএ বা আরএনএ-এর অন্যান্য উপাদানগুলোর সৃষ্টি হওয়া আশ্চর্য্যের কিছু নয়। আর তার থেকে জেনেটিক পদার্থের তৈরী হওয়াটাও কল্পসাধ্য কিছু নয়, হতেই পারে। অন্ততঃ পরিবেশ যেমনি ক্ষারীয় এবং বিজারণের উপযোগী তাতে করে জীবনের সাহায্য ছাড়াই নাইট্রোজেন গ্যাস থেকে অ্যামোনিয়া সৃষ্টির থিওরি একদম উড়িয়ে দেবার মতো নয়। কি করে অ্যামোনিয়া পৃথিবীতে, ঐ পরিবেশে, সাগরের জলে তৈরী হয়েছিল, প্রথমবারের জন্য, তা আজো রহস্যে ঢাকা! 2018 এর নভেম্বরে নেচার পত্রিকায় প্রকাশিত এই রিপোর্টটিই আপাতত স্রেফ পাথুরে জড় থেকে জৈব যৌগ এবং অ্যামোনিয়া উত্পত্তির সর্বশেষ সম্ভাব্য খতিয়ান (https://www.nature.com/articles/s41586-018-0684-z)।<br></p>
<p dir="ltr">জীবনের শুরু তাহলে আত্মা থেকে আত্মায় হয়তো নয়, পৃথিবীর সাগরের তলার পাথুরে জমি থেকে যাত্রাটা শুরু হয়েছিল, আর আপাতত যাঁর হাতে এই কাগজটি ধরা আছে, সেই প্রাণীটির জাতি অব্দি সেই প্রাণ ভ্রমণ করেছে মাত্র! আসলে, আমাদের সকলেরই জন্মদিন ঐ সময়টা, স্থান, ঐখানে। </p>
<p dir="ltr">© শ্রুতিসৌরভ বন্দ্যোপাধ্যায়<br>
</p>
SHRUTI SAURABHhttp://www.blogger.com/profile/06397705002239295269noreply@blogger.com0tag:blogger.com,1999:blog-4503579633352654506.post-54695294168732753122018-10-08T08:00:00.001-07:002018-10-08T08:00:41.270-07:00নিয়ন্ত্রিত বিবর্তনঃ রসায়ন নোবেল ২০১৮, ১ম ভাগ<p dir="ltr"><br>
নিয়ন্ত্রিত বিবর্তনঃ রসায়ন নোবেল ২০১৮, ১ম ভাগ</p>
<p dir="ltr">১.<br>
জীবন যেদিকে বয় সেইদিকে গেলে,<br>
ইভোলিউশান ঘটে, পুস্তকে মেলে!<br>
সাড়ে তিন বিলিয়ন বছরেরো আগে,<br>
জলের ভেতরে প্রাণচিহ্নেরা জাগে,<br>
এক প্রাণ থেকে আসে অন্য সে প্রাণে,<br>
এককোষ, বহু হয়, জেনেটিক দানে<br>
নূতনেরা তোলে ঝড়, পুরোনো পালায়,<br>
যোগ্যরা টিকে থাকে, পাল্টে চালায়<br>
জীবনের সংগ্রাম, লেখা থাকে জিনে,<br>
প্রকৃতি সুবিধা মতো তাকে নেয় চিনে।<br>
যে জীব যে পরিবেশে টিকে থাকে বেঁচে,<br>
সেটার চাহিদা বুঝে প্রোটিন এনেচে<br>
DNAরা, প্রকৃতির কন্ট্রোল করা<br>
বিবর্তনের খেলা, জিন বুঝে গড়া<br>
হলো কতো প্রোটিনের বড়ো বড়ো অণু,<br>
তার রসায়ন সৃজে দনু থেকে মনু।</p>
<p dir="ltr">২.<br>
কোষের ভেতরে থাকে নিউক্লিয়াস, এ তো<br>
সকলেই পড়েছেন, তার ভেতরে তো<br>
DNA প্যাঁচালো যেন মালগাড়ী চলে,<br>
এক এক কামরা তার, তাকে জিন বলে!<br>
সেই জিনে থাকা কোড নির্দেশ দিলে<br>
প্রোটিন গঠিত হয়, ইঁটে ইঁটে মিলে।<br>
কুড়িয়ে বাড়িয়ে কুড়ি রকমের ইঁটে,<br>
ঘেঁটেঘুঁটে দেঁড়েমুশে জটিলতা গিঁটে!<br>
এনজাইমের অণু এমনই আসলে,<br>
বিক্রিয়া তাড়াতাড়ি হয় তার কোলে!<br>
কারো কোলে এটা ঘটে, কারো কোলে ওটা,<br>
যার যার নিজ কাজ, না গুলিয়ে ছোটা।<br>
কোষ থেকে বার করা উত্সেচকেরা,<br>
ল্যাবেতেও সাকসেসফুল হয় এরা,<br>
নামী দামী বিক্রিয়া সহজে ও দ্রুত<br>
হয়ে যায়, প্রোডাক্টে থাকে না তো খুঁত-ও!</p>
<p dir="ltr">৩.<br>
রোজকার কাজে লাগা জিনিস বানাতে<br>
এনজাইমেরা যদি হেল্প করে হাতে,<br>
দূষণ তো কম হয়, সম্পদও বাঁচে,<br>
কেমিস্টকে শিরে তুলে দুনিয়াটা নাচে!<br>
প্রকৃতির একটুকু না করেও ক্ষতি,<br>
রসায়নশিল্পকে দেয়া যায় গতি।<br>
মুশকিল একটাই: এনজাইমেরা,<br>
কী করবে, করবে না, ঠিক করে এরা<br>
নিজেরাই, মানুষের হাত নেই তাতে,<br>
পণ্ডিতে ভেবে মরে, দিনে আর রাতে।<br>
কাজের উত্সেচক--- মনমতো ভাবে,<br>
তৈরী করার হ্যাপা, কে বা সামলাবে?<br>
কুড়ি রকমের ইঁটে হাজারে হাজারে<br>
কম্বিনেশান হয়, তাদের সাজা রে,<br>
তার পরে যদি কিছু এনার্জি বাঁচে,<br>
টেস্ট করে দেখা যাবে, কপালে কী নাচে!</p>
<p dir="ltr">৪.<br>
ঊনিশশো আশি হ’তে ইউ এস এ-বাসী<br>
ফ্রান্সিস আর্নল্ড, বড়ো প্রত্যাশী,<br>
খোদার উপরে খোদকারী করা নেশা,<br>
দিনরাত এক করা, গবেষণা পেশা।<br>
ভেবেছেন এরকমই অনেকের আগে,<br>
আইডিয়া ডুবে যায়, আইডিয়া জাগে!<br>
উত্সেচকের সংশ্লেষ ছেড়ে যদি<br>
কপি করে ফেলা যায় সময়ের নদী<br>
যেমনটা প্রকৃতিতে প্রোটিন বানায়,<br>
নূতন নূতন সব, তেমনটা প্রায়,<br>
প্রকৃতি বানিয়ে দেন প্রোটিনের অণু,<br>
কি প্রোটিন হবে সেটা কোড করে হনু<br>
জিনগুলো, আর যদি সেই জিন ধরে,<br>
বদলিয়ে দেয়া যায়, ল্যাবে কিছু করে,<br>
জেনে রেখো তাকে বলে মিউট্যান্ট জিন, <br>
ওর থেকে জন্মাবে অন্য প্রোটিন।</p>
<p dir="ltr">৫.<br>
এইভাবে আর্নল্ড এগিয়ে গেছেন,<br>
মিউট্যান্ট জিন করে, তাকে পুরেছেন<br>
ব্যাকটিরিয়ার কোষে, সেই কোষে এসে,<br>
জিন তার কোড বুঝে নিয়ে সংশ্লেষে<br>
এনজাইমের মেলা, আনকোরা যত,<br>
তার থেকে বেছে নেয়া হলো মনমতো,<br>
এনজাইমের অণু, সেরকম দেখে,<br>
যাকে দিয়ে কাজ চলে সব দিক রেখে।</p>
<p dir="ltr">ওষুধ, জ্বালানী, আর বিকল্প খানা,<br>
পরিধান বস্ত্র, কী থাকার ঠিকানা,<br>
এসবের যত অণু তাদের বানাতে,<br>
ভারী ধাতু, বিষ গ্যাস, বাদ যায় যাতে,<br>
ভয়ানক অ্যাসিডের সাহায্য ছাড়া,<br>
মানুষ বানাতে চায় নূতন এক ধারা,<br>
সেই ধারা শুরু হয়েছিলো যাঁর হাতে,<br>
পৃথিবী চাইলো তাঁকে শ্রদ্ধা জানাতে।</p>
<p dir="ltr">**********<br>
যে যুগে বিবর্তন, ল্যাবে হলো শুরু<br>
ফ্রান্সিস আর্নল্ড, সে যুগের গুরু।</p>
<p dir="ltr">© শ্রুতিসৌরভ বন্দ্যোপাধ্যায়</p>
SHRUTI SAURABHhttp://www.blogger.com/profile/06397705002239295269noreply@blogger.com0tag:blogger.com,1999:blog-4503579633352654506.post-59848843025422160882018-09-03T04:10:00.001-07:002018-09-07T22:11:51.338-07:00ল্যাক্টোব্যাসিলাসের স্বপ্নবিলাস<p dir="ltr">ল্যাক্টোব্যাসিলাসের স্বপ্নবিলাস</p>
<p dir="ltr">ঢোলগোবিন্দবাবু, বলি ও ঢোলগোবিন্দবাবু, আমার কথা শুনতে পাচ্ছেন?</p>
<p dir="ltr">ঢোলগোবিন্দবাবু বেজার মুখে গালে হাত দিয়ে বসে ভাবছেন, এটা কি করে হয়! নামী কোম্পানির সতেরো টাকার ডাবল টোনড দুধ শেষে পচা বেরলো আর গিন্নি তাই দেখে রেগে তাঁকে কি না কি গাল দিলেন! এমনিতে সুরোবালার রাগটা একটু বেশী, বাজারের জিনিস পচা বেরলে প্রায়ই গাল দেন প্রাণনাথকে, কিন্তু আজকে একেবারে প্রেস্টিজ তো দূর হকিন্স অব্দি পাংচার হয়ে গেছে, গাল খাওয়ার ব্যাপারটা পাশের বাড়ীর মাতাল বুড়োটাও দেখেশুনে ফেলেছে, এটা ভারী লজ্জার ব্যাপার। এরকম ভাবে বেঁচে থেকে লাভ কী?</p>
<p dir="ltr">ঢোলগোবিন্দবাবু, বলি ও ঢোলগোবিন্দবাবু, আমার কথা শুনতে পাচ্ছেন?</p>
<p dir="ltr">এই দুঃসময়ে আবার কে ডাকে রে? ঢোলগোবিন্দবাবু দেখলেন একটা খুব সিড়িঙ্গে চেহারার কী একটা জন্তু না হাসি না কান্না মুখ করে তাঁর দিকে তাকিয়ে আছে, আবার বললো সেটা, আমার কথা এবার নিশ্চয় শুনতে পাচ্ছেন? আপনার চশমার লেন্সের পাওয়ার বাড়িয়ে ওটাকে মাইক্রোস্কোপ বানিয়ে দিয়েছি, সবই লুইবাবার কৃপা, তাই এখন আপনি আমায় দেখতে পাচ্ছেন। কি আর বলবো ঢোলগোবিন্দবাবু, আমাদের খিদে পেয়েছিল, তাই আপনার সতেরো টাকার দুধে মুখ দিয়েছি, তাতেই দুধ গেছে খারাপ হয়ে! ওই “বেশী দুধ কম পানি” কোম্পানির লোকগুলো আসলে দুধটা ভালো করে পাস্তুরাইজ করতে পারে নি, তাই আমরাও বেঁচে গেছিলাম। সেইজন্য আপনি গিন্নির ঝাঁটা থেকে বাঁচলেন না! আমি ব্যাকটেরিয়া। দুধের ব্যাকটেরিয়া।</p>
<p dir="ltr">দাঁত মুখ খিচিয়ে ঢোলগোবিন্দ বলে ওঠেন, তা তুমি ব্যাকা না টেরা তা জেনে আমি কি করবো বলতে পারো? আমার তো গোটা জীবনটাই ব্যাকাট্যারা হয়ে আছে, একটা সোজা লোক পেলুম না আজ অব্দি, সবাই ঠকিয়ে গেল!</p>
<p dir="ltr">ব্যাকটেরিয়া বললে, আমাদের আদিগুরু বলতেন, মানে যিনি আমাদের আবিষ্কার করেছিলেন আবার বিনাশের রাস্তাও বাতলে দিয়ে গেছিলেন আপনাদের, সেই লুইবাবা, বলতেন, মন তৈরী থাকলে সঠিক সুযোগ আসে, আপনার মন এই এদ্দিনে বোধহয় তৈরী হয়েচে! </p>
<p dir="ltr">ঢোলগোবিন্দ নড়েচড়ে বসেন, বললেন, তা বাবা ব্যাকটেরিয়া, তোমাকে বাকু বলেই ডাকছি, কিছু মনে কোর না যেন, বলি এই লুইবাবাটি কে? যদি সম্ভব হয় আমায় একটিবার নিয়ে যাবে তাঁর কাছে? এ ভবসংসার বড়ো নির্মম, আমায় ডাবল টোনড মায় পাস্তুরাইজড করে ছাড়বে মনে হয়!</p>
<p dir="ltr">বাকু বললে, এমনিতে জাতিতে আমরা ল্যাক্টোব্যাসিলাস, কাজেই লাকু বলেও ডাকতে পারেন। সে যাই হোক, দেড়শো বছর আগেও কেউ আমাদের পাত্তা দিত না, বলা ভাল, জানতো না। তারপর এই লুই ঠাকুর এলেন, আর আপনাদের ভালো ছেলের আর মন্দ ছেলের খাবার কেন পচে যায় তার রহস্য বার করলেন!</p>
<p dir="ltr">ভালো ছেলের মন্দ ছেলের খাবার? ঢোলবাবুর চোখ বড়োবড়ো হয়ে যায়।</p>
<p dir="ltr">বাকু কিংবা লাকু তার সিলিয়াগুলো ফ্ল্যাজেল্লায় ঠেকিয়ে অনেকটা প্রণাম ঠোকার মত করে বলে, আহা, ওই যে দুগ্ধ আর মদ্য।</p>
<p dir="ltr">ঢোলগোবিন্দ বললেন, ও এই ব্যাপার! যেমন আমি আর পাশের বাড়ীর মাতাল বুড়োটা!</p>
<p dir="ltr">বাকু বললো, সে আপনি যাই-ই বলুন, ভালো মন্দ কেউ টিকতো না যদি না লুই ঠাকুর আমাদের খুঁজে বার করে দেখাতেন। সেই জন্যই উনি আমাদের আদিগুরু। একদিন সকালে উঠে আমার পূর্বাণুজীবরা দেখে, আমাদের কলোনি কে কলোনি এক্সপোজড হয়ে গেছে। সবাই আঙুল তুলে বলছে, এরাই পচায় এরাই পচায়। লুই ঠাকুর আমাদের যেমনি বিখ্যাত করে গেলেন, তেমনি করলেন কুখ্যাতও। </p>
<p dir="ltr">ঢোলবাবু বললেন, খুবই দুঃখের কথা, কিন্তু আমায় এভাবে না ফাঁসালে চলছিল না তোমাদের? পচালে পচালে আমার দুধের প্যাকেটে ঢুকে পচালে?</p>
<p dir="ltr">বাকু বললো, এ ব্যাপারে সম্পূর্ণ দোষ যারা পাস্তুরাইজেশন করছিল, তাদের! ওরা যদি পঞ্চাশে ফোটাতো তো আমরা ফুটে যেতাম, ফোটায় নি, তাই মওকা পেয়ে ফুটিয়ে দিয়েছি আমরা! আমরা আমাদের কাজ করেছি, কাক্কা! </p>
<p dir="ltr">এই বলে বাকু তার সিলিয়াগুলো ঝাঁকায়, অনেকটা কাঁধনাচানোর মত আর কী!</p>
<p dir="ltr">ঢোলবাবু বললেন, তা লুইঠাকুরের ব্যাপারটা…</p>
<p dir="ltr">বাকু বললো, ব্যাপারটা গোটা না জানলে ঠাকুরের শরণাপন্ন হওয়া যাবে না। পুরো নাম লুই পাস্তুর। বাবা বলতেন, চান্স ফেভারস্ দ্য প্রিপেয়ার্ড মাইন্ড!</p>
<p dir="ltr">ঢোলবাবু বললেন, দাঁড়াও দাঁড়াও, নামটা চেনা চেনা লাগছে। আরে এতো বিজ্ঞানী লুই পাস্তুর, দস্তুরমতো চিনি। ওই জন্য একে বাবা মানে আদিগুরু বলছো বুঝি। আমার মেয়ে টেঁপির বইতে লেখা আছে, তিনি হলেন জীবাণুবিদ্যার বাপ! ইনিই তো পাস্তুরাইজেশন পদ্ধতি আবিষ্কার করে বিখ্যাত। জলাতঙ্কের টিকে আবিষ্কারও এনার কাজ। সংসারে টিকে থাকার টিকেও কি ইনি আবিষ্কার করে গেছেন, বাবা ল্যাক্টোব্যাসিলাস?</p>
<p dir="ltr">বাকু বললো, তা যদি মনে করেন, অনেকটা সেইরকম, নিজের কাজ দিয়ে দেখিয়ে গেছেন, কিন্তু সে আরেক কাহিনী। </p>
<p dir="ltr">ঢোলগোবিন্দ বলেন, আহা, তাই বলো না, একটু শুনি, শুনেও পুণ্য।</p>
<p dir="ltr">বাকু বলে, সে প্রায় একশো সত্তর বছর আগের ঘটনা। ফ্রান্সদেশের লুইঠাকুর তখন ওই চব্বিশ বছরের তাজা ছেলে, শিল্পীর মত মন আর বিজ্ঞানীর মত বুদ্ধি। লিথোগ্রাফি মানে জানেন তো, নরম পাথরের উপরে ছুঁচালো জিনিস দিয়ে আঁকিবুকি কেটে রঙ চাপিয়ে, তার উপর কাগজ চাপা দিয়ে, গোটা ছবিটার একটা আয়নার মত প্রতিরূপ তৈরী করা, এসবে লুইঠাকুরের হেভি উত্সাহ। এমনি সময়েই ঘটলো সেই ব্যাপারটা, যেটা থেকে আপনি জীবনে টিকে থাকার শিক্ষে পাবেন, ঢোলবাবু। </p>
<p dir="ltr">আঙুর থেকে বেরোয় যে রস, সে রস গেঁজিয়ে হয় উচ্চমানের যতরকম ওয়াইন মদ্য। এটা পুরোপুরি আমাদের ক্রেডিট, মানে ব্যাকটেরিয়াদের, আমরা পচাই, তাই দাম বাড়ে মদের। যত ভালোভাবে পচে, তত ভালো মানের অ্যালকোহল বেরিয়ে আসে দ্রাক্ষাশর্করার রাসায়নিক বিবর্তনে। </p>
<p dir="ltr">ভালোজাতের ওয়াইনের ছিপির ভিতরের গায়ে দেখবেন লেগে থাকে চকচকে একরকমের গুঁড়ো। ওটা হল টার্টারিক অ্যাসিডের লবণ, কেলাসাকার কিনা, তাই চকচক করে আলো পড়লে। আঙুর সত্যিই খানিকটা টক, শেয়ালে বলুক কি না বলুক, এর জন্য দায়ী তাতে থাকা টার্টারিক অ্যাসিড। আঙুর থেকে তৈরী মদ মানে অ্যালকোহলেও এই অ্যাসিডের পটাসিয়াম বা সোডিয়াম লবণ, যাদের টার্ট্রেট বলে, তারা গুলে ডুবে থাকে। অ্যালকোহল বাষ্পীভূত হতে থাকলে টার্ট্রেট কেলাসগুলো জমতে থাকে ছিপির ভিতরের গায়ে। বার্লিনের বিশ্ববিখ্যাত কেমিস্ট মিতসার্লিখ এবং আরো অনেকে এই টার্ট্রেটের লবণ আলাদা করে দ্রবণ বানালেন আর তার মধ্য দিয়ে সমতল সমবর্তিত আলো পাঠিয়ে দেখলেন…</p>
<p dir="ltr">ঢোলবাবু বললেন, কি আলো? সমাবর্তন টমাবর্তন আবার কি হে? আলো কি ডিগ্রি পেল না কি রাষ্ট্রপতির হাত থেকে?</p>
<p dir="ltr">বাকু বললো, আহা, কাকা একটুও বিজ্ঞানের খোঁজ রাখেন না দেখছি! সমাবর্তন নয়, সমবর্তন, ইনজিরিতে যাকে বলে পোলারাইজেশন। কেন, পোলারাইজড সানগ্লাস পরেন নি বুঝি? পোলারাইজেশন মানে হলো পোলারাইজ করা, মানে…</p>
<p dir="ltr">ঢোলবাবু বলেন, ও বুয়েছি, মানে যাকে বলে মেরুকরণ। মানে অনেকরকম মতামতকে ঝানু  রাজনীতিকরা কাজের সুবিধার জন্য দুই মেরুতে বিভাজিত করে হিসেব করে, তুই এ দিক আর তুই ও দিক, এই তো!</p>
<p dir="ltr">বাকু বললো, এটা খুব দামী কথা বলেছেন কাকা। এমনিতে যে আলো আমরা চারদিকে দেখি, সেটা কেমন যেন ছড়ানো ছেটানো, যাকে বলে স্ক্যাটার্ড লাইট। পুরীর সমুদ্রের ঢেউ যদি আপনি সামনে থেকে দেখেন তো দেখবেন ঢেউটা সমুদ্রতলের উপরে উঠছে আর নীচে নামছে, কিন্তু একটা সমুদ্রতলেই সেটা ঘটছে। সমুদ্রতল যেমন একটা, সাধারণ আলোতে তেমনি তল একটা নয়, অসংখ্য। ওমনি অসংখ্য তলে আলোর ঢেউ উপরে উঠে আর নীচে নেমে ছুটে চলেছে! </p>
<p dir="ltr">ঢোলবাবু বললেন, সে কি! সবদিকে সমুদ্র! কল্পনা করতেই ভয় লাগছে বাকু!</p>
<p dir="ltr">বাকু বললো, এর থেকেও ভয়ানক শয়তান কিছু অণু আছে কাকা, যারা এই সাধারণ আলোর ঢেউগুলোকে পোলারাইজ করে ফেলে। এরা থাকে প্রাকৃতিক কিছু কেলাসে, মানুষ তাদের নিয়ে একরকমের হুজুগে মেতে উঠেছিল সে সময়। তো এইসব অণুরা এমনভাবে কেলাসের ভেতরে থাকে যে, সাধারণ আলো যখন কেলাসের ভেতর দিয়ে পাঠানো হয় তখন একটা তলের আলোর ঢেউ বাদ দিয়ে বাকি সমস্ত তলের আলোর ঢেউ এরা শুষে ফেলে! জাস্ট ভাবো, আলোটা যখন ওইসব কেলাস থেকে বেরোয়, তখন দেখা যায়, স্রেফ একটা তলে আলোর ঢেউটা নাচছে, ঠিক সমুদ্রের ঢেউগুলোর মত। ওইরকম একতলে নাচা আলোকে বলে সমতল সমবর্তিত আলো। ঝানু রাজনীতিকদের মত কেলাসগুলো সাধারণ আলোর ঢেউগুলোকে দুটো ভাগে ভাগ করে ফেলেছে, একভাগকে শুষে নিয়েছে, বেরতে দেয় নি, অন্যভাগকে বেরতে দিয়েছে সমবর্তনের পরে। তুই ভেতরে, তুই বাইরে! ঠিক যেন ফিল্টার, তাই এইরকম কেলাসগুলোকে বলে পোলারাইজিং ফিল্টার। আপনার মেয়ে টেঁপি ওই যে সেদিন সাড়ে ছ হাজার টাকা দামের যে সানগ্লাসটা কিনলো, তার কাচেও ওইরকম ফিল্টার আছে। </p>
<p dir="ltr">ঢোলবাবু খানিক ঢোক গিলে বললেন, টেঁপির বন্ধু খ্যাঁদা ভালো চাকরি করে, ওই ভ্যালেন্টাইন গিফ্ট দিয়েছিল, তাতে তোমার কী? তুমি বলো, তারপর?</p>
<p dir="ltr">বাকু সিলিয়া ঝাঁকিয়ে বললো, না না, আমি সামান্য ব্যাকটেরিয়া, আমার আর কি! তো হয়েছে কি, সমতল সমবর্তিত আলো নিয়ে তখন বিজ্ঞানীমহলে দারুণ উদ্দীপনা। প্রাকৃতিক অনেক রকম পদার্থের দ্রবণের মধ্য দিয়ে তখন এই আলো পাঠিয়ে দেখা হচ্ছে কি হয়। যা দিয়ে দেখা হচ্ছে সেটাও একইরকম একটা ফিল্টার, যেটা ওই সমতল সমবর্তিত আলো তৈরী করেছিল। তার মানে ওই দ্বিতীয় ফিল্টারের ভেতর দিয়ে সমবর্তিত আলো বেরিয়ে যাবারই কথা। অন্যভাবে বললে প্রথম ফিল্টার যে আলোকে সমবর্তিত করে বেরনোর পারমিশন দিয়েছে, দ্বিতীয় ফিল্টারও সেটাকে ওইভাবেই বেরতে দেবে। দুই ফিল্টারের মাঝে কিছু না রাখলে সেরকমই ঘটলো। কিন্তু যেই দুটোর মাঝে রাখা হল দ্রবণভর্তি পাত্র, ওমা, সে কি কান্ড! এ পাশ দিয়ে সমতল সমবর্তিত আলো দ্রবণের ভেতরে পাঠিয়ে ওপাশ থেকে আলোটাকে দ্বিতীয় ফিল্টার দিয়ে দেখতে যাবে, দেখে আলো নেই, মানে ভ্যানিশ!</p>
<p dir="ltr">ঢোলগোবিন্দ বললেন, নেই মানে, সব খেয়ে নিল নাকি? আমি হলে যেটা দিয়ে দেখছি সেটা এদিক ওদিক নেড়েচেড়ে দেখতাম।</p>
<p dir="ltr">বাকু বলে, দূর মশাই, পন্ডিতগুলো সেইরকম ভাবে নি নাকি ভাবছেন! তখনই তো কেউ কেউ ডানদিকে সরিয়ে আর কেউ কেউ বাঁ দিকে দ্বিতীয় ফিল্টারটাকে ঘুরিয়ে আলোটা ফের দেখতে পেল। তার মানে যে সমতলে আলোটা সমবর্তিত করেছিল প্রথম ফিল্টার, দ্রবণ সেই সমতলকে ডাইনে বা বাঁয়ে ঘুরিয়ে দিয়েছে। আলোর ঢেউ এখন সেই ঘুরে আসা নূতন সমতলে নাচছে, তাই দ্বিতীয় ফিল্টারকে ডানদিক বাঁদিক না ঘোরালে সেই আলো দেখা যাবে না। </p>
<p dir="ltr">দেখা গেল একশ্রেণীর পদার্থের দ্রবণ সমতলকে ডানদিকে ঘোরাচ্ছে। তাদের বলা হল দক্ষিণাবর্তী বা ডেক্সট্রোরোটেটরি। আর একরকম দ্রবণ তাকে বাঁদিকে ঘোরাচ্ছে। তাদের বলা হল বামাবর্তী বা লেভোরোটেটরি। আর এইরকম সমতল ঘুরিয়ে দেওয়ার মত মাথা ঘুরিয়ে দেওয়া ঘটনাকে বলা হতে লাগলো---আলোকীয় ঘূর্ণন বা অপটিক্যাল রোটেশন। কে কত ডিগ্রি বামাবর্তী আর দক্ষিণাবর্তী সেটা মাপারও ব্যবস্থা থাকলো। এই গোটা যন্ত্রটা, মানে দুটো ফিল্টারের মাঝে দ্রবণ রাখার পাত্র নিয়ে এই ব্যবস্থাটার নাম দেওয়া হয়েছিল পোলারিমিটার।</p>
<p dir="ltr">ঢোলবাবু বললেন, অ! মিতসার্লিখ তারমানে এই পোলারিমিটারে টার্ট্রেট লবণের আলোকীয় ঘূর্ণন মাপছিলেন?</p>
<p dir="ltr">বাকু বললে, আরিব্বাস, কাকার তো দেখছি অডিওগ্রাফিক মেমোরি, কত জিবি? আহা, চটেন না, ঠিকই ধরেছেন, মদের ভাটির দেয়ালে আর বোতলের ছিপির ভেতরের গায়ে জমে থাকা টার্ট্রেট লবণ, দেখা গেল পোলারাইজড আলোর সমতলকে ডানদিকে ঘোরাচ্ছে। একে বলা হল আলোকসক্রিয় বা অপটিক্যালি অ্যাকটিভ টার্ট্রেট। মুশকিল হল, ল্যাবরেটরিতে রাসায়নিক বিক্রিয়া করে তৈরী করা টার্ট্রেট বা টার্টারিক অ্যাসিড এরকম কিছুই দেখাচ্ছে না, না ডানদিকে না বাঁদিকে ঘোরাচ্ছে সমতলটাকে। তার মানে এটা হল আলোকনিষ্ক্রিয় টার্ট্রেট লবণ। আঙুরের থোকার ল্যাটিন নাম ছিল রেসিমাস। তার সাথে মিল রেখে একে বলা হল রেসিমিক লবণ। </p>
<p dir="ltr">পন্ডিতেরা পরীক্ষা করে দেখলেন, আলোকসক্রিয় বা আলোকনিষ্ক্রিয়, দুরকমের লবণের রাসায়নিক ধর্ম হুবহু এক। তাহলে কী রহস্যে একটা আলোকসক্রিয় আর একটা আলোকনিষ্ক্রিয়? ইউরোপ জুড়ে করা হল ঘোষণা, ওপেন চ্যালেঞ্জ, যিনি পারবেন তিনি এগিয়ে আসুন এ রহস্যের সমাধানে।</p>
<p dir="ltr">বছর চব্বিশ পঁচিশের সদ্য পিএইচডি, তরুণ সহকারী অধ্যাপক, লুই পাস্তুর যখন প্যারিসের অ্যাকাডেমি অফ সায়ান্সে গবেষণা পত্র পেশ করে ঘোষণা করেন, তিনি পেরেছেন এ রহস্যের সমাধান করতে, তখন সবাই হাঁ হয়ে গেল। আহা, লুইবাবাকে তখন কী সুন্দরই না দেখতে, ঠিক যেন আপনাদের দেশের হিন্দি সিনেমার কে কে মেনন! (কাকা, ছবিটা দেখুন লেখার নীচে) তো সে যাই হোক, প্যারিসের অখ্যাত তরুণ গবেষক পেরেছেন বার্লিনের বিখ্যাত কেমিস্টের ধাঁধার জবাব দিতে! আরো আশ্চর্য হলো, যখন তারা শুনলো, এ কাজে পাস্তুর ব্যবহার করেছেন একটা মাইক্রোস্কোপ, যা কিনা তখনকার দিনে বায়োলজিস্টরাই ব্যবহার করে থাকেন! রসায়নের কাজে অণুবীক্ষণ যন্ত্র? হাঃ হাঃ হাঃ, অণুদের পাস্তুর চোখে দেখেছেন নাকি?</p>
<p dir="ltr">ঢোলবাবু বললেন, কী আশ্চর্য্য! আমার মেজো শালা বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়নের প্রোফেসর, ওকে দেখেছি, মাইক্রোস্কোপ দিয়ে কেলাস বা ক্রিস্টাল বাছতে। অ, তার মানে পাস্তুর এসে এই ধারণাটাও ঢুকিয়েছিলেন!</p>
<p dir="ltr">বাকু বললে, তা একরকম পথপ্রদর্শক বলা যেতেই পারে। কিন্তু সেটাও বড়ো কথা নয়। </p>
<p dir="ltr">ঢোলবাবু বললেন, তালে বড়োকথাটা কি শুনি?</p>
<p dir="ltr">বাকু বললো, গবেষণাপত্র লিখে দাবী করলেই হলো না, সেকালে সরাসরি সামনে বসে পরীক্ষা দেবার রেয়াজ ছিল। ইউরোপের বিজ্ঞানীদের বিজ্ঞানী ছিলেন বৃদ্ধ জঁ ব্যাপ্তিস্ত বিও। সে কালে তাঁকে সবাই বেশ মান্যিগণ্যি করতো। বুড়ো বললে, তুমি বললেই তো মানবো না খোকা, একদিন আমার ল্যাবে এসে, আমার বিকারক আর যন্ত্রপাতি নিয়ে কাজ করে, আমার সামনে পরীক্ষে করে প্রমাণ দাও, যে কেন এই দুই জায়গা থেকে পাওয়া টার্ট্রেট লবণের এই দুইরকম আচরণ!</p>
<p dir="ltr">লুইঠাকুর বললে, বেশ, আপনার ল্যাবে বসেই পরীক্ষা করে এটা প্রমাণ করবো। </p>
<p dir="ltr">এখানে একটা গভীর অনুভবের ব্যাপার আছে ঢোলগোবিন্দবাবু। শুধু যদি গড়পড়তা গোঁড়া বিজ্ঞানীর মত যুক্তি চাই, সিদ্ধান্ত চাই, অঙ্ক চাই, তিনবার করে করতেই হবে এরকম কাঠখোট্টা পরীক্ষা চাই, এসব বলে পাস্তুর চ্যাঁচাতেন তবে বিষয়টার কোনকালে সুরাহা হত না, আর না হলে আপনারা মানুষেরা যে কিভাবে বাঁচতেন, তা ভাবতেই ভয় লাগছে। আসলে লুই পাস্তুরের ছিল শিল্পীর মত চোখ। দুচোখ ভরে কেলাস বা ক্রিস্টালের ছাঁদ দেখতেন আর মুগ্ধ হয়ে যেতেন। পর্যবেক্ষণ যে এত নিপুণভাবে কেউ করতে পারে, তা রসায়নের লোকে আগে জানতো না! কেলাসকে সূক্ষ্মভাবে দেখতে হলে লাগবে মাইক্রোস্কোপ। তারপর চোখ ঠিকরে সূক্ষ্ম তুলি দিয়ে বেছে বেছে আলাদা করো একেকটা কেলাস, দ্যাখো তারা কেমন আকারের, জ্যামিতি কিরকম। ঢোলগোবিন্দবাবু, ইলিশের কাঁটা বাছতেই কেমন বিরক্ত হই, তাও ইলিশ খাওয়ার জিনিস, আর এ তো স্রেফ কেলাস! তাও মাইক্রোস্কোপে ঘন্টার পর ঘন্টা বসে! </p>
<p dir="ltr">ঢোলবাবু বললেন, সত্যি বাকু, দেখার চোখ চাই, সাথে চাই ধৈর্য্য।</p>
<p dir="ltr">বাকু বলে, ধয্যি বলে ধয্যি! একবার নিজে প্রমাণ করো রে, তার পর লোকের সামনে প্রমাণ করো রে! পাস্তুর দেখলেন ও দেখালেন, আলোকসক্রিয় টার্ট্রেট, যেটা কিনা দক্ষিণাবর্তী, সেটার কেলাসগুলো সব একরকমের জ্যামিতিক আকারবিশিষ্ট। </p>
<p dir="ltr">অন্যদিকে, আলোকনিষ্ক্রিয় টার্ট্রেটগুঁড়ো, যেগুলো ল্যাবরেটরিতে বিক্রিয়ার মাধ্যমে তৈরী করা, সেগুলো খানিকটা নিয়ে একরকম দ্রাবকে গুলে ঢাকনা দিয়ে ঢাকা দিয়ে রাখলেন বিও বুড়োর সামনে। কদিন পরে এসে দেখবেন দ্রবণ বাষ্পীভূত হয়ে কেলাসগুলো কেমন তৈরী হয়েছে।</p>
<p dir="ltr">নির্দিষ্ট দিনে পাস্তুর হাজির বিওর ল্যাবে। আলোকনিষ্ক্রিয় টার্ট্রেট কেলাসগুলো আলাদা করে মাইক্রোস্কোপে দেখলেন, বিজ্ঞানী বিও কে দেখালেন। দেখা গেল কেলাসগুলো দুরকমের! তার মধ্যে একরকমের কেলাসের ছাঁদ ঐ আলোকসক্রিয় কেলাসের ছাঁদের সাথে হুব্বোহু এক! ম্যাজিক!</p>
<p dir="ltr">এই অব্দি শুনে ঢোলবাবু বাগড়া দিলেন, তা কি করে হয় বাকু? একইরকম জিনিসের দুরকম কেলাস! </p>
<p dir="ltr">বাকু বললো, তা হলে আর বলছি কি কাকা! শুধু কি তাই? পাস্তুর এটাও দেখলেন ও দেখালেন যে একরকমের কেলাসকে আয়নায় ধরলে যেরকম দেখতে লাগে, আরেকরকমের কেলাস হুবহু সেইরকম!</p>
<p dir="ltr">ঢোলগোবিন্দ বললেন, আয়নায় তো সব একরকমই লাগে, এতে আশ্চয্যির কী আছে?</p>
<p dir="ltr">বাকু বললে, সে না হয় ফুটবলটাকে আয়নায় ধরলে তার ছায়াটা একরকমই লাগবে, কিন্তু ধরুন আপনার হাতের তালু মেলে ধরলেন, সেক্ষেত্রে সেটা নিশ্চয় আয়নায় উল্টো দেখাবে?</p>
<p dir="ltr">ঢোলবাবু হাত নিয়ে নাড়াচাড়া করতে করতে ভাবতে লাগলেন, ঠিকই তো! আয়নার হাতের ছায়াটাকে নিয়ে সত্যি হাতের উপর ফেললে কিছুতেই আঙুলে আঙুলে মেলে না! এরকম তো কত জিনিসই আছে হে, তিনি বলেন, ডান হাতের দস্তানা বাঁহাতে পরা যায় না। </p>
<p dir="ltr">বাকু বললো, আজ্ঞে ক্রিস্টালগুলোও ওমনি দেখতে লাগছিল, তালেই বুজুন, দুইরকমের আয়নাতুতো ভাইকে আলাদা করে বাছা কী সাংঘাতিক চাপের ব্যাপার! পাস্তুর মাইক্রোস্কোপে চোখ ঠিকরে তাকিয়ে তুলি দিয়ে তুলে তুলে দুইরকমের কেলাস আলাদা করলেন। কত ঘন্টা কাটলো এভাবে তা কেউ লিখে যায় নি বটে। </p>
<p dir="ltr">ঢোলবাবু চুপ। ধৈর্য্য গুণ বড়ো গুণ। সব বিজ্ঞানীর ধৈর্য্য থাকে না, তাই সব বিজ্ঞানী লুই পাস্তুর হন না। এটা অনুভব করে মনটা উদাস হয়ে গেলো। কুড়ি বছর সংসার করেও তিনি সুরোবালার মুড়োঝাঁটা খেয়ে ধৈর্য্য হারাচ্ছেন, এ অতি অন্যায়! নূতন করে ভাবতে হবে এটা নিয়ে।</p>
<p dir="ltr">বাকু বললো, আমি যা বলছি এসব নিজের চোখে আর দেখা হল কই, বাপঠাকুর্দার নিউক্লিয়াসে এই কাহিনী কতকাল ধরে শুনে আসছি, তাই আপনাকে বলতে পারছি! দুইরকমের ক্রিস্টাল বেছে বুছে বুড়ো বিয়োকে দেখাতে হবে, কোনটার অ্যাক্টিভিটি কিরকম! </p>
<p dir="ltr">জঁ ব্যাপ্তিস্ত বিও যখন নিজের ল্যাবরেটরিতে বসে নিজের চোখে দেখলেন, একরকম ক্রিস্টাল সমবর্তিত আলোর সমতলকে বাঁদিকে ১২ ডিগ্রি ঘোরালে, আরেকরকম ক্রিস্টাল সেটাকে ডানদিকে ১২ ডিগ্রি ঘোরাচ্ছে, তখন আনন্দে লাফিয়ে উঠে আমাদের লুইবাবাকে বললেন, করেছো কী খোকা, করেছো কী? এর মানে একরকমের কেলাসের কম্ম অন্যরকম কেলাসে এক্কেবারে ভন্ডুল করে দিচ্ছে?? এই তালে ল্যাবরেটরিতে তৈরী টার্ট্রেটের আলোকনিষ্ক্রিয়তার রহস্য! এ তো দুনিয়ার আশ্চর্যতম ব্যাপার, প্রাকৃতিক টার্টারিক অ্যাসিডের কেলাস তো এদ্দিন শুধুই ডানহাতি বলে জানা ছিল হে! বাঁহাতি মানে লিভোরোটেটরি কেলাস বলে তো কিছুই জানা ছিল না, খোকা লুই পাস্তুর, এ যে আবিষ্কার! খোকা, আমি সারাজীবন বিজ্ঞানকে এমন ভালোবেসেছি যে এটা দেখে আমার আনন্দ আর আঁটছেনা, তুমি খানিকটা নিয়ে রাখো!</p>
<p dir="ltr">ঢোলবাবু চোখ পাকালেন, এটা লাস্টে গুল দিলে বাকু?</p>
<p dir="ltr">বাকু খানিক থতমত খেয়ে বললে, এরকমই কিছু বলেছিলো বটে বুড়ো, আসলে হাওয়ায় ভাসলে ঠিক শোনা যায় না, তারপরে অ্যাতোলক্ষকোটি জেনারেশন পেরিয়ে গেছে আমাদের, একটু জল মেশানো থাকবেই! কিন্তু লুইবাবা এরপরে যা বাণী দিয়ে গেলেন, তা শুনে সবার আক্কেল গেল আরো গুড়ুম হয়ে! তিনি বললেন, আয়নাতুতো কেলাসগুলো যেসব অণু দিয়ে তৈরী, তারাও আয়নাতুতো! বোঝো কান্ড কাকা, জৈব অণুতে যে কার্বন পরমাণু থাকে তার চারটে হাত কিভাবে থাকে তাই নিয়ে তখন থিওরিরা মারামারি করছে, তখন সেই বাজারে লুইবাবা বলে দিলেন, টার্টারিক অ্যাসিডের দুরকম অণু, আর তারা হলো আয়নাতুতো অণু, আর তারা তৈরী করে আয়নাতুতো কেলাস! অবিশ্যি সব আয়নাতুতো অণু যে এরোম আয়নাতুতো কেলাস তৈরী করবে তার গেরিন্টি নাই, সেইজন্য বাকি হিংসুটে লোক বলে বেড়াতে লাগলো, “হুঁঃ, ওরোম আয়নাতুতো কেলাস না জমলে পাস্তুর আর রহস্যভেদ করতে পারতো না, ভাগ্যের জোরে কেলাস সেদিন ওমনি জমেছিল!” তখন আমাদের বাবা গম্ভীর হয়ে বাণী দিলেন, In the field of observations, chance favours the prepared mind! </p>
<p dir="ltr">Mind it! আয়নাতুতো অণুগুলো ঠিক মোজা আর দস্তানার মতো, ডানহাতি অণুগুলো কিছুতেই বাঁহাতি অণুগুলোর সাথে মিলবে না, বাকি সব মিলবে, কটা পরমাণু, কটা বন্ধনী এইসব একরকমের, শুধু পরমাণুগুলো এমনিভাবে সাজিয়ে অণু তৈরী হয়েছে যে দুইরকমের অণু যেন আয়নাতুতো যমজ! হাতকে গ্রীক ভাষায় যা বলে, তার সাথে মিল রেখে এই ঘটনাকে বলে কাইরালিটি আর আয়নাতুতো অণুদের বলে কাইরাল অণু। বিখ্যাত বাঙালি এঞ্জিনিয়ার তথা বিজ্ঞানসাংবাদিক শ্রী সুজিত কুমার নাহাকে চেনেন, ঢোলবাবু?</p>
<p dir="ltr">আরে বিলক্ষণ, ঢোলবাবু বলে ওঠেন, ওনার লেখা বই না পড়লে টেঁপির কি আর বিজ্ঞানে আগ্রহ জন্মাতো? তা হঠাত্ তাঁর নাম নিলে, বাকু?</p>
<p dir="ltr">বাকু বললে, কাইরালিটির বাংলা পরিভাষা এনারই উদ্ভাবিত। সেটা হল, ভুজধর্মিতা, ইনজিরি handedness এর সুন্দর বাংলা। ভুজধর্মী হতে পারে দস্তানা, মোজা, হাত, পা, কেলাস এইসবই, কিন্তু জৈব অণু যে ভুজধর্মিতা দেখায় সেটা পাস্তুর প্রথম ধারণা দিয়ে যান। আর তার বছর দশেক পরে মদ পচে টক ভিনিগার কেন হচ্ছে তার কারণ বার করতে গিয়ে পাস্তুর দেখবেন ও দেখাবেন, কেবল আঙুরের মদের ডানহাতি টার্টারিক অ্যাসিড খালি পচে, বাঁহাতি টার্টারিক অ্যাসিড পচে না! তখন সরেজমিনে তদন্ত করতে গিয়ে ধরা পড়লো আমাদের জ্ঞাতিগুষ্টি মাইকোব্যাকটিরিয়াম অ্যাসেটি, আসামী। সে ব্যাটারা যে উত্সেচক বার করে সেটা কেবল ডানহাতি অণুগুলোকেই ভাঙতে পারে, বাঁহাতি গুলোকে পারে না! তারপর নির্দিষ্ট উষ্ণতায় এমন করে মদ ফুটিয়ে জীবাণুগুলোকে মেরে দিলে গা, যে আর কোনোদিনো…...ও পিসি, ও ঠাকুমা, ও অ্যাসেটি, ও টিউবারকুলোসিসের দাদু গো….</p>
<p dir="ltr">ল্যাকটোব্যাসিলাসটা নিউক্লিয়াস হাঁ করে কাঁদছে দেখে ঢোলবাবুর ভারী মায়া হলো, ওর সাইটোপ্লাজমটায় একটু চুমু খেয়ে তিনি বললেন, ষাট ষাট, কাঁদে না বাকু! তোরা তো খুব তাড়াতাড়ি বাড়িস! চিন্তে করিস না রে, ওঠ ওঠ, মাইটোকনড্রিয়নটা মোছ, আসলে এসব শুনিয়ে লুইবাবার মেসেজ টেসেজ কিছু বলবিনে বুঝি?</p>
<p dir="ltr">বাকু মাইটোকনড্রিয়নটা মুছে টুছে বললো, আপনি মেসেজটা বুঝতে পারেন নি, একটুও?</p>
<p dir="ltr">ঢোলগোবিন্দবাবু বললেন, ভাসা ভাসা আর কি! ওই সংসারে শান্তিতে টিকতে গেলে ধৈর্য্য ধরে থেকে অনুরাগী আর বদরাগী পার্টনারের কেলাস আলাদা করে ফেলতে হবে। আমি যেন সমবর্তনের সমতল, যখন যেদিকে ঘোরায় ঘুরে যাব, এই তো? নো দুঃখ, নো সুখ সবই আয়নাতুতো ছায়ামাত্র। আহা, জয়, লুই বাবার জয়! জয়, শ্রীপাস্তুরের জয়!</p>
<p dir="ltr">বাকু অর্থাত্ ল্যাকটোব্যাসিলাসটা চোখের মত দেখতে মাইটোকনড্রিয়নটা একবার মটকে সম্মতি জানিয়ে হাওয়ায় গা ভাসিয়ে দিলো। </p>
<p dir="ltr">রান্নাঘর থেকে ভেসে এলো সুরোবালার সুরেলা কন্ঠস্বর, হতভাগা, খালি পড়ে পড়ে ঘুম দিচ্চে, আমার হাড়মাস জুড়িয়ে কালি করে দিলে গা! টেঁপি, অ্যাই টেঁপি, তোর বাপকে চান কর্তে যেতে বল্! বল্, রান্না অনেক্ষণ হয়ে গেচে!</p>
<p dir="ltr">*********<br>
© শ্রুতিসৌরভ বন্দ্যোপাধ্যায়</p>
SHRUTI SAURABHhttp://www.blogger.com/profile/06397705002239295269noreply@blogger.com0tag:blogger.com,1999:blog-4503579633352654506.post-87340106628665266752018-08-26T11:53:00.001-07:002018-08-26T11:53:33.419-07:00ক্রেবসের সাইকেল<p dir="ltr">২৫ শে অগাস্ট, ২০১৮</p>
<p dir="ltr">পুরোনোতুন সাইকেলটা</p>
<p dir="ltr">সাইকেলটা আমাদের সব্বার ইস্কুলে ছিল, আছে অনেকদিন ধরেই, না না, এ জিনিস সদ্য পাওয়া সবুজসাথীর নয়, এ অনেক পুরোনো। আমরা, পছন্দ করি বা না করি, এটা প্রায় সবাইকেই চড়তে হয়েছে, এখন অবিশ্যি আমি চড়াই, নিজে চড়ে কদ্দূর এক্সপার্ট হইচি সে বলা যায় না। </p>
<p dir="ltr">দাঁড়ান, সাইকেলটা স্ট্যান্ড করে আপনাকে একটা ছবি দেখাই। ঘ্যাং! নীচের প্রথম ছবিটা একটা যন্তরের। এ দিয়ে মাপা হয় কোষের শ্বাস-প্রশ্বাস। হ্যাঁ, সেই কোষ, যে গুলো ইঁটের পরে ইঁটের মতো গেঁথে তৈরী হয় আমার আপনার যাকে বলে বডি! বডিকে জ্যান্ত থাকতে গেলে কোষকে জ্যান্ত থাকতে হবে। কোষ যে জ্যান্ত তার প্রমাণ সেটা বাতাস থেকে অক্সিজেন নেয়। কেন নেয়? কোষের মধ্যে থাকে পাওয়ার প্যাক গ্লুকোজ, তাকে এই অক্সিজেন ভাঙবে, ভাঙলে বেরবে শক্তি, সেই শক্তির দাক্ষিণ্যে কোষের যত কায়দাবাজি, লম্ফঝম্প, ইত্যাদি। আর তার থেকেই আমরা জ্যান্ত মানুষ! তো এই কোষগুলো কতটা করে অক্সিজেন নেয়, সেটা মাপার এই হল সীল-করা যন্তর, যাকে বলে রেসপিরোমিটার, রেসপিরেশন মানে যেহেতু শ্বসন। যন্তরটার ভেতরে জ্যান্ত কোষ আছে, অণুজীব বা টিস্যুর অংশবিশেষ, টিস্যু মানে একরকম কোষেদের পরিবার, বাংলায় যাকে বলে কলা। তো তারা অক্সিজেন নিলে ছাড়বে কার্বন ডাই অক্সাইড, সেই গ্যাস শুষে নেবার মত একরকম রাসায়নিক রাখা আছে যন্তরটার ভেতরে। সেটা সোডা লাইম কিংবা কস্টিক পটাশ হতে পারে। ব্যাপার হল সীল করা যন্তরের ভেতরের অক্সিজেন গ্যাস যদি শুষে নেয় কোষ, আর কোষ থেকে বেরনো কার্বন ডাই অক্সাইড যদি শুষে নেয় সোডা লাইম বা কস্টিক পটাশ, তাহলে ভেতরে আর গ্যাস বলতে থাকলো কি! এর মানে ভেতরের বাতাসের চাপ কমতে থাকবে। কতটা কমলো দেখার জন্যে এর সাথে জোড়া আছে একটা ইউ আকৃতির কাচনল, যাতে আছে খানিকটা রঙিন তরল, যন্তরটার ভেতরের গ্যাসের চাপ কমা বাড়া করলে সেই তরলটা টিউব দিয়ে এপাশে ওপাশে নড়াচড়া করবে। একে বলে ম্যানোমিটার, চাপ মাপার যন্তর। এইভাবে চাপ মেপে বোঝা যায় কোষে কতটা অক্সিজেন নিচ্ছে, তার থেকে বার করা যায় কোষের শ্বসনের হার। এই রেসপিরোমিটারের আইডিয়া নোবেলজয়ী বিজ্ঞানী জার্মানীর বায়োকেমিস্ট অটো ভারবুর্গের, যাঁর ল্যাবে কাজ করতেন আমাদের ওই সাইকেলের মালিক ডাক্তারবাবুটি। </p>
<p dir="ltr">কোষ অক্সিজেন নিয়ে গ্লুকোজকে দড়াম করে একধাপে ভেঙে ফেলতে পারে না! পদ্ধতিটা হয় ধাপে ধাপে। এতে অনেকরকম বিক্রিয়া ঘটে। সেইসব বিক্রিয়া ঘটাতে দরকার হয় অনেকরকমের উত্সেচক, যারা বিক্রিয়াগুলোকে তাড়াতাড়ি ঘটাতে সাহায্য করে, অনেকটা একশোদিনের কাজে মাটিকাটার পরে যেরকম সারি সারি শ্রমিক লাইন দিয়ে সেই মাটির ঝুড়ি একজায়গা থেকে অন্য জায়গায় বয়ে দেন, সেরকম। প্রতিবার ঝুড়ি হস্তান্তরের সময় ইলেকট্রন আদানপ্রদান ঘটে অণুদের রাসায়নিক পরিবর্তন ঘটে। এইসব উত্সেচক নিয়ে কাজ করে ১৯৩১ সালে ভারবুর্গ সাহেব চিকিত্সাবিদ্যায় নোবেল প্রাইজ পান। কিন্তু তখনো কোষীয় শ্বসনের সম্পূর্ণ ধাপগুলো বিজ্ঞানীরা জেনে উঠতে পারেন নি। প্রথম ধাপটা ঘটে কোষের সাইটোপ্লাজমে। কোষ যদি কাঁচা ডিম হয়, তবে লিকুইড অংশটা তার সাইটোপ্লাজম। এরপরের ধাপে কি থেকে কি হয় সেটার একটা ভাসাভাসা তথ্য ছিলো, কিন্তু ভারবুর্গের সুযোগ্য শিষ্য, আমাদের ডাক্তারবাবুটি যখন বললেন, তিনি ওই রেসপিরোমিটার দিয়েই রহস্য গোটাটাই ভেদ করবেন, ভারবুর্গ পাত্তা দেন নি। বিশ্বাসই করেন নি। </p>
<p dir="ltr">প্রথম ধাপের তৈরী পদার্থগুলো দ্বিতীয় ধাপে কোষের একরকম অঙ্গাণুতে ঢোকে, যার নাম মাইটোকনড্রিয়ন। এখন যেহেতু বাইরে থেকে বিক্রিয়াটাকে চোখে দেখা যাচ্ছে না, সেহেতু ধাপে ধাপে কি পরিবর্তন হচ্ছে দেখার জন্য ডাক্তার এক কায়দা বার করলেন। </p>
<p dir="ltr">শুনতে সহজ লাগলেও ব্যাপার অত সহজ নয়। আগের গবেষণা পড়ে একটা ধারণা তৈরী হয়েছিল যে কী কী উত্সেচক এই কাজে লিপ্ত থাকতে পারে। এটাও বোঝা গেছিল যে দ্বিতীয় ধাপটা একটা চক্রাকারে ঘটা বিক্রিয়ার সমাবেশ। পায়রার বুকের পেশী, যা পায়রাকে উড়তে সাহায্য করে, আর সহজে কখনো ক্লান্ত হয় না, সেই পেশীর কোষ রেসপিরোমিটারে নিয়ে কাজ চালালেন তিনি। একেকবার একেকরকম উত্সেচক ব্যবহার করে করে দেখতে হচ্ছিল কোষের শ্বসনহার কিভাবে প্রভাবিত হয়। তার সাথে কোষটা কি কি রাসায়নিক তৈরী করছে সেটাও পরীক্ষা করে দেখা হলো। ট্রায়াল অ্যান্ড এরর পদ্ধতির নিষ্ঠাসহকারে পালন, আর কি! এইভাবে দ্বিতীয় ধাপের চক্রটার সবকটা পর্যায় ক্রমশঃ পরিষ্কার হলো। এই ধাপেই তৈরী হয় কার্বন ডাই অক্সাইড, আর বাকি জিনিস গুলো শেষধাপের বিক্রিয়া ঘটাতে ব্যস্ত হয়ে পড়ে। </p>
<p dir="ltr">ডাক্তারবাবু গবেষণালব্ধ ফল সংক্ষেপে লিখে প্রকাশ করতে গেলেন বিখ্যাত জার্নাল নেচার-এ, সেখানে বলা হল, লেখা প্রকাশের জায়গা আর খালি নেই। শেষটায় অন্য এক পত্রিকায় বড়ো আকারে ছেপে বেরলো এই গবেষণাঃ উচ্চ শ্রেণীর জীবের কোষে বাতাসের সাহায্যে কিভাবে শ্বসন ঘটে তার সদ্য আবিষ্কৃত ধাপ। খাবার খেয়ে পাওয়া শক্তির দুইতৃতীয়াংশ শক্তির জন্ম হয় এই বিক্রিয়াচক্র থেকে। সেই চক্রের রহস্যকে জানা পৃথিবীর ইতিহাসে বিশাল একটা অবদান তো বটেই। সেজন্য ১৯৫৩ সালে ডাক্তারবাবু চিকিত্সাবিজ্ঞানে পেলেন নোবেল পুরস্কার। </p>
<p dir="ltr">এইবার আসল মজার তথ্য, এ রহস্যকে জানার শুরু হয়েছিল জার্মানীর এক বিশ্ববিদ্যালয়ে, শেষ হলো ইংলন্ডের বিশ্ববিদ্যালয়ে! কারণ, একমেবদ্বিতীয়ম, শ্রীযুক্ত অ্যাডলফ হিটলার!</p>
<p dir="ltr">ডাক্তারবাবু যখন জার্মানীতে গবেষণা এবং হাসপাতালের কাজ সমান তালে চালিয়ে যাচ্ছেন, সেই সময় অলরেডি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের দামামা বেজে উঠেছে। জার্মানী থেকে অজার্মানী সবাইকে গলাধাক্কা দেবার ফরমান জারি করেছেন হিটলার সায়েব, যিনি বলেছিলেন, “বিশুদ্ধ জার্মান থাকবে কেবল, ইহুদী বৈজ্ঞানিক চলে গেলে জার্মানী যদি বিজ্ঞানে পিছিয়ে পড়ে, সেও আচ্ছা!” ইহুদী বংশের ডাক্তারবাবুটিও ধাক্কা খেলেন। ইংলন্ডের কেম্ব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয় লুফে নিলেন রত্নটিকে। মানুষের লিভারে কিভাবে ইউরিয়া তৈরী হয় তা আবিষ্কার করে তিনি তদ্দিনে বিখ্যাত। এ রকম গুণী মানুষকে নিজের দেশ ঠুকরালে কি হবে, বুঝদার দেশ সযত্নে টেনে নেবে। </p>
<p dir="ltr">নিলও তাই। কিন্তু দেশ ছাড়ার আগে সেসময় সব দিয়ে যেতে হচ্ছিলো বিজ্ঞানীদের, ভিনদেশে কোন গবেষণা বা যন্ত্রপাতি নিয়ে যেতে দেবে না নাজি অফিসারবর্গ। লুকিয়ে চুরিয়ে যা নেবার নেওয়া যায়, কিন্তু ভারবুর্গের ডিজাইন করা ওই অতোবড়ো রেসপিরোমিটার? ওটা না হলে যে ডাক্তারবাবুর সব গবেষণাই মাটি হয়ে যাবে! </p>
<p dir="ltr">শেষমেষ নাজি অফিসারেরা সদয় হয়েছিলেন। সেদিন ভাগ্যের জোরে তাদের বদান্যতা না পেলে ডাক্তার হ্যান্স ক্রেবসের আর কোষীয় শ্বসনের দ্বিতীয় ধাপ আবিষ্কার করা হতো না ইংলন্ডে এসে! জীবনবিজ্ঞান পিছিয়ে যেত হয়তো, হয়তো কেউ না কেউ আবিষ্কার করতেন, কিন্তু ডাঃ ক্রেবসের মতন তৈরী মনন কি পাওয়া যেত? আর কে না জানে, তৈরী মনই সুযোগের সদ্ব্যবহারে সক্ষম। </p>
<p dir="ltr">আজ্ঞে ঠিকই ধরেছেন মশাই, এই সাইকেলটা ডাঃ হ্যান্স ক্রেবসের, ক্রেবস সাইকেল! সবার ইস্কুলেই ছিল, তবে উঠোনে নয়, জীবনবিজ্ঞানের বইতে, শ্বসনের চ্যাপ্টারে। সবাই অল্পবিস্তর চড়েছেন, এখন হয়তো ছানাপোনাদের চড়াচ্ছেন। আজ ডাক্তারবাবুর জন্মদিন কি না, বেঁচে থাকলে আজ তাঁর একশো আঠারো বছর বয়স হতো, তাই বললাম, নমস্কার, চলি তাহলে, আবার দেখা হবে। ক্রিং ক্রিং।<br></p>
<p dir="ltr">© শ্রুতিসৌরভ বন্দ্যোপাধ্যায়</p>
SHRUTI SAURABHhttp://www.blogger.com/profile/06397705002239295269noreply@blogger.com0tag:blogger.com,1999:blog-4503579633352654506.post-2748635555930825062018-08-19T11:38:00.001-07:002018-08-19T11:38:46.857-07:00ঘোরতর প্যাঁচালো কান্ড (দুই)<p dir="ltr">ঘোরতর প্যাঁচালো কান্ড (দুই)</p>
<p dir="ltr">ম্যাও সামলানো মোটেই সহজ কাজ নয়, বিশেষতঃ সেটা যদি শ্রোয়েডিংগারের ম্যাও হয়! আর এই শ্রোয়েডিংগারের ম্যাও মানে বেড়ালের চক্করে পড়ে বাঘা বাঘা পদার্থবিদেরই চেতনা চটকে যায় তো কোথায় আমাদের মত ছাপোষা লোক! সেই সময় কোয়ান্টাম বলবিদ্যার ভয়ঙ্কর সব গাণিতিক চিহ্নদের ওপর থেকে নজর সরে যায়, ইচ্ছে করে না বড়ো বড়ো সমীকরণগুলো আর তার বাস্তব তাত্পর্য্যগুলোর দিকে তাকাতে, আর ঠিক তখনই, বিজ্ঞান-বিষয়ক চমকপ্রদ তথ্য সরবরাহকারী সংস্থার উল্টোপাল্টা প্রচারের ফলে, প্রকৃত মানে ভুলে গিয়ে সামান্য কতগুলো করোলারির উপরে বেশি বেশি করে গুরুত্ব আরোপিত হয়। তাতে করে চমত্কার চমত্কার সব তাত্ত্বিক ভবিষ্যদ্বাণী বেরোয়! তার বিষয়ে নানা বিদগ্ধ মুনিদের নানা মত থাকতেই পারে, কিন্তু এই মতামতের বিবাদের মাঝে মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে ছদ্মবিজ্ঞান নামক একরকম ক্ষতিকর বিষয়! কোয়ান্টাম পদার্থবিদ্যা, বলা বাহুল্য, অজস্রবার ক্ষতবিক্ষত হয়েছে এইরকম ছদ্মবিজ্ঞানের বিষাক্ত তীরে। সঙ্গত কারণেই, বিশিষ্ট বিজ্ঞানীদের পক্ষেও জনমানসে গেড়ে বসা এইসব ছদ্মবিজ্ঞানের ম্যাও সামলানো মোটেই সহজ নয়। তখন তাত্ত্বিক বিজ্ঞানী নন, নির্মোহচিত্তে নিরলসভাবে হাতে কলমে গবেষণা করে যাওয়া বিজ্ঞানীর দলই পারেন সেই ম্যাও তাড়াতে। বাস্তবিক তাঁরা কোন বড় বড় তত্ত্ব কাগজে লিখে শুধু দেখান না, তাঁরা বলেন, ‘পরীক্ষা করে আমরা এই পেয়েছি, এবার তুমি বা তোমরা সামলাও কিভাবে থিওরি দিয়ে এর ব্যাখ্যা দেবে বাপু! আমাদের কাজ ফলাফল চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেওয়া, এবার সেটা তোমাদের পোষালে পোষাক, না পোষালে কেটে পড়ো, কিন্তু ফলাফল ধ্রুব সত্য’। আর এইভাবেই বিজ্ঞান এগিয়ে চলে তত্ত্বের পর তত্ত্ব পরিশোধন করতে করতে, তাতে কোন জিনিয়াসই অবশ্য ভুল কি ঠিক প্রমাণিত হয় না, নির্মোহভাবে এগিয়ে চলাই বিজ্ঞানের পথ, আর নিরুদ্বিগ্ন চিত্তে নিরপেক্ষ ভাবে বৈজ্ঞানিক বিষয়ের বর্তমান পরিস্থিতি প্রচার করাই হল বিজ্ঞান সাংবাদিকের ধর্ম, কিভাবে কি এসেছিল, তার পর্যালোচনা করুন বিজ্ঞানের ইতিহাসবেত্তারা, সাংবাদিকের সে দায় নয়, কারণ না হলে আংশিক সত্য পরিবেশন হয়ে যাবার সম্ভাবনা থাকে! আর সত্য পুরো সামনে না এলেই ছদ্মসত্য সৃষ্টির একশোভাগ সম্ভাবনা। </p>
<p dir="ltr">প্রথম সমস্যা হল সাহিত্যিক সেক্সপিয়ারকে নিয়ে। হোয়াটস ইন এ নেম নয়, হে মনীষী, বলুন হোয়াটস নট ইন এ নেম, গোলাপকে যে নামে ডাকুন তা গোলাপই থাকবে, কিন্তু আমাদের কোয়ান্টাম কথাটি এতই রহস্যরোমাঞ্চকর লাগে যে কোথাও ব্যবহার করতে পারলে বেশ গুরুগম্ভীর মনে হয় নিজেকে। এ প্রসঙ্গে একটা কার্টুন মনে পড়ে গেল, জজসায়েব উকিলকে জিগ্যেস করছেন, মামলার ব্যাপারে কদ্দূর এগোলেন? এজলাসের আবহাওয়া ভারিক্কি করার জন্য উকিলরা প্রায়ই গুরুগম্ভীর শব্দ ব্যবহার করে থাকেন, এ ক্ষেত্রে তিনি বললেন, সামগ্রিক দলিল দস্তাবেজ পর্যালোচনা করে আমরা এই সিদ্ধান্তে এসেছি যে মামলার কোয়ান্টাম অগ্রগতি ঘটেছে। জজসায়েব যৌবনে পেটেন্ট অফিসের উকিল ছিলেন, ওনাকে একবার এক কোয়ান্টাম বিশারদের আবিষ্কারের পেটেন্ট করানোর কথা বলা হয়েছিল, উনি বোর্ড ভর্তি অদ্ভূত সব চিহ্ন দেখে অজ্ঞান হয়ে ক্লায়েন্ট হাতছাড়া করেন, তাই আজো সেই ভয়ে বা সম্ভ্রমে, বর্তমান উকিলকে কোয়ান্টাম অগ্রগতি নিয়ে খুঁচালেন না। উল্টে নোট নিলেন, মামলার কোয়ান্টাম অগ্রগতি সন্তোষজনক। বাস্তবে, কোয়ান্টাম মানে এত স্বল্প পরিমাণ বোঝায় যে পাঠক বুঝে নিন মামলা কদ্দূর এগিয়েছিল! </p>
<p dir="ltr">সেই মামলার কি হয়েছিল জানা নেই, কিন্তু আমরা কোয়ান্টাম শব্দটা ব্যবহার করার গামলাতে জল ভালোই ঘোলা করে রেখেছি! বস্তুতঃ, কোয়ান্টাম লিপ বা জাম্প অর্থাত্ বাংলায় যাকে লাফ বলে, তার দুরকম অর্থ বৈজ্ঞানিক পত্রিকাগুলোয় ব্যবহার হয়। প্রথমে বোঝায় ইলেকট্রনের এক কক্ষপথ থেকে অন্য কক্ষপথে লাফ দেয়া, দুইনম্বর হল কোন বিষয়ে অতি সামান্য অগ্রগতি। তাই সাধারণ পাঠককে সাবধান হতে হবে কোন প্রসঙ্গে কিভাবে শব্দটা ব্যবহৃত হয়েছে। </p>
<p dir="ltr">দ্বিতীয় সমস্যা, দেখা নিয়ে, আজ্ঞে হ্যাঁ, কোয়ান্টাম বিজ্ঞানে দেখা নিয়ে সমস্যার অন্ত নেই। কালজয়ী গায়ক তো গেয়েই খালাস, একপলকের একটু দেখা, আরো একটু বেশী হলে ক্ষতি কী? হ্যাঁ মশাই ক্ষতি আছে, ভালো করে নজর করতে গেলে আপনার বিষনজর পরীক্ষার ফলাফলকে প্রভাবিত করতে পারে। বিশ্বেস না হয় আগের পর্বটা আরেকবার পড়ুন, বেড়াল মরতেও পারে বাঁচতেও পারে, তবে আপনি জানবেন কখন, না বাক্স খোলার পরে! তার মানে কি এই হলো না যে আপনি দেখলেন বলে জানলেন বেড়াল মরা না জ্যান্ত! তার মানে ঘুরিয়ে বললে আপনার দেখা, বা না দেখা, বেড়ালের বাঁচা মরার তথ্যটাকে প্রভাবিত করছে। এটাকে আরো অন্যক্ষেত্রে প্রয়োগ করা যায়। তার মানে আপনি আজ এইমাত্র আকাশে দেখেন নি চাঁদটাকে, অতএব চাঁদ থাকতেও পারে, নাও পারে! আহা, অধৈর্য্য হন কেন, আপনি কোন ছাড়, ইতিহাস বলে, আইনস্টাইনের অব্দি এইসব শুনে শেষদিনতক গলাবুকজ্বালা করতো! আপনি বাক্স খুলে বেড়াল পরীক্ষা করছেন কি না দেখার জন্য রাস্তায় কেউ দাঁড়িয়ে থাকতেই পারে আপনার ঘরের জানালার দিকে তাকিয়ে! সে যদি না দেখে তো আপনি বেড়ালের বাঁচা মরার তথ্য জানতেও পারেন, নাও পারেন! আজ্ঞে হ্যাঁ কত্তা, এখানে আপনার উপর পরীক্ষা করছে লোকটা। সেই লোকটার উপর কেউ স্যাটেলাইট থেকে নজরদারি চালাতেই পারে, আপনাকে দেখছে কি না সে। এমনিভাবে দেখার কথা ভাবতে থাকলে একসময় সৌরজগত, ছায়াপথ পেরিয়ে ব্রম্ভান্ড অতিক্রম করে যাবেন। ব্রম্ভান্ড মানে হল কি না ইউনিভার্স, মানে একটা গুচ্ছ বা বিশ্ব, তার বাইরে থেকে যদি কেউ নজর রাখে, তবে? তার মানে কি ইউনিভার্স একপিস নয়, আসলে অনেকগুলো? এইভাবে অনেক অনেক ঘোরতর প্যাঁচালো সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়া যায় বটে, কিন্তু আমাদের মত সাধারণ মানুষের যত নজর গিয়ে পড়ে ওই মিস্টিক অনুসিদ্ধান্তটির উপর, যে একের বেশী বিশ্ব মানে মাল্টিভার্স থাকার অর্থ মাল টি ভরসা করছে তার বাইরে থাকা এক শক্তির উপরে, যে সব দেখছে, তার নাম ভগবান। </p>
<p dir="ltr">ব্যাস, আর যায় কোথা! বিজ্ঞান আর ধর্মকে মেলানো গেছে বলে ধর্মব্যবসায়ীরা মাঠে নেমে পড়লো। বলা হল, আপনার দেখা, অর্থাত্ কিনা আপনার চেতনা কোয়ান্টাম বিজ্ঞানের ফলশ্রুতি, (অবশ্য একদিক দিয়ে দেখতে গেলে চেতনা, বা সিগন্যালিং ব্যবস্থা বা কোষ ইত্যাদি তো মূলে সেই পারমাণবিক কোয়ান্টামীয় ব্যাপারে গিয়ে মেলে, কিন্তু ধর্মব্যবসায়ীরা সেসব বুঝলে বা বোঝালে তো!) তার মানে “ইদিকে আসুন, চেতনার জাগরণ ঘটান আমাদের আবিষ্কৃত কোয়ান্টাম হিলিং দিয়ে” (বিতর্কিত ডাক্তার দীপক চোপড়া দ্রষ্টব্য)! বিজ্ঞানী বোঝাতে গেলেন এক, মিডিয়া প্রচার করলো আরেক! কোয়ান্টাম হিলিং বা রোগমুক্তি একটি সার্টিফায়েড ছদ্মবিজ্ঞান, সাধারণ পাঠককে তার ফাঁদ থেকে মুক্ত করার দায় সেই নির্মোহ বিজ্ঞান সাংবাদিকের। এরকম আরেকটি শব্দবন্ধ শুনে থাকতে পারেন, কোয়ান্টাম চেতনা বা কনশাসনেস, বাস্তবে যার মধ্যে বৈজ্ঞানিক কোন শাঁস নেই! মাঝে এরকম একটি ধারণা বাজারে চলেছিল যে জগত্টা নাকি উন্নতশ্রেণীর ভিনগ্রহী প্রাণীদের দ্বারা গবেষণামূলক পরীক্ষার জন্য তৈরী সিম্যুলেশন বা মডেল ছাড়া আর কিছু নয়। অঙ্কটঙ্ক কষে এ ধারণা যে ভুল তা প্রমাণ করেছেন বিজ্ঞানীরা। </p>
<p dir="ltr">হয়তো আমার আপনার চেতনার রঙেই পান্না হল সবুজ, কিন্তু সে কেবলই কবির কথার খেলা, কোয়ান্টাম চেতনার আসল স্বরূপ আয়ত্ত করতে মানবের এখনো অনেক সময় লাগবে। আর যাই হোক তা দিয়ে এই মুহূর্তে আপনার দেহের ক্যানসার সারানো যায় না! </p>
<p dir="ltr">কি বললেন, মনের ক্যানসার?</p>
<p dir="ltr">********</p>
<p dir="ltr">© শ্রুতিসৌরভ বন্দ্যোপাধ্যায় <br>
</p>
SHRUTI SAURABHhttp://www.blogger.com/profile/06397705002239295269noreply@blogger.com0tag:blogger.com,1999:blog-4503579633352654506.post-45107832310764440362018-08-19T11:37:00.001-07:002018-08-19T11:37:39.055-07:00প্যাঁচালো কান্ড<p dir="ltr">প্যাঁচালো <u>কান্ড</u></p>
<p dir="ltr">(স্বীকারোক্তিঃ পদার্থবিদ তথা দার্শনিক আরউইন শ্রোয়েডিংগারের জন্মদিন উপলক্ষ্যে শ্রদ্ধার্ঘ্য মাত্র, পদার্থবিদ্যার গুরুগম্ভীর পুঙ্খনাপুঙ্খ ব্যাখ্যার আঘাত বাঁচিয়ে কেবল উপরস্তরের ভাসা ভাসা মাখনটুকু পরিবেশিত হল।)</p>
<p dir="ltr">কল্পনা কয়, গল্প না হয় একটুও নেই সত্যিটাতে,<br>
কিন্তু ভেবে বলতো দেখি, এমন আসে কল্পনাতে?<br>
অবস্থারা ঠ্যাং জড়িয়ে উদোর পিন্ডি বুধোর ঘাড়ে,<br>
এম্নিতরো “রসিকতা” কোয়ান্টামই করতে পারে!<br>
ঢাকনা খুলে যেই দেখেছিস তোর হুলোটা জ্যান্ত বেঁচে,<br>
কেমন করে জানতে পেরে দূরের বেড়াল ঠিক টেঁসেচে!<br>
তুই ভেবেছিস, গাঁজাখুরি! খেয়াল খুশীর তত্ত্ব যতো!!<br>
তা নয়, তা নয়, অ্যাপ্লিকেশান, দেখতে পাবি সময় মতো।<br>
ধীরে ধীরে পন্ডিতেরা পাকাচ্ছে হাত এ বিদ্যাতে,<br>
ক্রিপ্টোগ্রাফি, কম্পিউটিং, ঋদ্ধ হয়ে উঠবে জাতে।<br>
তখন তোরা মান্থলি কাটিস, বসবি চড়ে--নিমেষ-যানে,<br>
সময় ছাড়াই পৌঁছে যাবি, কোয়ান্টেলিপোর্টেশানে।</p>
<p dir="ltr">একথা সকলেই অল্পবিস্তর জানেন যে “কোয়ান্টামম্ ক্লাসিকালম্ নৈব তুল্যং কদাচন”। সেই কোয়ান্টামীয় অদ্ভূতুড়ে কান্ডের সম্ভাব্য সবচেয়ে বিখ্যাত উদাহরণ হল ‘শ্রোডিংগারের বেড়াল’ নামক চিন্তা-পরীক্ষা (Thought-experiment)। একজন পদার্থবিদ, যিনি বেড়ালদের খুব একটা বেশি পছন্দ করেন না, তিনি একটা বাক্সের মধ্যে একখানা বেড়াল রেখে দিলেন। বেড়ালটার সঙ্গী হিসেবে বাক্সে রাখা আছে একপিস মারাত্মক বোমা, আজ্ঞে হ্যাঁ, কিংবা কোন প্রাণঘাতী জিনিস ধরুন, যেটা ফাটার চান্স ফিফটি ফিফটি, বাক্স বন্ধ থাকা অবস্থায়। এর মানে হল এই যে, বাক্স যতক্ষণ না খুলছি, ততক্ষণ জানার কোন উপায় নেই যে বোমাটা ফেটেছে না ফাটে নি! অর্থাত্, বেড়ালটা পটল তুলেছে না কি তোলে নি। কোয়ান্টাম পদার্থবিদ্যার ভাষায় আমরা বলতে পারি, আমাদের বাক্স খুলে দেখার আগে, বেড়ালটা ছিল জ্যান্ত আর মরা এই দুই অবস্থার মিক্চার! দুই অবস্থা যেন প্যাঁচ মেরে একটা আরেকটায় ঢুকে আছে। ঠিক এরকমই ঘটে কোয়ান্টাম দুনিয়াতে। যেমন পরমাণুর ভেতরে নিউক্লিয়াসকে ঘিরে পাক খাওয়া ইলেকট্রনের কথাই ধরা যাক। আসলে কিন্তু ইলেকট্রনেরা ওরকম পাক টাক কিছুই খাচ্ছে না, তারা আসলে ভেতরের ফাঁকা জায়গাটার সবটাতে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে মেঘের মত। সবটা একসাথে, একই সময়ে। কিছু জায়গায় থাকার সম্ভাবনা বেশি, কিছু জায়গায় কম। কোন এক মুহূর্তে সেটা কোনখানে আছে সেটা জানতে হলে আগে আমাদের পরমাণু নামক বাক্সটার ঢাকনা খুলে বিশেষ কোন যন্ত্র দিয়ে তার অবস্থান “মাপতে” হবে! (যদিও মাপামাপির ব্যাপারটা ডেঞ্জারাস এসব ছোট জিনিসের ক্ষেত্রে, কারণ এরা হল আপিসের কর্মঠ কর্মীদের মতো, তাঁদের ভালোমানুষী টেস্ট করতে বারবার যদি আমবাঙালিদের মত তাঁদের “কাঠি” করেন, তাঁদের স্বভাব যেমন পরিবর্তন হতে বাধ্য, তেমনি কোয়ান্টাম দুনিয়ায় একটা ধর্ম ঠিকঠাক করে মাপতে গেলে অন্য ধর্মটা বেগড়বাঁই করে বসে!) ঠিক ওই বেড়ালের পরীক্ষার মত, অবস্থান মাপার আগে অব্দি ইলেকট্রন সর্বত্র বিরাজ করতে পারে, জ্যান্ত ও মরার মিক্চারের মত। </p>
<p dir="ltr">এই চিন্তা-পরীক্ষা থেকেই কোয়ান্টাম এনট্যাংগলমেন্ট (entanglement) বা কোয়ান্টাম প্যাঁচ ধারণার উত্পত্তি। ধরা যাক একটা বাক্সে একটা বেড়ালের বদলে দুটো বাক্সে দুখানা বেড়াল আছে। আগের মত ফিফটি ফিফটি ফাটার চান্সওয়ালা বোমা রেখে পরীক্ষাটা রিপিট করা হল। সবাই বুঝতেই পারছেন যে এবার চারজোড়া অবস্থার প্যাঁচ তৈরী হতে পারে:</p>
<p dir="ltr">প্রথমতঃ দুটো বেড়ালই জ্যান্ত<br>
দ্বিতীয়তঃ দুটো বেড়ালই মৃত<br>
তৃতীয়তঃ ডানদিকেরটা জ্যান্ত, বাঁ দিকেরটা মৃত<br>
চতুর্থতঃ ডানদিকেরটা মৃত, বাঁ দিকেরটা জ্যান্ত</p>
<p dir="ltr">এইবার ধরুন কোনভাবে প্রথম আর দ্বিতীয় সম্ভাবনাকে বাদ দিতে পারা গেল। বাকি যে দুজোড়া প্যাঁচ থাকলো পড়ে, তারা হল একটায় মরা হলে অন্যটা জ্যান্ত আর একটায় জ্যান্ত তো অন্যটায় মরা! কোয়ান্টাম পদার্থবিদ্যার ভাষা অনুযায়ী বেড়ালদুটোর অবস্থা হয়ে গেছে এনট্যাংগলড্। যদিও সমস্যা হল, কোন বেড়ালটা বাঁচবে আর কোনটা মরবে, তা আগে থেকে জানার কোন উপায় নেই। কিন্তু এটা ধ্রুব সত্য যে একটা বাঁচলে অন্যটা মরবে। ঠিক এইখানে পরীক্ষাটা হেড টেলের টসিং থেকে আলাদা, কারণ সেক্ষেত্রে আপনি আগে থেকেই জানেন মুদ্রার কোনদিকটা হেড, কোনদিকটা টেল। আরো আশ্চর্যের ব্যাপার হলো এই যে ডানদিকের বাক্সটাকে আকাশগঙ্গা গ্যালাক্সিতে আর বাঁদিকের বাক্সটাকে ব্রম্ভান্ডের সর্বশেষ গ্যালাক্সিতে নিয়ে গিয়ে ঢাকনা খুললেও একই ফলাফল বেরবে, অর্থাত্, একটায় জ্যান্ত হলে অন্যটায় মরা বেড়াল দেখতে পাবো। বেড়াল দুটোর মত এই আচরণ কোয়ান্টাম দুনিয়ায় ইলেকট্রন কিংবা ফোটনের ক্ষেত্রে ভালোমত পরীক্ষাসমেত প্রমাণিত হয়েছে। তবে একটা এনট্যাংগলড্ বেড়াল ওরফে অবপারমাণবিক কণা কিভাবে অন্যটার অবস্থা সম্পর্কে তথ্য জানতে পারে তত্ক্ষণাত্, সেটার মৌলিক কারণ খোঁজার চেষ্টা এখনো চলছে। অবশ্য এখনই এরকম হলফ করে বলা যায় না, যে পুঁটির শাড়ীতে ফলস্ পার বসানো হয় নি, টাকা দাও, এরকম তথ্য পুঁটির মা আলোর থেকেও বেশী বেগে আকাশগঙ্গা ছায়াপথ থেকে অ্যান্ড্রোমিডা ছায়াপথে পুঁটির বাবাকে পাঠাতে পারবে কি না! পদার্থবিদ মিচিও কাকু মনে করেন সেরকম না হওয়ার চান্স বেশী। সে যাই হোক তথ্য আদানপ্রদানের এরকম অদ্ভূত তত্ত্ব শুনলেই মনে পড়ে যায় রবীন্দ্রনাথের “জুতা আবিষ্কার” কবিতার সেই চামার কুলপতি আর হবুচন্দ্র রাজার মন্ত্রী গোবুচন্দ্রের কথা, পরস্পরের মন কি সত্যি এরকম এনট্যাংগলড্ ছিল নাকি কেবল ফিচলেমো:<br>
“আমারো ছিল মনে,<br>
কেমনে বেটা পেরেছে সেটা জানতে।”</p>
<p dir="ltr">© শ্রুতিসৌরভ বন্দ্যোপাধ্যায়</p>
SHRUTI SAURABHhttp://www.blogger.com/profile/06397705002239295269noreply@blogger.com0tag:blogger.com,1999:blog-4503579633352654506.post-20497819521226698742018-07-28T04:06:00.001-07:002018-07-28T04:06:04.096-07:00মাস্টারমহাশয়ের স্কুটয়েড কোষ<p dir="ltr"><br>
এ কি এ কি ক্লাসের মদ্যে মোবাইল বন্ধ করো বাবারা, হেডু/প্রিন্সিপাল দেখলে আমার চাকরি চলে যাবে,,,,,অ্যাঁ, তাহলে এই দ্যাখো, এএএই লেখো, আবরণী কলা, ওরে ঘেঁপু, মোবাইল ব্যাগের ভেতরে বাপ্ আমার, তাহলে আমরা দেখলাম আবরণী কলা কিভাবে আঁকতে হয়, অ্যাই ছোঁড়া, এ দিকে মন দে, বোর্ডে যা আঁকলাম তা এঁকে ফ্যালো। এ কি মারতে আসছিস কেন, মাস্টারকে সম্মান দিবিনে বাপ্, মেরে নাক ফাটাবি, মোবাইল বন্ধ করতে বলে এট্টু থাবড়ে দিয়েচি বলে। হ্যাঁ তাপ্পর লেখো বাবারা, আবরণী কলার অবস্থান, গঠন কাজ, কি অবস্থা, অ্যাঁ! প্রতিটি কোষ, প্রিজমের মতো বা চোঙার মতো, এ্যাঁ তাইলে হয়, হয় এরম ঠিকঠাক প্যাকিং।</p>
<p dir="ltr">(মাস্টারমশাই বোর্ডে এঁকে ফেললেন আবরণী কলা)</p>
<p dir="ltr">কি বললি, নোতুন তথ্য আচে? হ্যাঁ ওই এমাসের নেচার পত্রিকায় যেটা বেরিয়েচে সেটা তো? (http://www.nature.com/articles/s41467-018-05376-1)<br>
হ্যাঁ রে ঘেপু, মোবাইল ব্যাগে ঢোকাও বাবা, খেঁদি, মা আমার, সংসারের গল্প এট্টু ক্লাসের পরে করো, ভোঁদু জানতে চাইচে, এট্টু বলি। হ্যাঁ কি বলচিলাম রে, ও হ্যাঁ, ওই যেখানে পন্ডিতেরা হিসাব নিকেশ করে দেকিয়ে দিয়েচেন, অ্যাঁকাচোরা জায়গায় চামড়ার কোষ কিভাবে থাকে! তখন তাদের জ্যামিতিক গঠনটাই পাল্টে যায়, প্রিজমের মতো বা চোঙার মতো নয়, ওরা থাকে বিটলে পোকা দেখেচিস ঘেপু, হ্যাঁ বিটলে পোকার পিঠে যে ওই শক্ত ঢালের মতো জিনিসটে থাকে, ওর মতো আকারের হয়ে যায়, যাকে বলে স্কুটেলামের মতো। আর তাই এরকম আকারকে বলে দন্ত্য স এ ক এ হ্রস্ব উ, ট, অন্তঃস্থ এ কার, ড, মানে স্কু ট য়ে ড। লিখে ফ্যালো। এরম ভাবে থাকলে, ছবি দ্যাখো, ছবি, সবচাইতে ভালো প্যাকিং হয়, শক্তি বাঁচে প্রকৃতির। তাহলে আমরা জানলাম যে চামড়ার কোষগুলো অবস্থাবিশেষে স্কুটয়েড আকারে সজ্জিত থাকে, মাথা আর পায়ের দিক এইরোম দলে মুচড়ে। কেমন? স্কুটয়েড একটা নোতুন, আনকোরা নোতুন জ্যামিতিক আকার। চামড়া শুধু? রক্তের নালির আবরণ থেকে শুরু করে লিভার কিডনিদের আবরণের লাইনিং পর্যন্ত এইভাবে স্কুটয়েড কোষ দিয়ে তৈরী বলে মনে করা হচ্চে।</p>
<p dir="ltr">কি বললি? এ সব জেনে কি ঘন্টাটা হবে? তবে শোন্, মানুষের কাজে বানানোর নকল অঙ্গের চামড়া বানাতে এই ধারণাটা খুব কাজে লাগবে, বুঝলি তো? কত লোকের উবগার হবে বলতো, চামড়ার কোষগুলো এরম স্কুটয়েড আকারে থাকে, এটা জানতে পারার পর। তোদের যাতে মনে থাকে এট্টা ছড়া লিখিচি তাই, শুনে দ্যাখো বাবারা, মায়েরা,</p>
<p dir="ltr">আমরা চামড়া-কোষ,<br>
মিলেমিশে থাকি স্কুটয়েড সেজে,<br>
যেখানে যেমন থোস্! কেমন?</p>
<p dir="ltr">ওঃ!! মোবাইল ঢোকা বলচি বেয়াদপ ছোঁড়া, উঃ! </p>
<p dir="ltr">(ছাত্র কর্তৃক মাস্টারমহাশয়ের নাকে একটি মৃদু আপার কাট প্রদান)</p>
<p dir="ltr">ছাত্র হয়ে মাস্টারের নাকে ঘুষি মেরে ফাটিয়ে দিলি বাপ?<br>
হায় হায়! নাকের উপরের দিককার স্কুটয়েড কোষগুলো সব ফাটিয়ে দিলি বাবা! তাইতো তাইতো, তা নইলে যা নোতুন আবিষ্কার হচ্ছে তার প্রয়োগ দেখবো কি করে! </p>
<p dir="ltr">© শ্রুতিসৌরভ বন্দ্যোপাধ্যায়</p>
<div class="separator" style="clear: both; text-align: center;"> <a href="https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEjZi1TRjPPioNs9bjDZO05YLq-89SdPyLAGNMuZlhlz0XgUXHBzVs5cKs9MaDFBGTp0h5RNDtprwSF-mxO9uO6HdaxupUTzEL2UisyMV7xDPDNH_oQY-IGo0O2f_4uJdNhiGs0toRAKbH30/s1600/Text+Over+Photo1532772254378.jpg" imageanchor="1" style="margin-left: 1em; margin-right: 1em;"> <img border="0" src="https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEjZi1TRjPPioNs9bjDZO05YLq-89SdPyLAGNMuZlhlz0XgUXHBzVs5cKs9MaDFBGTp0h5RNDtprwSF-mxO9uO6HdaxupUTzEL2UisyMV7xDPDNH_oQY-IGo0O2f_4uJdNhiGs0toRAKbH30/s640/Text+Over+Photo1532772254378.jpg"> </a> </div><div class="separator" style="clear: both; text-align: center;"> <a href="https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEiUwn_sYhHMWejwEnZmxMnwd3joTQsh9yHdZAQrZZJ2-qG6t4QnfMiwRdYJfVDuoJnTqAVsfD27x40g-JTtGI5jJfROlEc4l2FszgwnngLw91uzLymXXuiz-EMhNbhhBkMS8QYyqBmsI4Fk/s1600/Text+Over+Photo1532772400130.jpg" imageanchor="1" style="margin-left: 1em; margin-right: 1em;"> <img border="0" src="https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEiUwn_sYhHMWejwEnZmxMnwd3joTQsh9yHdZAQrZZJ2-qG6t4QnfMiwRdYJfVDuoJnTqAVsfD27x40g-JTtGI5jJfROlEc4l2FszgwnngLw91uzLymXXuiz-EMhNbhhBkMS8QYyqBmsI4Fk/s640/Text+Over+Photo1532772400130.jpg"> </a> </div>SHRUTI SAURABHhttp://www.blogger.com/profile/06397705002239295269noreply@blogger.com0tag:blogger.com,1999:blog-4503579633352654506.post-53751399746014050752018-07-08T19:12:00.001-07:002018-07-08T19:12:16.795-07:00পোলারিটন বা শক্তিপদের খোঁজে<p dir="ltr">শক্তিপদ, বাড়ী আছো?</p>
<p dir="ltr">শক্তিপদ বলে কেউ বাড়ী আছে নাকি খোকা? আর বলো কেন, যে দিকে তাকাও সেদিকে হয় জিনিস, নয় শক্তি! বিশ্বেস না হয় নিজের দিকে দেখো, ওই যে হাতে টানা ফোনটা নিয়ে আঙুল টেনে যাচ্ছো, ওগুলো কি? আঙুল, ফোনের পর্দা, তোমার মা যিনি এই মাত্তর তোমায় ঠেঙাতে উপরে উঠে আসছেন তুমি সাড়া দিচ্ছো না বলে, তোমার ঘরের মেঝে, দেয়াল, সব এমনকি এই গ্রহ, এ সব জিনিস ছাড়া আর কী বলতে পারো? আর ওই যে তোমার রদ্দিমার্কা ফোনের ব্যাটারি গরম হয়ে তাপ ছাড়ছে, এই যে লেখাটা পড়ছো আর জ্ঞান দিচ্ছি বলে গাল পাড়ছো, এগুলো থেকে যে আলো ছাড়ছে বলে দেখছো, এগুলো শক্তির বিভিন্ন রূপ ছাড়া আর কী বলতে পারো? </p>
<p dir="ltr">শক্তিপদ এসব হিসেবের মধ্যে আসে না! সত্যি কথা বলতে কি, ও আসলে আধা শক্তি আধা পদার্থ বা পদ, তাই ওর নাম রেখেছিলাম “শক্তিপদ”। পন্ডিতেরা অবিশ্যি ওদেরকে পোলারিটন বলে ডাকেন, ও কি, এই অব্দি শুনে ভাবছো বুঝি আমি চাঁদা চাইবো? না না, দাঁড়াও, তোমায় একটু সিম্পিল করে বলি। রোসো, হ্যাঁ, পোলারিটন অনেক রকমের আছে বটে, তবে আমি প্রথমে তোমার ওই গিটারটা একটু বাজাই দাও!</p>
<p dir="ltr">ঝ্যাং! এই যে শব্দটা করলাম এটা কেন হলো বলো তো! কি বললে, তাও জানো না! আরে এই তো গিটারের এই আগার খুঁটি আর পাছার খুঁটি এ দুয়ের ভেতরে টান টান করে বাঁধা তারটাকে একটু টেনে ছেড়ে দিলাম, আর ওম্নি সে তারে ঢেউ খেলে বাতাসে এক জব্বর ঘাই মারলো, তুমি শুনলে, ঝ্যাং! এবার আমি গোটা ব্যাপারটাকে স্লো মোশানে নিয়ে যাচ্ছি, আরে চিন্তা নেই, আমি এটা তোমাদের সিনেমার ফাইট দেখে শিখেছি, এই দেখো, তারটা এই উঠলো, এই নামলো, ঢেউয়ের এই মাথা আর এই হলো পা, কেমন, তালে পাশাপাশি এই যে দুটো ঢেউয়ের মাথা, ওদের ভেতর যতটা ফাঁক, তার নাম তরঙ্গদৈর্ঘ্য। সব রকমের শক্তিই এইরকম ঢেউয়ের আকারে ছোটে, তাই আলোরও এমনি ঢেউ হয়, আর সে ঢেউয়েরও হয় তরঙ্গদৈর্ঘ্য। </p>
<p dir="ltr">আহা, চুল খাড়া হয়ে যাচ্ছে যে রাগে, এসো, ভজার সেলুনে যাই, খানিক চুল না ছাঁটলে তোমার মাথায় শক্তিপদর গপ্পোটা ঢোকাতে পারবো না যে। এই তো বসো দেখি এই সিটে, কী সুন্দর সামনে পেছনে আয়না, কত প্রতিবিম্ব তৈরী হয়েছে তোমার বিটকেলে মাথাটার! সামনের দিক পেছনের দিক সব কেন দেখতে পাচ্ছো বলতো? আরে আলোর ঢেউ এ দুটো আয়নায় বারবার ধাক্কা খেয়ে ফিরে আসছে আবার ধাক্কা খাচ্ছে, যাকে তোমরা বলো প্রতিফলন আর কি। তোমারো প্রতিবিম্ব তাই আয়নায় যে কতবার তৈরী হচ্ছে তার ইয়ত্তা নেই। </p>
<p dir="ltr">বিজ্ঞানীরা ঠিক এইরকম খাড়া দুটো আয়নার মাঝে আলোর ঢেউ রেখে আশ্চর্য সব বিষয় দেখেছেন। তবে সে আয়না তোমার ভজার সেলুনের এরকম গাব্দা আয়না নয়। পন্ডিতেরা বলেন, একটা গোটা ঢেউ তৈরী হয় একবার উঠে তারপর নেমে। সেই গোটা একপিস আলোর ঢেউয়ের আবার আদ্দেক করলে যা হয়, ঐটুকু ছোটো অংশকে তাঁরা আটকেছেন দুই আয়নার মাঝে, যাদের ইনজিরিতে বলে অপটিক্যাল রেজোনেটর, যেন ঠিক গিটারের ওই আগার আর পাছার খুঁটি! যেহেতু ঐটুকু অংশ মাত্তর 1 মাইক্রোমিটার মতো, সেহেতু এই আয়নাদুটোকে বিজ্ঞানীরা ছোটো করে বলেন, মাইক্রোরেজোনেটর। </p>
<p dir="ltr">কি বললে? এ সবের মধ্যে শক্তিপদ কই? আরে ঐ তো, ঐ দুটো মাইক্রোরেজোনেটরের মাঝে তৈরী হবে শক্তিপদ! তার জন্য আয়নার মাঝে একরকমের কুয়ো খুঁড়ে রাখতে হবে বাপু, জলের নয়, ইলেকট্রনের! যে কোন জিনিসেই গিজগিজ করছে ইলেকট্রন, অথচ সহজে জিনিস থেকে তার বেরনোর জোর নেই, যতক্ষণ না বাইরে থেকে কেউ শক্তির দড়ি টেনে বের করে দিচ্ছে। কাজেই সব জিনিসই আসলে যেন ইলেকট্রনের কুয়ো। না না তাই বলে এই তোমার মাস্টারমশাইয়ের মতো গোব্দাপারা জিনিসকে ঐ মাইক্রোরেজোনেটরের মাঝে রাখলে হবে না! বিজ্ঞানীরা ওখানে রাখেন---মাত্তর এক পরমাণু পুরু একরকম জিনিস! এর মধ্যে অবশ্যই ইলেকট্রন আছে, কিন্তু জিনিসটা এমন যে সে ইলেকট্রনগুলো আলো ফেললে তার থেকে শক্তি নিয়ে হাওয়া খেতে বাইরে বেরিয়ে পড়ে।<br>
এসব জিনিস হলো অর্ধপরিবাহী বা সেমিকন্ডাক্টর, ইস্পেশাল অবস্থা না হলে, যেমন আলো ফালো না খাওয়ালে, এনারা ইলেকট্রনগুলোকে কুয়ো থেকে বার হতে দিতে চান না। এখানে এইসব সেমিকন্ডাক্টরগুলো কোয়ান্টাম কুয়ো হিসেবে কাজ করে।</p>
<p dir="ltr">সেই কুয়োতে যেমন ব্যাঙ ছিলো তার মায়ের কাছে, কোয়ান্টাম কুয়োতে তেমনি ইলেকট্রনগুলো যে যার নিজের জায়গায় আটকে থাকে এমনি সময়। জায়গাগুলো ইলেকট্রনদের মায়ের মতো আটকে রেখেছে। গোল বাধলো যখন আলোর ঢেউ এসে পড়লো ওই কুয়োতে। বিজ্ঞানীরা ছোট্টো এক পিস আলোর ঢেউ ফেললেন দুই মাইক্রোরেজোনেটরের মাঝে, কোয়ান্টাম কুয়োর উপর। ব্যস্! ইলেকট্রনগুলো একটু ঢেউয়ের ধাক্কাতে নড়ে চড়ে উঠে পালালো মায়ের কোল থেকে, হাওয়া খেতে বেরিয়ে গেলো। ইলেকট্রনের অভাবে কোল খাঁ খাঁ করতে থাকে আর বেরিয়ে যাওয়া ইলেকট্রন গুলোকে ডাকে আয় আয়, বেশিদূরে যাস নে। কোলের ডাক এড়াবে ইলেকট্রনদের সে সাধ্যি নেই! সত্যিই তো, পন্ডিতেরা ছোট্টো একটু ঢেউ পাঠিয়েছে, সেটা নিয়ে আর কদ্দুর যাবে ইলেকট্রন! ফাঁকা কোলের ভিতর ইলেকট্রনেরা আবার ঝাঁপিয়ে পড়ার আগে একরকম অদ্ভূত অবস্থার সৃষ্টি হয়। কোলটাকে ঘিরে কিছুক্ষণের জন্য ইলেকট্রনগুলো গোল গোল পাক খায়, ভাবটা এমন, কী মজা, মায়ের কাছে ফিরে যাই, ফিরে যাই! এইরকম অবস্থাটার সাথে পরমাণুর গঠনের একটা মিল পাওয়া যাচ্ছে কি? মানে নিউক্লিয়াসকে ঘিরে যেমন ইলেকট্রন ঘোরে পরমাণুতে, তেমনি এখানে নিজেরি ফেলে আসা জায়গা ঘিরে ঘুরছে ইলেকট্রন। পন্ডিতেরা বললেন, এই অবস্থাটাই একরকমের ছদ্মবেশী কণা, নাম দিলেন, এক্সাইটন।</p>
<p dir="ltr">আহা, আরেকটু ধৈর্য্য ধরতে পারবে না বুঝি? এক্সাইটন বেশীক্ষণ তো বেঁচে থাকে না, কারণ ইলেকট্রনরা তারপরে মায়ের কোলে গিয়ে চুপটি করে বসে, কিন্তু তার আগে যে আলোর ঢেউটা খেয়ে বাইরে বেরিয়ে গেছিলো, সেটাকে বমি করে বাইরে বার করে দিতেই হয়! কিন্তু বেরিয়েই বা আলোর ঢেউ যায় কোথায়! বিজ্ঞানীরা এমন এক কায়দা করে রেখেছেন যে সে ঢেউ কেবলি ঘুরপাক খায় দুই আয়নার মতো মাইক্রোরেজোনেটরের মাঝে। আর কুয়োটাকেও এমনি ভাবে বসানো মাইক্রোরেজোনেটরের মাঝে যে তার ইলেকট্রনগুলোকে ফের ঐ ঢেউ গিলতে হয়। কাজেই, আবার সেই এক্সাইটন জন্মায়, আবার সে বমি করে আলোর ঢেউ বার করে দেয়, আবার সে ঢেউ এক্সাইটন বানায়! কেবলি যখন এইরকম ঢেউ আর এক্সাইটন একে অন্যকে তৈরী করেই চলে তখন যে অবস্থা হয়, সেটা আধা পদার্থ আধা শক্তি, আধা কণা, আধা ঢেউ! কাজেই তাকে “শক্তিপদ” না বলে আর জো কি! বিজ্ঞানীদের মতে, এটাও একরকমের ছদ্মবেশী কণা, এর নাম পোলারিটন। <br>
যে সব কিম্ভূত স্বভাব এই সব ছদ্মবেশী কণাদের তা একদিনে শুনলে তোমার হাত থেকে টানা ফোনটা পড়ে যেতে পারে, তাই আপাতত বলছি না। </p>
<p dir="ltr">কি বললে? তোমার ভালো নাম শক্তিপদ? এঃ হেঃ, আগে বলতে হয়! শুদুমুদু এতো বকে মরলুম! এই নাও তোমার চিঠি, ঠিকানাটা এটাই তো https://www.google.co.in/url?sa=t&source=web&rct=j&url=https://m.youtube.com/watch%3Fv%3DsWmvZ0IGrsU&ved=0ahUKEwiIodvq74_cAhWDTX0KHeqYCAAQo7QBCCQwAA&usg=AOvVaw1iXQyYV_3Z3HgQgFom3opn</p>
<p dir="ltr">*********<br>
© শ্রুতিসৌরভ বন্দ্যোপাধ্যায়</p>
SHRUTI SAURABHhttp://www.blogger.com/profile/06397705002239295269noreply@blogger.com0tag:blogger.com,1999:blog-4503579633352654506.post-56463239203456524112018-06-27T04:37:00.001-07:002018-06-27T04:37:12.769-07:00পদার্থের জলসাঘরে<p dir="ltr">(বিশ্ববিখ্যাত রসায়নবিদ, নোবেল প্রাপক, শ্রী রোয়াল্ড হফ্ম্যানের লেখা কবিতা “পদার্থের এক অস্বাভাবিক অবস্থা” অবলম্বনে, শ্রী সত্যজিত্ রায় পরিচালিত “জলসাঘর” চলচ্চিত্রের ছায়াবলম্বনে, গুণীজনদের কাছে ক্ষমা চেয়ে এই কবিতা রচনা। মূল ইংরাজি কবিতাটি বিজ্ঞানী হফ্ম্যান রচিত কাব্যগ্রন্থ “দ্য মেটামিক্ট স্টেট” থেকে নেওয়া। কিছু কিছু কেলাস বা ক্রিস্টাল থাকে, যারা, তাদের ভেতরে থাকা প্রাকৃতিক তেজস্ক্রিয় পদার্থের কারণে, আস্তে আস্তে ভেঙে পাউডারে বা গুঁড়োতে পরিণত হয়। এইরকম “হতকেলাস” অবস্থাকে মেটামিক্ট দশা বলে। এটাই কবিতার মূল বিষয়।)</p>
<p dir="ltr">পদার্থের জলসাঘরে</p>
<p dir="ltr">জমিদার বিশ্বম্ভর রায়, একবার জানতে চাইলেন,<br>
“এ গৃহস্বামীর মতো একলা আর কাউকে চিনিস?”<br>
আমি বললাম, “চিনি, হুজুর!<br>
কেরলের সমুদ্রসৈকতে,<br>
কিংবা, উত্তর ক্যারোলিনার কোনো এক নদীর চরায়, একরাশ বালির ভেতরে, একলা, খুব একলা, নিঃসঙ্গ এক খনিজের দেখা পাবেন।<br>
শিলান্তরের পরে, শল্কমোচন হয়ে,<br>
জন্ম নেওয়া এক টুকরো মোনাজাইট!”</p>
<p dir="ltr">“কেন? সে একলা কেন? <br>
তার পেটে এতো পরমাণু, এতো বাঁধন, <br>
তবু সে একা?”</p>
<p dir="ltr">আমি বললাম, “হুজুর, শুরুতে তারো ছিল সাজানো কেলাস, একটা গোছানো ল্যাটিস ছিল,<br>
ওই দেখুন, আপনার মতো জলসাঘর,<br>
ওস্তাদ কত নাচিয়ে---- সিরিয়াম, ল্যান্থানাম,<br>
থোরিয়াম, ইট্রিয়াম,<br>
আর ফসফেটের পরমাণুগুলো!<br>
আসর জমিয়ে নেচে যেতো ওরা, <br>
কোয়ান্টায়িত মূর্চ্ছনার তালে তালে,<br>
স্থবিরা সৌদামিনীর রূপের টানে!<br>
উফ্! সে কি দিন গেছে!<br>
আপনি বোধহয় তখন নীচে নামতেন না,<br>
তাই শোনেন নি, হুজুর!”</p>
<p dir="ltr">হুজুর দীর্ঘশ্বাস ফেললেন! “তারপর, অনন্ত!”</p>
<p dir="ltr">আমি বললাম, “সর্ষের মধ্যে ভূত ছিলো, হুজুর!<br>
থোরিয়াম, সে শুধু নাচতে আসে নি,<br>
প্রকৃতির কাছে সে চেয়েছিল আরো বেশী কিছু!<br>
না, পায় নি!<br>
আর তাই ক্রোধোন্মত্ত থোরিয়ামকে দেখে,<br>
তার পেটের নিউক্লিয়াসটা ভয়ে ফেটে গেছিলো!<br>
থরের হাতুড়ি ঠোকার কি দরকার, হুজুর,<br>
ঝড় যখন ভেতরে উঠেছে?</p>
<p dir="ltr">তারপর ল্যাটিসের এ কোণ থেকে ও কোণ অব্দি,<br>
কাকে যেন খুঁজতে লাগলো, গামা রশ্মি,<br>
নরকের অদৃশ্য সার্চলাইট!<br>
নিউক্লিয়াসের হতভাগা অবশেষটুকু,<br>
আলফা কণার নাম নিয়ে,<br>
বেরিয়ে পড়েছিলো একলা,<br>
অপরিকল্পিত হত্যালীলার মেগাভোল্ট লক্ষ্য নিয়ে!<br>
পিছনে পড়েছিলো, <br>
চরিত্রহত, ভাগ্যহত, আশাহত, <br>
দিশাহীন একদলা পরমাণু!</p>
<p dir="ltr">জলসাঘরের ভেতর দিয়ে ছুটছিলো <br>
কামানের গোলা, পালানোর রাস্তা কোথায়?<br>
আশেপাশের আর কার কী হলো জানি না!<br>
একের পর এক সংঘর্ষে,<br>
সবাইকে ল্যাটিসহারা করে ছাড়লো, হুজুর!”</p>
<p dir="ltr">হুজুর বললেন, “জানি, সে সুদখোরের বেটি!<br>
সব ভেঙে পড়ার শব্দ ওটা, হাতুড়ির গুমগুম নয়!<br>
কিংবা বোমার আওয়াজও নয়।<br>
উঃ! জানলাগুলো দে শিগ্গির,<br>
দূরের, কাছের, সমস্ত নিয়ম, সমস্ত শৃঙ্খল,<br>
যেন ভেঙে পড়ছে, ঝনঝনিয়ে!”</p>
<p dir="ltr">আমি বললাম, “আরো আগে যদি ভাবতেন,<br>
স্বচ্ছ, নির্মল ক্রিস্টালকে, <br>
এইভাবে বাদামী হলুদ গুঁড়োতে মিলাতে হতো না!”</p>
<p dir="ltr">বিশ্বম্ভর রায় বললেন, “দোষ,<br>
ত্রুটি,<br>
শূন্যতা,<br>
উদ্বাস্তুর মতো,<br>
শামুকের মতো, খোলের ভেতর ঢুকিয়ে রাখে,<br>
ওর আর আমার, এই হতকেলাস দশা!<br>
মোনাজাইটকে আমি চিনি, অনন্ত,<br>
একা, একলা মন!”</p>
<p dir="ltr">© শ্রুতিসৌরভ বন্দ্যোপাধ্যায়<br>
</p>
SHRUTI SAURABHhttp://www.blogger.com/profile/06397705002239295269noreply@blogger.com0tag:blogger.com,1999:blog-4503579633352654506.post-84051893747608996812018-06-13T07:15:00.001-07:002018-06-13T07:15:04.467-07:00অষ্টম গর্ভঃ পর্যায় সারণীর অষ্টম পর্যায়<p dir="ltr"> অষ্টম গর্ভ</p>
<p dir="ltr">Will the curtain rise?<br>
Will you open the eighth act?<br>
Claim the center stage?<br>
Elemental haiku<br>
By Mary Soon Lee<br>
(DOI: 10.1126/science.aan2999<br>
Science 357 (6350), 461-463.)</p>
<p dir="ltr">ব্রিটিশ ফিকশন লেখিকার সৃষ্ট ‘হাইকু’টির বঙ্গানুবাদ করলে দাঁড়ায় খানিকটা এরকম,</p>
<p dir="ltr">‘উত্তোলিবে যবনিকা?<br>
উন্মোচিবে অষ্টমাঙ্ক তুমি?<br>
মঞ্চমধ্যখানে, দাঁড়াইবে কি আসি?’</p>
<p dir="ltr">কে এই তুমি? নারী-পুরুষ-উদ্ভিদ-প্রাণী-ভাইরাস-ব্যাকটেরিয়া কেউ নয়! সে এক জড়, বলা ভালো মৌলিক পদার্থ, এমন মৌল যা এখনো জন্মায় নি! </p>
<p dir="ltr">এলিমেন্ট নাম্বার একশো উনিশ। যাকে তৈরী করতে বিশ্বের তাবত্ মানুষ-ব্রম্ভার দল নেমে পড়েছে কোমর বেঁধে--জার্মানিতে, রাশিয়ায়, জাপানে, এবং হয়তো লোকচক্ষুর অন্তরালে আরো কোথাও। কিন্তু কেন? কিসের কৃতিত্ব আছে এই মৌল আবিষ্কারের মধ্যে? আসলে মানুষ চায় তার কৌতূহলের নিরসন করতে, এর আগের একশো আঠারো খানা মৌল আবিষ্কারের (এবং সৃষ্টির) পরে আরো এগোনো যায় কি না, বাড়ানো যায় কি না পর্যায় সারণীর সীমানা! সে আবার কি? </p>
<p dir="ltr">কাট টু 1869 সাল। পঁয়ষট্টিটা তাসের কার্ডে পঁয়ষট্টি রকমের মৌল আর তাদের চরিত্র সংক্ষেপে লিখে, রাতের পর রাত জেগে, পঁয়ত্রিশ বছরের এক রাশিয়ান যুবক মিল খুঁজে চলেছেন তাদের মধ্যে। এমন ভাবে সাজাতে হবে যেন শপিং মলের বিভিন্ন তলার বিভিন্ন ডিপার্টমেন্টের মতো থাকে তারা। যেভাবে দোতলায় জিন্সের সেকশনে জিন্স ই থাকে, ডিটারজেন্ট বা বিস্কুট থাকে না, এক্কেবারে সেরকম! যা করতে আগেও অনেকে চেষ্টা করেছেন, কিন্তু পঁয়ষট্টিটা মৌল নিয়ে সামলাতে পারেন নি। </p>
<p dir="ltr">শপিং মলের জিনিসকে তো দেখা যায়, চরিত্রগত ভাবে তারা আলাদা তা বোঝা যায়, ছোঁয়া যায়। মৌলের ভৌত আর রাসায়নিক চরিত্র কে বলে দেবে? কেন? মৌল যা দিয়ে তৈরী তা দিয়ে। এক এক মৌল এক এক রকমের পরমাণু দিয়ে তৈরী। তাই পরমাণুর কোনো বৈশিষ্ট্য দিয়ে মৌলগুলোকে আলাদা করতে হবে। রাশিয়ার রসায়নবিদ দিমিত্রি মেন্ডেলিভ এরকম যে বৈশিষ্ট্য বেছে নিলেন সেটার নাম ‘পারমাণবিক গুরুত্ব’। সাদা বাংলায়, দাঁড়িপাল্লায় একপিস হাইড্রোজেন পরমাণুকে বাটখারা হিসেবে চাপিয়ে অন্য পরমাণু একপিস তার তুলনায় কত ভারি সেটার মাপ। আর সেই পারমাণবিক গুরুত্বের নিরিখে সাজাতে হবে মৌল গুলোকে। পেতে হবে একটা ছক। সুবিধা হবে ঠিক যেরকম সুবিধা শপিং মলের বিক্রেতা পেয়ে থাকেন, ছকে মৌলের অবস্থান জানলেই কেল্লাফতে! মৌল সম্বন্ধে যাবতীয় তথ্য হাতের মুঠোয়। সেই লক্ষ্যে দিন রাত এক করে অনেক দেশেই খাটছিলেন বিজ্ঞানীর দল। </p>
<p dir="ltr">কি যেন প্যাটার্ন সামনে আসছে, অথচ লিখে ফেলা যাচ্ছে না এমন যাচ্ছেতাই অবস্থা! অবশেষে হাড়ভাঙা খাটনির শেষে স্বপ্নের ঘোরে মেন্ডেলিভ একদিন এক ছক দেখলেন, জনশ্রুতি তাই বলে, আর দেখামাত্র চোখটোখ খুলে স্যাটাস্যাট লিখে ফেললেন একটা প্যাটার্ন, টেবিলের মতো, মানে পায়া ছাড়া টেবিল অবশ্যই। সে টেবিলের উপরে চৌকো চৌকো কতগুলো খোপ কাটা, আড়াআড়ি আর লম্বালম্বি। 1869 সালের 6 মার্চ মেন্ডেলিভ প্রকাশ করে ফেললেন ক্রমবর্ধমান পারমাণবিক গুরুত্ব অনুযায়ী মৌলের পর্যায় সারণী বা Periodic Table, যা বাকি সবার প্রকাশিত টেবিলাকার ছককে জনপ্রিয়তায় ছাপিয়ে গেল, মূলতঃ দুটো কারণে। প্রথমতঃ, মেন্ডেলিভ ছকের বেশ কিছু স্থান ছেড়ে রেখে করলেন ভবিষ্যত্ বাণীঃ “এইসব মৌল এখনো মানুষ আবিষ্কার করতে পারে নি বটে, কিন্তু আবিষ্কার হলে দেখা যাবে এদের ভৌত আর রাসায়নিক ধর্ম এই এই এই।” আর দ্বিতীয়তঃ, বাকি সবার মতো পারমাণবিক গুরুত্বকে বেশী গুরুত্ব না দিয়ে মাঝে মাঝে ধর্মগুলো মিলিয়ে মৌলগুলোকে সাজিয়ে দেয়া। ব্যস, জিনিয়াসের ‘জাদু’ আর ভবিষ্যত্ বাণী কে না পছন্দ করে। তাই মার্কেটে রীতিমতো হিট হয়ে গেল মেন্ডেলিভের জিনিয়াস পর্যায় সারণী। কালক্রমে আড়াআড়ি লাইনগুলোর নাম হল পর্যায় বা পিরিয়ড, আর লম্বালম্বি লাইনগুলোর নাম গ্রুপ বা শ্রেণী। শ্রেণীর মৌলগুলো যেন সবাই দোকানের তাকে রাখা জিন্সের প্যান্ট, কোমরের মাপ পরপর বেড়ে গেছে বটে তবু জিনিসগুলো জিন্স বটে। আর পাশাপাশি রাখা মৌলগুলো যেন জিন্সের প্যান্টের পরে কটনের প্যান্ট, তারপর সিন্থেটিকের জামা, এইরকম বিভিন্ন ধর্মওয়ালা মৌল। আর এইভাবে গোটা ছকটা হলো প্রাচীন কি আধুনিক সকল রসায়নবিদের কাছে একটা মহাভারত! “যে মৌল নাই এ টেবিলে, তা নাই বিশ্বে!” আর ঠিক একবছর পরে 2019 সালে বিশ্বজুড়ে় পালিত হতে চলেছে সে আবিষ্কারের দেড়শো বছর।</p>
<p dir="ltr">ফ্ল্যাশব্যাক, বিংশ শতকের শুরু। বিজ্ঞান কিন্তু থেমে থাকছিল না। মৌল আবিষ্কার এগিয়ে চলেছিলো পদার্থবিদ্যা, গণিত আর রসায়নে নিত্যনূতন আবিষ্কারের মতোই। সোজা কথায়, ছক বেড়ে চলেছিল দৈর্ঘ্যে ও প্রস্থে। গোলমাল আর বিতর্ক পর্যায় সারণী তৈরীর আদিকাল থেকে পিছু ছাড়ে নি! 1911 সালে আর্নেস্ট রাদারফোর্ডের পরীক্ষায় জানা গেল পরমাণুর ভেতরে থাকে পজিটিভ চার্জওয়ালা নিউক্লিয়াস, আর কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ যে বছর নোবেল পেলেন সে 1913 সালে হেনরী মোজলে পরীক্ষা করে প্রমাণ করে দিলেন, নিউক্লিয়াসের চার্জ হলো মৌলগুলোর একটা নিজস্ব চরিত্র। তাই সিদ্ধান্ত হলো ‘পারমাণবিক গুরুত্ব’ এর বদলে পারমাণবিক নিউক্লিয় চার্জ অনুসারে সাজানো হোক পর্যায় সারণী। পরে জানা যাবে, নিউক্লিয়াসের চার্জের কারণ প্রোটন কণা, আর সবশেষে মানুষের ধারণা হবে, পরমাণুর কেন্দ্রের প্রোটন কণার সংখ্যাই খেলছে আসল খেলা, যে সংখ্যা পাল্টে গেলে মৌল যায় পাল্টে। এর নাম পারমাণবিক সংখ্যা। এই সংখ্যার ভিত্তিতে যখন সাজানো হলো সারণী, তখন অনেক পুরোনো দ্বন্দের নিষ্পত্তি হয়ে গেল। </p>
<p dir="ltr">এইরকম 1869 সালে মেন্ডেলিভের পর্যায় সারণী প্রকাশের পরে অন্ততঃ সাতশো বার সংস্কার হয়েছে তার বিভিন্ন রূপে! সে ইতিহাস সংক্ষেপে লিখতে গেলেও খাতার পাতার সেলুলোজ ভেঙে গ্লুকোজ হয়ে যাবে! দীর্ঘ পর্যায় সারণীর যে সংস্করণ আজ একজন মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী পড়ে, তার মোট পর্যায় সাতটা, শ্রেণী আঠারোটা। এই ছকে এক, দুই থেকে শুরু করে মোট খোপ আছে একশো আঠারোটা। তার মধ্যে প্রাকৃতিক মৌল যেমন আছে, তেমনি আছে মানুষের ল্যাবরেটরিতে তৈরী কৃত্রিম মৌল। মৌলদের এই সুবিশাল চিড়িয়াখানায়, 2016 সালে সর্বশেষ এন্ট্রি চারটে মৌল-- 113 নং নাইহোনিয়াম, 115 নং মস্কোভিয়াম, 117 নং টেনেসিন, 118 নং ওগানেসন। বলা বাহুল্য এরা প্রত্যেকেই কৃত্রিম। বাকি মৌলগুলো এর আগেই আবিষ্কার হয়ে গেছিলো। একশো আঠারোতম মৌল, ওগানেসন, আবিষ্কারের পরে সবকটা খোপ পূর্ণ হলো পর্যায়সারণীর। সাতপর্যায়ওয়ালা সারণী দি এন্ড! এরপরে আরেকপিস নূতন মৌল আবিষ্কার মানে সারণীতে অষ্টম পর্যায়ের সংস্থান করা, দেড়শো বছরের প্রাচীন ঐতিহ্যের গায়ে খোদাই করে কংক্রিটের নূতন ইমারত দাঁড় করানো। আর তাই মেরি সুন্ লি তাঁর হাইকুতে তুলে ধরেন প্রশ্ন, এই ‘মৌলিক’ নাটকের অষ্টম অংক সত্যিই হবে কি না! </p>
<p dir="ltr">পর্যায় সারণীর অষ্টম গর্ভে যে মৌলের পরমাণু জন্মাবে, তাকে কি সত্যিই পরমাণু বলা যাবে? কেমনই বা হবে সেই অষ্টম গর্ভের মৌলটার রসায়ন? </p>
<p dir="ltr">এখনো পর্যন্ত জানা গেছে যে প্রকৃতিতে এক থেকে আটানব্বইখানা প্রোটনওয়ালা পরমাণু বর্তমান। শেষেরগুলো অতি কম পরিমাণে হলেও প্রাকৃতিক মৌল হিসেবে পাওয়া গেছে। এরপরের নিরানব্বই থেকে একশো আঠারোটা প্রোটন গুঁজে পরমাণু তৈরী করার কৃতিত্ব কেবল মানুষ-ব্রম্ভাদের! এইখানে জানিয়ে রাখা যাক যে পরমাণুর নিউক্লিয়াসে কেবল প্রোটন বাবাজী থাকেন না, কেবলানন্দের মত উপস্থিত--নিস্তড়িত্ ভারী কণা নিউট্রন (একমাত্র ব্যতিক্রম সাধারণ হাইড্রোজেনের পরমাণু যাতে কেবল একটাই প্রোটন নিউক্লিয়াস তৈরী করে)। ডাকার সুবিধার জন্য এদের একসাথে নিউক্লিয়ন বলতে পারি। নিউক্লিয়নগুলোকে একজায়গায় ধরে রেখেছে নিউক্লীয় বল। না হলে পজিটিভ চার্জওয়ালা প্রোটন নিজেদের মধ্যে গুঁতো আর ঠ্যালা মেরে ছিটকে যেত চতুর্দিকে! নিউক্লিয়াস বলে আর কিছু থাকতো না! মুশকিল হয় যখন নিউক্লীয় পরিবারে মেম্বার মানে নিউক্লিয়ন বাড়তে বাড়তে দুশো আট নয় পেরিয়ে যায়! ওইটুকুনি জায়গায় কি আর এতো নিউক্লিয়নের পাত পেড়ে খাওয়া দাওয়া হয় বাবা! তাই অনেকেই তেজ দেখিয়ে বেরিয়ে যায়। ভাঙন ধরে ফ্যামিলিতে! এই ঘটনার নাম স্বাভাবিক তেজস্ক্রিয়তা আর মৌলগুলোকে আমরা বলি প্রাকৃতিক তেজস্ক্রিয় মৌল। (অবিশ্যি মানুষ নিজের প্রয়োজনে সময়ে অসময়ে শান্তশিষ্ট নিউক্লীয় পরিবারকেও খুঁচিয়ে ঘা করে তেজস্ক্রিয় করেছে, সেটা আলাদা ব্যাপার।) এইরকম ভাঙন আর তেজের ঠ্যালায়, সম্ভবতঃ, নিরানব্বই নম্বর মৌল আইনস্টাইনিয়াম, যাতে 254 খানা নিউক্লিয়ন থাকে, তার সময় থেকে প্রকৃতি হাল ছেড়ে দিয়েছিল! এবার একা মানুষের পালা মৌল তৈরী করার। </p>
<p dir="ltr">নক্ষত্রের নকল করে সে চালালো এক্সপেরিমেন্ট। সাদা বাংলায়, কুড়ি থেকে তিরিশ প্রোটনয়ালা হালকা হালকা পরমাণু নিয়ে চাপে তাপে গুঁজে দাও সত্তর থেকে আশি প্রোটনয়ালা পরমাণুর পেটে! নতুন পরমাণুটার প্রোটন সংখ্যা তাহলে একশোর কাছাকাছি হবে, ব্যস, প্রকৃতি যা পারে নি তা মানুষ পারবে। কিন্তু গুঁজতে গিয়েই সমস্যা! ভারী পরমাণুর গায়ে তুমি গুঁজবে হালকা পরমাণু আর তারা তোমার ইশারায় বসে থাকবে? কভি নেহি, ওরা ছুটে বেড়াবে দিগ্বিদিক কণা ছোটানোর মেশিনে আর বিজ্ঞানীকে আশায় আশায় থাকতে হবে কখন ওদের লাগবে ধাক্কা, আর মিশে যাবে ওরা, একটা নূতন পরমাণুর জন্ম হবে! </p>
<p dir="ltr">ঠিক এইভাবে কয়েকশো কোটির মধ্যে মাত্র একটা সংঘর্ষে একপিস নূতন সুপার হেভি বা অতি ভারী পরমাণু সৃষ্টি হয়েছে, কণা ছোটানোর মস্ত মস্ত ইয়াব্বড়ো যন্ত্রে! হ্যাঁ, তারা তো তেজস্ক্রিয় বটেই। যে সময়কালে একতাল সুপার হেভি পরমাণুদের মধ্যে পঞ্চাশ শতাংশ পরমাণু ভেঙে যায় সেটা প্রায় এক দিন বা কয়েক মিনিট অথবা মাত্র কয়েক মিলিসেকেন্ড হতে পারে! আসলে মানুষে ঠেসে দিয়েছে, প্রোটন আর নিউট্রনগুলো শুনবে কেন? নিউক্লীয় বন্ধন শক্তি চাইবে নিউক্লিয়নগুলোকে আটকে রাখতে পিন্ডের মধ্যে আর প্রোটনগুলোর ভেতরে কুলম্বীয় ঠেলাঠেলি চাইবে ওদের মুক্ত করে দিতে। এইবার জোর করে যেটুকু সময়ের জন্য পরীক্ষার হলে আটকে রাখা যায় আর কী! তা করতে গিয়ে একশো তেরো প্রোটনের পর থেকে তৈরী হয়েছে একরকম বিতিগিচ্ছিরি পরিস্থিতি! পরমাণু ভুগতে শুরু করেছে কুলম্বীয় হতাশায়! পরমাণুর সুগঠিত শরীর বেঁকাচোরা হতে শুরু করেছে। দুই বিপরীতমুখী বলের টানাটানিতে পরমাণুর গায়ে হয়েছে ফুসকুড়ি, চামড়া গেছে ফেটে!</p>
<p dir="ltr">তাহলে এই অবস্থায় কদ্দুর ঠাসা যাবে প্রোটন? ডিরাক-ফকের তাত্ত্বিক হিসেব বলছে, সংখ্যাটা একশো বাহাত্তর হতে পারে! মিশিগান স্টেট বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিদ্ উইটোল্ড নাজারুয়িক(https://doi.org/10.1038/s41567-018-0163-3) অবশ্য অতোদূর নিয়ে ভাবেন নি। একশো আঠারো নাম্বার মৌল ওগানেসনেই তিনি যে পরিমাণ কুলম্বীয় হতাশা দেখেছেন সম্প্রতি জুন 2018 তে, তাতে করে একশো উনিশ নাম্বার মৌলটাতে ‘পরমাণু’ বলে আদৌ কিছু থাকবে না কি কে জানে! এসব পরমাণু, যাদের ভেতরে গাদা গাদা নিউক্লিয়ন, যারা কয়েক মিলিসেকেন্ডও বাঁচে না, ভেঙে টেঙে ছেছেত্তরা হয়ে যায়, তারা কি সত্যিই পরমাণু নামে ডাকার যোগ্য! </p>
<p dir="ltr">তাহলে পরমাণুর সংজ্ঞা কি হবে? বিজ্ঞানীদের মতে, একটা পরমাণুকে তখনই পরমাণু বলে ধরা হবে যখন তার কোন নিউক্লিয়াসের অায়ু (টেকনিক্যালি, অর্ধায়ু) এক সেকেন্ডের দশলক্ষ কোটিভাগের একভাগের (দশ টু দি পাওয়ার মাইনাস চোদ্দো) বেশী হবে, আর তার অস্তিত্বের পরীক্ষামূলক, সন্দেহাতীত প্রদর্শন করা যাবে! বলা বাহুল্য, এখনো অব্দি এক থেকে একশো আঠারো নাম্বার প্রতিটা মৌলের পরমাণুই এই টেস্ট উতরে গেছে। এই সময়কালটা গুরুত্বপূর্ণ এই কারণে যে মোটামুটি এই সময়ের মধ্যে কোন নিউক্লিয়াস, তার চারপাশের ইলেকট্রনগুলোকে ধরে, একখানা পরমাণু খাড়া করতে পারে! যদি তা না পারে তাহলে তো মৌলটার রসায়ন টসায়ন কিছুই জানা গেলো না! সে পরমাণুকে আর পরমাণু টরমাণু বলে ডাকা যাবে কি? </p>
<p dir="ltr">এলিমেন্ট নাম্বার একশো উনিশ, পর্যায় সারণীর অষ্টম গর্ভের প্রথম মৌল, তাই আবিষ্কারের আগেই ভাবাচ্ছে বিশ্বের তাবড় তাবড় বিজ্ঞানীদের। এর জেরে পদার্থবিদ্যা বা রসায়নের মৌলিক ধারণাতেই আঘাত নেমে আসবে কি না সেটাও প্রশ্ন লাখ টাকার!</p>
<p dir="ltr">জনশ্রুতি, দিমিত্রি মেন্ডেলিভকে এক ইন্টারভিউতে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল, What’s your favourite element in Periodic Table? <br>
--Surprise! বলেছিলেন মেন্ডেলিভ। </p>
<p dir="ltr">প্রায় দেড়শো বছর পূর্তি হতে চলেছে সে আবিষ্কারের, সেই সারপ্রাইজ এখনো বোধহয় ফুরোয় নি।</p>
<p dir="ltr">© শ্রুতিসৌরভ বন্দ্যোপাধ্যায়<br>
</p>
SHRUTI SAURABHhttp://www.blogger.com/profile/06397705002239295269noreply@blogger.com0tag:blogger.com,1999:blog-4503579633352654506.post-18129464781478228932018-06-09T09:32:00.001-07:002018-06-09T09:32:47.527-07:00মুক্তির দামঃ চতুর্থ তথা অন্তিম পর্ব<p dir="ltr">ফেরাম সাম্রাজ্য, ---- মানুষরা যাদের বিশুদ্ধ লোহার ধাতু বলে জানে, তার ভেতরে কিলবিলোচ্ছে মুক্ত লৌহ-ইলেকট্রনের দল। লোহার মতো কঠিন মন বলে ফেরাস বা ফেরিক আয়নদের দাপটে ইলেকট্রনগুলো বেশী চালিয়াতি মারতে পারে না বটে, তবে মনে রাখতে হবে, ইলুদের মতো সুযোগ-সন্ধানী জাতকণা আর দ্বিতীয়টি নেই। আর ঠিক সেই কারণেই, আমি যখন ব্যাটারির নেগেটিভ প্রান্তটা লোহার পেরেকে ঠেকিয়েছিলাম, লৌহ-ইলেকট্রনরা চেঁচিয়ে উঠেছিলো বীভত্স উল্লাসে! </p>
<p dir="ltr">এমনি যদি লোহার পেরেক, ব্যাটারি বা তামার পাত ছাড়া, ডোবানো থাকতো কপার সালফেটের জলীয় দ্রবণে তাহলে ফেরাস আয়নরা পেরেকের ইলেকট্রনদের মোটে গ্রাহ্য না করে জলে ঝাঁপিয়ে পড়তো, ইলুর দল কাঁদতো, তাদের সে কান্না দেখে কিউপ্রিকের দল যেই না জল থেকে মাথা বাড়িয়ে জিগ্গেস করতো ‘কাঁদো কেন, খোকারা?” ব্যস আর দেখতে হতো না, কপ্ করে গিলে নিত তাদের লৌহ-ইলেকট্রনেরা! লোহার পেরেকে লেগে থাকতো কিউপ্রিকদের বিজারিত দেহাংশের বাদামী দাগ!</p>
<p dir="ltr">আজো ঠিক সেটাই ঘটছিলো, তবে অন্যভাবে। নেগেটিভ লোহার পেরেকে আজ বেড়ে গেছে ইলেকট্রনের দল! বুক ঠুকে আজ তারা বজ্রনির্ঘোষ করছে। ফেরাস বা ফেরিক আজ আর রক্ষে পাবে না, মুক্ত হতে দেবে না কোন পজিটিভ আয়নকে পেরেক থেকে! শুধু তাই নয়, টান মারবে দ্রবণের পজিটিভ কিউপ্রিক আয়নদেরও। </p>
<p dir="ltr">তামার ধাতব কারাগার থেকে মুক্ত হয়ে যে খুশীতে ছিলো কিউপ্রিকদের দল, সেই খুশী ইতোমধ্যে বদলে গেছে আতঙ্কে। কিসের টানে তারা মুক্তি লাভ করেছে তামার পাত থেকে সেটা এবার প্রোটনে প্রোটনে টের পাচ্ছে! বুড়ো কিউপ্রিক ঠিক বলেছিল বটে, মুক্তির তাহলে দাম দিতে হয়!</p>
<p dir="ltr">তারপর আর কী! সৃষ্টিকর্তা হিসেবে আমার আর কিছু করার ছিলো না। দ্রবণের ভেতর দিয়ে একের পর এক কিউপ্রিক আয়ন লেমুরের মতো এগিয়ে গেছে ক্যাথোড অর্থাত্ নেগেটিভ তড়িতের রাজ্যের সিংহদুয়ারের দিকে। সৃষ্টির আদিকাল থেকে বিপরীতের মধ্যে আকর্ষণ চলে আসছে। যেমন চুম্বকের উত্তর দক্ষিণ, তেমনি পুরুষ মহিলা, তেমনি পজিটিভ নেগেটিভ আয়ন বা চার্জ! তারপর যা হয়, কিউপ্রিক বীরের দল ত্যাগ করতে বাধ্য হয়েছে নিজেদের পজিটিভত্ব, তামার ইলুদের কবল থেকে মুক্তি পাওয়ার পরে লোহার ইলুদের খপ্পরে পড়েছিলো। </p>
<p dir="ltr">শেষ পর্যন্ত দেখিনি, তবু আমার দেখা শেষ কিউপ্রিক আয়নটা লোহার পেরেকের গায়ে ঠোক্কর খেয়ে বিজারিত হতে হতে বলে গেল, “দেখলেন তো ভগবান শ্রী চলমান পাহাড়, মুক্তির ফাঁদ ছিলো এটা, আপনি জানতেন, তবু বলেন নি, মুক্তি পাওয়ার পর সে মুক্তির দাম দিতে হয়। ইলুর দল সেই ফিরে এলো, অন্য দলের চিহ্ন নিয়ে। কি করবো আমরা! কতবার স্বাধীন হবো ভগবান, পরাধীন হবার জন্য!”</p>
<p dir="ltr">লোহার পেরেকের যে অংশটা কপার সালফেট সলিউশনে ডুবে ছিলো, সেখানটা বিজারিত কিউপ্রিক আয়নদের বর্ণে বাদামী হয়ে গেছিলো। কোটিং পড়েছিলো ধাতব তামার, পূর্বজন্মে যারা ছিল বীর স্বাধীন কিউপ্রিক। লৌহগারদের উপরে থাকা সেই ধাতব তামার ভেতর থেকে ধ্বনিত হলো-</p>
<p dir="ltr">“আমার মুক্তি সর্বজড়ের মনের মাঝে, <br>
জারণ বিজারণ তুচ্ছ করা কঠিন কাজে”</p>
<p dir="ltr">না, এইসব গাঁজাখুরি তড়িত্লেপনীয় দর্শনের কথা সোহিনী কেন, কোন ক্লাসের কারুর কাছে আর ফাঁস করিনি, এই জানালাম আপনাদের, আশা করি এ জিনিস অভিভাবকীয় কর্ণকুহরে যাবে না, নয়তো কোমলমতি ছাত্রছাত্রীদের মস্তিষ্ক চর্বণের অভিযোগে আমার বিজারণ অবশ্যম্ভাবী।<br>
                          <br>
              *****বিজ্ঞান সমাপ্ত হয়না*****<br>
©শ্রুতিসৌরভ বন্দ্যোপাধ্যায়</p>
SHRUTI SAURABHhttp://www.blogger.com/profile/06397705002239295269noreply@blogger.com0tag:blogger.com,1999:blog-4503579633352654506.post-22661297204258979112018-06-09T02:08:00.001-07:002018-06-09T02:08:31.460-07:00মুক্তির দামঃ তৃতীয় পর্ব<p dir="ltr"> মুক্তির দামঃ তৃতীয় পর্ব</p>
<p dir="ltr">“স্বাধীনতা আমাদের জন্মগত অধিকার, দ্রবণে সাঁতার কাটা আমরা অর্জন করবোই, বন্ধুরা। ইলেকট্রনের দল পালাচ্ছে! টান পড়েছে আজ ওদের শক্তিতে। এই তো সময়! বেরিয়ে পড়ো আমার স্নেহের ভাইবোনেরা ও বিষণ্ন হতাশ কিউপ্রিকের বীর যোদ্ধারা! গলিয়ে দাও এই তাম্রকপাট!” ভাঙন লেগেছিলো তামার অ্যানোডে, পজিটিভ তড়িত্ যার উপরে ভর করেছিলো আমার ব্যাটারির দাক্ষিণ্যে, আর সেই হট্টমেলায় দাঁড়িয়ে কিউপ্রিক জাতিকে উদ্বুদ্ধ করছিলো ভেতরের সারিতে থাকা একটা কিউপ্রিক আয়ন।</p>
<p dir="ltr">তামার পাতের যে অংশটা এখনো অব্দি কপার সালফেট দ্রবণে ডোবে নি, সেইখান থেকে চেঁচিয়ে বললো এক বুড়ো কিউপ্রিক, “নীল রঙে ডুবে আছো, তাই অমন কথা বলতে পারছো, আমাদের মতো শুকনো থাকতে তো বুঝতে এদিককার অবস্থা। তোমরা কি ভাবছো, ইলুরা ফিরে আসবে না? একই শয়তান ইলু ফিরে আসবে, তবে তাম্রনীতি নয় অন্য কোন নীতির দলে ভিড়ে, ওরা আসবেই মূর্খের দল! স্বাধীনতার এ চেষ্টা বৃথা।” </p>
<p dir="ltr">“বৃথা ভয় পাচ্ছো খুড়ো, যখন স্বাধীনতার স্বাদ পাবে, মুক্ত মনে দ্রবণে সাঁতার কাটবে, তখন তোমার ভয় ভাঙবে, যেমন দক্ষিণ সাগরে পাঁচিল ভাঙছে আর গলছে!”</p>
<p dir="ltr">“না না, দাসত্ব আমাদের নিউক্লিয়াসে, তোমরা কি ভাবো, এই মুক্তির কোন দাম নেই? মুক্তি বলে কিছু হয় না! জীবনে এতবার জারিত আর বিজারিত হলাম, আর নড়তে চড়তে মন চায় না।” কিউপ্রিকদের বয়স বাড়ে না বা কমে না, তবুও আমার মনে হল এই আয়নটা বোধহয় বুড়ো, সেই সব বুড়োর মত যারা পরিবর্তিত হতে ভয় পায়, পরিবর্তনের পরেও যে পরিবর্তন হওয়াই জগতের নিয়ম তা ভুলে যায়!</p>
<p dir="ltr">আমি যেন সঞ্জয় হয়ে গেছি! মহাভারতের সঞ্জয় টেলিভিসনের মতো বর পেয়েছিলো, আমাকে আমার পুঁচকে ছাত্রী মাইক্রো, ন্যানো কিংবা ফেমটোভিসনের কৌশল শিখিয়ে দিয়ে গেলো! আজ কে শিক্ষক, কে ছাত্র সব গুলিয়ে যাচ্ছে। স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছি, তামার পাতের নীচ থেকে হৈ চৈ করতে করতে কিউপ্রিক আয়ন বেরোচ্ছে, চার্জে চার্জে তাদের যুদ্ধজয়ের আনন্দ, স্বাধীনতার আনন্দ।</p>
<p dir="ltr">কিন্তু আমার প্রতি কৃতজ্ঞতা কই? ওরা কি ভাবছে, এই যে ইলেকট্রনদের হাত থেকে মুক্ত হয়ে কপার সালফেটের জলীয় দ্রবণে স্বাধীনভাবে ঘুরে বেড়াচ্ছে ওরা, সে কি ওদের নিজেদের লড়াইয়ের গুণে শুধু? ওরা প্রার্থনা করলো বলেই তো আমি ব্যাটারির পজিটিভ প্রান্তটা লাগিয়ে দিলাম ওদের দেশের গায়ে। আজ যখন ওরা মুক্ত হলো, একটুও ধন্যবাদ দেবে না ওরা আমাকে?</p>
<p dir="ltr">তারপর ভাবলাম, ছিঃ! ভগবানের রাগ করা সাজে না। দেখাই যাক, শেষ অব্দি কি হয়?</p>
<p dir="ltr">এইভাবে ইলেকট্রনগুলোকে পেছনে ফেলে রেখে কিউপ্রিকের দল একটু একটু করে মিশে যাচ্ছিলো দ্রবণের লক্ষ কোটি কিউপ্রিক অণুর সাথে। কালীঠাকুরের মতো চতুষ্তলকীয় সালফেট আয়নের দল ভয়ঙ্কর দৃষ্টি দিচ্ছিলো ওদের দিকে, একটু এদিক ওদিক হলেই ক্রিস্টালের জালে বেঁধে চুষবে ওদের চার্জ! ভাগ্যে জলের অণুসেনারা ছিলো, ব্ল্যাকক্যাটের মতো ছয়জনা মিলে পাহারা দিচ্ছিলো সাঁতার কাটতে থাকা প্রতিটা কিউপ্রিক আয়নকে। </p>
<p dir="ltr">পেছনে নীল সমুদ্রে টাইটানিকের মত ডুবতে ডুবতে গলছিলো বাদামী তামার অ্যানোড। সে এক দৃশ্য বটে! </p>
<p dir="ltr">এমনি সময় ঘটলো সেই নিশ্চিত বিপর্যয়টা! লক্ষ কোটি আর্ত চিত্কার বেরিয়ে এলো সেই জলীয় দ্রবণের ভেতর থেকে, “বাঁচাও, বাঁচাও”, “সামনে কারেন্ট, টানছে”, “ভাইসব, সামনে বিপদ, আর এগোবেন না”, “ফিরে চলো সবাই, হো কিউপ্রিক”, “ওরে তোর মাকে টেনে নিয়ে গেলো রে, ওরে আমার কি হবে রে”, এইরকম অজস্র শব্দে আমি নিঃশ্বাস বন্ধ করে তাকিয়ে থাকলাম, ক্যাথোড মানে লোহার পেরেকটার দিকে। কারা যেন হাসছে ওর গায়ে বসে!<br>
(ক্রমশঃ)...</p>
<p dir="ltr">©শ্রুতিসৌরভ বন্দ্যোপাধ্যায়</p>
SHRUTI SAURABHhttp://www.blogger.com/profile/06397705002239295269noreply@blogger.com0tag:blogger.com,1999:blog-4503579633352654506.post-51826577785110887002018-06-07T21:28:00.001-07:002018-06-07T21:30:18.111-07:00মুক্তির দাম: দ্বিতীয় পর্ব <p dir="ltr">               মুক্তির দাম: দ্বিতীয় পর্ব </p>
<p dir="ltr">সোহিনী যখন আমাকে কিউপ্রিকদের উপর ইলুদের মানে ইলেকট্রনের অত্যাচারের কথাটা বলেছিলো তখন আমি খুব হেসেছিলাম। আমার ক্লাস এইটের ছাত্রীটি পড়ার সময় পড়ার এতো গভীরে ঢুকে যেত যে পরমাণু, অণু বা আয়নদের কথা শুনতে পাবার দাবী করতো। অবশ্য ক্লাসের মধ্যে ওই কথাগুলো ও আমায় জানাতো না, জানাতো মিড ডে মিল খাবার সময় কিংবা ছুটির পরে আলাদা করে। তামার তারে কান পেতে শুনতো ও ইলেকট্রনরা কি বলে! আমায় শোনাতে গিয়ে কতবার যে ধমক খেয়েছিলো তার ইয়ত্তা নেই। </p>
<p dir="ltr">আসলে সেদিন ওদের বুঝিয়েছিলাম ধাতুর ভেতরে ইলেকট্রনরা কেমন মুক্ত ভাবে চলাচল করে, তারা ইলেকট্রনের একটা সমুদ্র তৈরী করে যাতে ধাতব আয়নগুলো থাকে ভেসে। এর পরে কোনদিন তড়িত্ বিশ্লেষ্য আর ধাতব পরিবাহীর মধ্যে তফাত্ বুঝিয়েছিলাম। শেষে এই সব বলে তামার পাত আর লোহার পেরেক দিয়ে কপার সালফেট দ্রবণের তড়িত্ বিশ্লেষণ দেখানোর কথা ছিলো আমার। সোহিনী কিন্তু চোখ গোল গোল করে সব শুনলো আর বললো, স্যার বিশ্বাস করেন আর নাই করেন, ওরা খুব ছটফট করছে।</p>
<p dir="ltr">আমি বললাম, কারা রে?</p>
<p dir="ltr">ও বললো, ওই যে আপনি কপার পাতটাকে নীল রঙের কপার সালফেটের জলীয় দ্রবণে চোবালেন, ওতে ওই পাতের কিউপ্রিক আয়ন গুলো ভাবলো, নীল বৃষ্টি হচ্ছে, আর বাইরের ছুটন্ত কিউপ্রিক আয়নদের ভিড়ে ভেতরের আয়নগুলো বেরবে বলে ছটফট করছে! </p>
<p dir="ltr">আমি হাসলাম, ‘তো বেরতে পারছে না কেন?’</p>
<p dir="ltr">ও বললো, ‘পাজী ইলেকট্রনগুলোর জন্য, ওরা ওদের বেরতে দেয় না’</p>
<p dir="ltr">আমি ওকে বললাম, ‘বেশী কার্টুন দেখিস না, যা ভলিবল খেলগে যা!’</p>
<p dir="ltr">সোহিনী বললো, ‘আপনি একটু কম শব্দ হওয়া জায়গাতে নিয়ে যান, ওরা আপনার সাথে কথা বলবে, দেখবেন!’</p>
<p dir="ltr">আমি ছুটির পর ল্যাবে বসে ভাবছিলাম, মেয়েটা কি সুন্দর কল্পনা করে, আর ভোল্টামিটার, যাতে তড়িত্ বিশ্লেষণটা দেখাচ্ছিলাম, তাতে হাত দিয়ে দেখলাম। তামার একটা পাতলা পাত কপার সালফেটের নীল জলীয় দ্রবণে ডুবিয়ে রেখেছি, আর ভাবছি কিউপ্রিক আয়নগুলো কি সত্যি ছটফট করছে! ভাবতে ভাবতে কখন ঘুমিয়ে পড়েছিলাম ওখানেই তা জানি না। </p>
<p dir="ltr">ঘুম ভাঙলো কিছু একটা শব্দে, যেন অনেক লোক চেঁচাচ্ছে, কাকে যেন সবাই এক সাথে ডাকছে। ভালোভাবে শুনে মনে হলো পরিত্রাহী চিত্কার, “হে চলমান পাহাড়, হে ইলুদের মালিক, আমাদের উদ্ধার করো, মুক্ত করো।  আমরা তোমার শরণাপন্ন।”</p>
<p dir="ltr">আর ঠিক এর পরেই বিদ্যুত্চমকের মতো কিছু একটা ঢুকে স্নায়ুগুলো আমার নিয়ন্ত্রণ করতে লেগেছিলো! আমি স্পষ্ট শুনতে পেলাম যেন তাম্রসাম্রাজ্যের আয়নদের কলরব! গরম বিকেলের দিনের ঠান্ডা করা হাওয়ার ঝাপটার মতো আমার চেতনা নাড়া খাচ্ছিলো। প্রার্থনা জিনিসটা কিভাবে ভগবানকে জ্বালায় তা বেশ উপলব্ধি করছিলাম। আমি এখন চাইলেই উদ্ধার করতে পারি কিউপ্রিক আয়নগুলোকে তাম্রজ ইলেকট্রনের কবল থেকে। মুক্ত করতে পারি, ওদের ধাতুর পাত থেকে জলের দ্রবণে এনে ছেড়ে দিতেই পারি, কিন্তু মুক্তির যে দাম দিতে হবে! </p>
<p dir="ltr">একটা দেশী ডিসি ব্যাটারি নিয়ে এলাম, পজিটিভ দিকটার সাথে তামার তার দিয়ে তামার পাতটার মাথাটা আটকে দিলাম, আর নেগেটিভ প্রান্তটার সাথে তার দিয়ে একটা লোহার পেরেক আটকে সেটাকেও কপার সালফেট সলিউশনের মধ্যে রেখে দিলাম। তামার পাতের ভেতরে যে ইলুর দল মানে ইলেকট্রনের দল আছে, সেই ব্যাটাদের অরি মানে শত্রু হলো আমার এই ব্যাটারি! </p>
<p dir="ltr">স্পষ্ট শুনতে পেলাম, ‘গেলো, গেলো, সব গেলো রে, ধরে নিয়ে গেলো ইলু-রাজাকে, হায় হায়!’ লক্ষ লক্ষ ইলেকট্রনিক ক্যাঁচড়ম্যাচড় শব্দে আমার অডিটরি স্নায়ুর সাইন্যাপসে সাইন্যাপসে ইলুর দল নাচানাচি করতে শুরু করে দিয়েছে! সমস্ত জড় আর জীব কি তাহলে এক সূত্রে গাঁথা? উত্তর পাই নি। ব্যাটারা ব্যাটারির পজিটিভ মেরুর টানে পড়ে কাতর আর্তনাদ করতে করতে ছুটছে। তামার পাত থেকে ইলেকট্রন শুষছে ডিসি ব্যাটারি! </p>
<p dir="ltr">©শ্রুতিসৌরভ বন্দ্যোপাধ্যায়</p>
SHRUTI SAURABHhttp://www.blogger.com/profile/06397705002239295269noreply@blogger.com0tag:blogger.com,1999:blog-4503579633352654506.post-4439366383537490562018-06-07T03:13:00.001-07:002018-06-07T03:13:53.211-07:00মুক্তির দাম: ইলেট্রোলিসিস 1 <p dir="ltr">                       <br>
               <br>
                         <b>প্রথম পর্ব</b></p>
<p dir="ltr">‘প্রচন্ড কঠিন সময়, বুঝলি, ওরা আমাদের ঘিরে যেভাবে পাহারা দিচ্ছে তাতে করে আমাদের এখান থেকে পালানো অসম্ভব!’</p>
<p dir="ltr">‘কিন্তু বাবা, আমি যে আর পারি না, আমরা যে কেউ আর পারিনা বাবা! ওদের এ কেমন শাসন! এই সমুদ্রে আমরা কেন এক জায়গায় ভেসে থাকবো, আর ওরা কেমন মুক্ত হয়ে এদিক থেকে ওদিক ছুটে বেড়ায়! চলমান পাহাড়গুলো ওদের ছাড়া যেন কিছু চেনে না। আমি যে শুনতে পাই, ওই শোনো, পাঁচিলের ওপার থেকে ওই লক্ষ লক্ষ কোটি কোটি চলমান কিউপ্রিকের দল, ওরা আমাদের ডাকছে, বেরিয়ে আয়, ভাঙ ভাঙ কারার মতো কপার ভাঙ!’</p>
<p dir="ltr">‘না রে, এ বড় প্রাচীন কপার সাম্রাজ্য, লক্ষকোটি কিউপ্রিক বীরের দেশ এটা, আমাদেরই স্বভাবের ভুলে আমাদেরই গা থেকে বেরনো ইলুরা আজ এক হয়ে মিলে সমুদ্র হয়ে আমাদের শাসন করছে! প্রথমে আমরা পাত্তা দিতাম না, এখন বুঝছি ওদের সাগরে আমরা পাথরের মতো ভেসে আছি, এই কপার সাম্রাজ্যে ইলুরাই সব!’</p>
<p dir="ltr">‘আচ্ছা বাবা, ইলুদের চলমান পাহাড়রা এতো ভালোবাসে কেন?’</p>
<p dir="ltr">‘ইলুদের ছুটিয়ে ওরা যে যত রকমের শক্ত কাজ হাসিল করে। ইলুরা আমাদের থেকে বা ওদের থেকেও বুদ্ধিমান। চলমান পাহাড় গুলোর অধিকাংশই এম্নি বোকা, যে জানে না, আসলে ইলুরাই ওদেরকে চালায়।’</p>
<p dir="ltr">কিউপ্রিকদের বাপ মেয়ের কথোপকথন আরো অনেকটা এগোত, তার মধ্যে এক ঝাঁক ইলুর দল অর্থাত্ তোমরা, চলমান পাহাড়রা, যাদের ইলেকট্রন বলে থাকো, তারা এসে বাপ মেয়েকে ‘চল হ্যাট্ ধাতুর মোষ’ বলে ওদের আলাদা করে দিলো। কপার রাজ্যে এমনি নজরদারি চালায় ইলুর দল, যাতে কেউ রাজ্য ছেড়ে বেরোবার ধান্দা না করতে পারে। এমনকি এই সংক্রান্ত কথা বললে কিউপ্রিকদের আলাদা করে দেওয়া হয়। ইলুরা জানে, এরা যতক্ষণ আছে, ততক্ষণ কপার সাম্রাজ্যের সূর্য অস্ত যাবে না। ওরা কিউপ্রিকদের থেকেই জন্মালেও পদে পদে ওদের হ্যাটা করে। ধাতুর মোষ বলে ডাকে! আয়ন বলে কোন সম্মানই দেয় না!</p>
<p dir="ltr">29 টা প্রোটন দিয়ে 29 টা প্রোটন চেপে থাকে কিউপ্রিকরা, আর সুযোগ খোঁজে জবাব দেবার। কারণ এ অপমান আর সহ্য হয় না, তাদের যে মৃত্যু নেই কপার সাম্রাজ্যে! না মরে বেঁচে থাকা বড়ো যন্ত্রণার! </p>
<p dir="ltr">পাহাড়দের একদিন ওদের কাছে যুগ যুগ যুগসমান! এরকম বহুযুগ আগে, চলমান পাহাড়ের দল একদিন এসে কপার সাম্রাজ্যে নীল বৃষ্টি শুরু করেছিলো, একসময় বেশ খানিকটা রাজ্য নীলমগ্ন হলো! অভিজ্ঞ কিউপ্রিকেরা জানতো ওই নীলে লুকিয়ে আছে তাদের থেকে বহুযুগ আগে বিচ্ছিন্ন হওয়া আত্মীয়, ওরা মুক্ত হতে পেরেছে সালফেট নামক একপ্রকার দানবদের হাতথেকে, খাঁচার মধ্যে ওদের আটকে রেখেছিল। এক সময় ওদের খুঁজে বার করেছিলো জলের অণুসেনা, নিরাপত্তা দিয়েছিলো কিউপ্রিকদের ঘিরে ধরে।  চলমান সেইসব নীল কিউপ্রিকরা কপারের রাজ্যের কিউপ্রিকগুলোকে ডাকতে থাকলো। পাছে ইলুরা অত্যাচার করে তাই টুকরো কপারের পাতের ভেতরে সে ডাক শুনেও চুপ করে বসে থাকে কিউপ্রিকের দল! ওরা যে ইলুদের দাস হয়ে গেছে!</p>
<p dir="ltr">©শ্রুতিসৌরভ বন্দ্যোপাধ্যায়</p>
SHRUTI SAURABHhttp://www.blogger.com/profile/06397705002239295269noreply@blogger.com0tag:blogger.com,1999:blog-4503579633352654506.post-23495210930336811732018-05-31T19:30:00.001-07:002018-05-31T22:32:31.524-07:00প্রোটনের পেটের ভেতরের চাপ<p dir="ltr">                   <b>চাপের ব্যাপার!</b></p>
<p dir="ltr">কদিন ধরে হেভি চাপ চলছে! এমনিতেই মরার অনেক পরে বুঝেছিলাম মরে গেছি তাই নিয়ে চাপটা ছিলোই। মেঘলা আকাশের মত গুমোট মন নিয়ে গঙ্গার ধারে ঠ্যাং ঝুলিয়ে ভৌতিক বিড়ি ফুঁকছিলাম আর ভাবছিলাম ‘জেবনে আর কিছু হলো না!’</p>
<p dir="ltr">এমনি সময় লোকটা জল থেকে উঠে এলো। ভিজে নয়, শুকনো অবস্থায়। আমি ঘাবড়ে গেছি দেখে বললো - ঘাবড়াও কেন, তুমি তো অলরেডি পটল তুলেছো, এখন তুমি নেই। মানে ভূত, অতীত।</p>
<p dir="ltr">আমি বললাম, তা ঠিক, তবে এখনো ঠিক প্র্যাকটিস হয়নি তো, তাই ভয় লাগে। তা তুমি কী, আমার মতোই নিশ্চয়, নইলে জলে থেকেও এমন শুকনো কেন?</p>
<p dir="ltr">লোকটা একটা পিত্তিজ্বালানো হাসি হেসে বললো, আমি তোমার মতো নই। আমি আছি, মানে মরবো না কোনদিন, গ্যারান্টি। আমি জলেও আছি, বাতাসেও আছি, সূর্যে এমনকি মহাশূন্যেও আছি।</p>
<p dir="ltr">আমি রেগে বললাম, এসব ঢপ বন্ধ করো। যখন বেঁচে ছিলাম, দুটো মাতব্বর এমনি ঢপ দিতো। তাদের কথা বিশ্বেস করে আজ আমার এই দশা। তুমি কি বাবা লোকনাথ?</p>
<p dir="ltr">লোকটা বললো, তা বলতে পারো, আবার প্রোটনও বলতে পারো, জলের অণুর দিব্যি, এইমাত্র একটা অণু ফুটে, ইয়ে মানে, তোমরা যাকে স্বতঃবিয়োজন বলো, তা হয়ে বেরোচ্ছি।</p>
<p dir="ltr">আমি বললাম, বটে? তা তুমি যে প্রোটন তার প্রমাণ কি হে? </p>
<p dir="ltr">লোকটা হাত দুটো উপরে তুলে পা দুটো ছেতড়িয়ে দাঁড়িয়ে বললো, এই দ্যাখো তোমাদের ইনজিরি এইচ অক্ষরের মতো দেখতে লাগে কিনা। আর এই যে মাথার পেছনের টিকি, এইটা আমার প্লাস চার্জ। হলো কিনা!</p>
<p dir="ltr">আমি বললাম, এ বাবা, এতো সরল! তুমিই সেই যে পরমাণুর নিউক্লিয়াসে থাকো?</p>
<p dir="ltr">লোকটা বললো, হ্যাঁ গো বাঙালির ভূত, হ্যাঁ।</p>
<p dir="ltr">আমি হাঁ করে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে আবার বললাম, তুমিই সেই আদিকণা যার সংখ্যা বলে দেয়, মৌলটা কী হবে?</p>
<p dir="ltr">লোকটা গদগদ হয়ে বললো, যা বলেছো ভাগাড়ের ভূত। তারপর কেমন যেন উদাস হয়ে গেলো। বললো, তবে আজকাল জানো কেউ পাত্তা দেয় না। সে রাদারফোর্ড ও আর নেই, সে পরমাণুও আর নেই। তুমিই বলো, আদিকণা হিসেবে আমি কম হলাম কিসে!</p>
<p dir="ltr">আমি সবে ঘাড় নেড়ে তাকে শান্ত করতে যাচ্ছিলাম, এমনি সময় প্রোটন, অথবা প্রোটন নামের লোকটা কেমন একটা করতে থাকলো। পেট ধরে চ্যাঁচাতে লাগলো, আর মাঝে মাঝে কাকে যেন বলতে লাগলো, হতভাগার দল, আমাকে তোরা শান্তিতে থাকতে দিবি না, বাঙালির ভূতের সামনে বেইজ্জত করছিস! </p>
<p dir="ltr">আমি বললাম, পেটে গ্যাস হয় তো ইউনেনজাইম খেলেই পারো। </p>
<p dir="ltr">লোকটা দাঁত মুখ খিঁচিয়ে বললো, ইঃ! তোমার যেমন বুদ্ধি! গ্যাস হতে যাবে কি সে! তুমি কোয়ার্কের নাম শোনো নি বুঝি?</p>
<p dir="ltr">আমি বললাম, ইস্কুলে মাস্টার ছিলো না বলে বিজ্ঞানের ক্লাস বন্ধ ছিলো, বাংলার মাস্টার পরমাণুর পেটে কি আছে ওই জানিয়েছিলো। তোমার পেটে কি আছে তা জানার সৌভাগ্য হলো কই!</p>
<p dir="ltr">প্রোটন বললো, ওই যে তুমি আমায় আদিকণা বললে, তাইতে হতভাগাদের প্রেস্টিজে লেগেছে। ওরা তিন পিস্ কোয়ার্ক, আমায় নাকি গড়েছে বলে দাবি করে। উঃ বাবারে! গেলুম গেলুম! আর নাচিস না। হ্যাঁ হ্যাঁ, তোরাই আদিম যুগের কণা, নে হয়েছে?</p>
<p dir="ltr">আমি বললাম, তিনটে কোয়ার্ক? ওদেরকে বাইরে বের করে দাও না। </p>
<p dir="ltr">প্রোটনটা বললো, সে বলা ভারি সোজা। ওরা দুটো এক চরিত্রের আরেকটা আলাদা। তোমাদের পন্ডিতগুলো ছিলো তাই রক্ষে। ওদের দুটোকে নাম দিয়েছে ‘আপ’ কোয়ার্ক। আর একটার নাম ‘ডাউন’ কোয়ার্ক। আমার পেটের বাইরে বার করলে ওদের বুঝতে পারবে না, এমনি চালাক। কেবল আমি বুঝি ব্যাটাদের শয়তানি, উরে বাবারে!</p>
<p dir="ltr">আমি বললাম, ডাক্তার দেখিয়েছো?</p>
<p dir="ltr">প্রোটন বললো, তা আবার নয়? ভালো ডিগ্রিধারী নিউক্লিয়ার ফিজিসিস্ট দেখিয়েছি! কি বললো জানো? বলে কি না ওই তিনটে বজ্জাত পেটের ভিতর এমনি আঁটাআঁটি করে বসেছে যে বার করার জো নেই! এতোটাই শক্ত ওদের নিজেদের মধ্যে টান! ওর নাম দিয়েছে নিউক্লীয় বল। আরেক ডাক্তার বলেছে, ওই বল ফল বলে কিছু নেই। কোয়ার্ক আছে, আর ওদের মাঝে আঠার মতো একরকম কণা আছে, যাকে বলে গ্লুওন। অবিশ্যি, অনেক ডাক্তারে ওদের কণা বলে ধরেনা, বুঝলে? কোয়ান্টাম ক্রোমোডাইনামিক্স বলে একটা ব্যাপার আছে….উরেঃ বাপস্, আর লাফাস নে!</p>
<p dir="ltr">আমি দেখলাম, ব্যাটা পেট ফেটে মরে আর কি! কাজেই যা জানার এই বেলা জেনে নি। জিগ্যেস করলাম, কোয়ার্ক গুলোর নিজেদের মধ্যে এই যে ভয়ানক টান, সেই টানে তো নিজেরাই নিজেদের সাথে ঠোক্কর খেয়ে মিলিয়ে যাবে, তখন তোমার কি হবে ভেবে দেখেছো?</p>
<p dir="ltr">প্রোটন বললো, আরে সেই কথাই তো তোমায় বলতে আসছিলাম, তোমায় মনমরা দেখে! ডাক্তারগুলো এই সন্দেহটা অনেককাল আগে থেকেই করছিলো! টান যদি থাকে, ঠ্যালাও থাকবে, নইলে আমি বাঁচি কিভাবে? আর আমি না বাঁচলে তোমাদের কি হবে গো?</p>
<p dir="ltr">আমি দেখলাম, প্রোটনটা আবার ক্রেডিট নিতে যাচ্ছে! তাই তড়িঘড়ি বললাম, তারপর ঠ্যালার ব্যাপারটা জানা গেলো?</p>
<p dir="ltr">সে বললো, এই তো এবছর মে মাসের মাঝামাঝি, আমেরিকার থমাস জেফারসন ন্যাশনাল অ্যাক্সিলারেটার ফেসিলিটি সেন্টারে আমরা গেছিলাম, আমার মতো অনেক হতভাগা প্রোটন পেটে কোয়ার্ক নিয়ে ডাক্তার ভোলকার বার্কার্টের চেম্বারে ভর্তি ছিলো  (doi:10.1038/s41586-018-0060-z)। তো ওরা বেশ জোরালো ইলেকট্রন রশ্মি আমাদের পেটে ফেলে টেলে দেখলো, কোয়ার্কগুলো কেম্নি করে! শেষে ওদের ভরবেগ আর শক্তির কতকগুলো ম্যাপ এঁকে টেকে বললো, চাপের ব্যাপার।</p>
<p dir="ltr">আমি বললাম, চাপের ব্যাপার? মানে?</p>
<p dir="ltr">সে বললো, আমিও এই রকম জিগ্যেস করেছিলুম, বুঝলে, তাতে ওরা গম্ভীর হয়ে বললো, আমার পেটে নাকি দুরকম চাপ! আর এটা নাকি ওরাই প্রথম বের করতে পেরেছে। বিশ্বেস না হয় নেচার পত্রিকায় দেখো, 16ই মে বেরিয়েছে! একটা চাপ ভিতরে ঠেলছে কোয়ার্কদের, ওটা অতোটা ভয়ানক না হলেও যে চাপটা পেটের মধ্যিখানে কাজ করছে, সেটা কোয়ার্কগুলোকে বাইরের দিকে ঠেলছে। এই দুটো চাপ নির্ঘাত ব্যালেন্স করছে, আমি তাই বেঁচে যাচ্ছি! কোয়ার্কগুলো পেটের ভেতরে টিকে থাকছে।</p>
<p dir="ltr">আমি বললাম, এই ব্যাপার! এতে এতো প্রচারের কি আছে হে? মধ্যিখানের এই চাপটা কি আমার মনের চাপের থেকেও বেশী?</p>
<p dir="ltr">প্রোটনটা এই শুনে খ্যাঁকখ্যাঁক করে এমন হাসলো যে আমার বিড়িটা নিভে গেলো! হাসি থামিয়ে বললো, তুমি যখন বেঁচে ছিলে, তখন তোমার উপর বাতাসের চাপ কতটা ছিলো জানো? </p>
<p dir="ltr">আমি বললাম, এটা সেভেনের! ওই 10 টু দি পাওয়ার 5 পাস্কালের মতো! মানে একের পিঠে পাঁচটা শূন্য, এক লাখ পাস্কাল, প্রায়। </p>
<p dir="ltr">একটু থেমে বললাম, ইয়ে মানে, সমুদ্রপৃষ্ঠে!</p>
<p dir="ltr">সে বললো, এইটুকু চাপ তোমরা নিতে পারো না বলে তোমাদের গায়ে আবার ফুটো করে বাইরে ভেতরে চাপ সমান করতে হয়েছে! ছোঃ! আর আমি পেটের মধ্যিখানে 10 টু দি পাওয়ার 35 পাস্কাল চাপ নিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছি, উইদাউট ফুটো! </p>
<p dir="ltr">আমি স্রেফ হাঁ। প্রোটনটা বলে কি? 10 টু দি পাওয়ার 35 পাস্কাল মানে একের পিঠে পঁয়তিরিশটা শূন্য! সে যে ব্রম্ভাণ্ডের সবথেকে ঘনীভূত বস্তু নিউট্রন তারকার পেটের চাপের থেকেও দশ গুণ বেশী চাপ!!</p>
<p dir="ltr">আমি বললাম, এ-তো চা-প! কিভাবে নাও ভাই?</p>
<p dir="ltr">সে বললো, ওইটাই তো বলতে আসছিলাম, ভিতরে এতো চাপ নিয়েও আমি যদি পজিটিভ থাকতে পারি তবে তুমি, যে কিনা আমাকে দিয়েই তৈরী, সে কেন চাপের মুখে মনমরা, প্রিয় ভাগাড়ের ভূত? বি পজিটিভ, লাইক মি, এই বলে নাচতে লাগলো!</p>
<p dir="ltr">আমি বললাম, ইসস্! ডাক্তার বার্কার্ট কেন আর কদিন আগে চাপের ব্যাপারটা জানালেন না! তাহলে চপের দোকানটা দিয়ে সংসারটা টানতে পারতাম! এইসব ভাবছি এমনি সময় দেখি জল থেকে একটা মোটা সোটা হাইড্রোক্সিল আয়ন উঠে ইলেকট্রনিক জিভ বার করে সুড়ুত্ করে প্রোটন টাকে টেনে নিয়ে গিলে ফেললো!</p>
<p dir="ltr">তোমরাই বলো, এসব চাপের ব্যাপার কি না!</p>
<p dir="ltr">© শ্রুতিসৌরভ বন্দ্যোপাধ্যায়</p>
SHRUTI SAURABHhttp://www.blogger.com/profile/06397705002239295269noreply@blogger.com1tag:blogger.com,1999:blog-4503579633352654506.post-82909011787724884052018-05-06T03:16:00.001-07:002018-05-06T03:16:48.513-07:00অন্তিম পর্ব: সবচেয়ে সরল রাসায়নিক বিক্রিয়া<p dir="ltr"> <i>পৃথিবীর সবচেয়ে সরল রাসায়নিক বিক্রিয়া</i><br>
<br>
<b>অন্তিম পর্ব </b></p>
<p dir="ltr"> ‘আলোর ঢেউয়ে উঠলো নেচে মল্লিকা-মালতী’</p>
<p dir="ltr">এক মিটারের দশলক্ষ ভাগের এক ভাগকে বলে মাইক্রোমিটার। সোডিয়াম আর সিজিয়ামের পরমাণুর ভেতরে ব্যবধান ছিল তিন মাইক্রোমিটার! চোখে তো তা নিশ্চয় দেখা যায় না। এই সব কান্ডকারখানা যা ঘটছে, বিজ্ঞানীরা তা দেখছেন আসলে কম্পিউটারের পর্দায় পরমাণুর ছায়া হিসেবে। বাইরে থেকে দেখলে নইলে কেবল আলোটুকু দেখা যাবে! কোন আলো, কিরকম আলো, কোন পরমাণুকে ধরে আছে এসব দেখাতে অনেক রকম আয়না আর লেন্সওয়ালা সেরকম ওস্তাদ যন্তর আছে বটে, তবে সে সব বোঝার জন্য চাই জহুরির চোখ। প্রায় পঞ্চাশ বছর ধরে তিল তিল করে জমানো হাজার হাজার মানুষের বৈজ্ঞানিক অভিজ্ঞতার ফসল সেসব জহুরির মাথায়। </p>
<p dir="ltr">এখন বিক্রিয়া ঘটাতে গেলে পরমাণুদের আগে কাছে নিয়ে আসতে হবে। সোডিয়ামের আলোক চিমটে স্থির রেখে তার দিকে আস্তে আস্তে এগিয়ে নিয়ে আসা হল সিজিয়ামের 976 ন্যানোমিটার তরঙ্গদৈর্ঘ্যের আলোক চিমটেটা। দুটো আলো যখন মিশে গেল, নিভিয়ে দেয়া হল সোডিয়ামের চিমটে। এখন 976 ন্যানোমিটারে দুই পরমাণু রয়েছে আটকে। একই বাড়িতে বউমা সোডিয়াম (Na) আর শাশুড়ি সিজিয়াম (Cs), মিলমিশ হবে কি না সেটা কপালের ব্যাপার, কিন্তু ঠোকাঠুকি?</p>
<p dir="ltr">পরমাণুদের ঠোকাঠুকি হলেই যে তাতে তারা জুড়ে গিয়ে নূতন অণু দেবে তার গ্যারাণ্টি নেই। প্রথমে তো তাদের মাথায় রাখতে হয় ভরবেগ আর শক্তির নিত্যতা সূত্রগুলো তার উপর আবার সঠিক সময়ে, সঠিক মেজাজে না এলে পরমাণুদের মিলমিশ হয় না। না, ক্যাং কুয়েন নি এর কাছে পরমাণুদের খোশমেজাজে আনার জন্য ক্যাডবেরি ছিলো না, ছিলো ফের আরেকরকমের আলো। যে পরমাণু যেরকম আলো খেলে মিনিমাম উত্তেজিত হয়, সেই রকমের আলো দেওয়া হলো তাদের, আর বর্ণালীবীক্ষণ যন্ত্রের সাহায্যে বোঝা গেল, একটি অণু জন্ম নিয়েছে বটে! NaCs* স্বাভাবিক নয়, উত্তেজিত অণু, তবে দেখা দিয়ে সে গেছে মিলিয়ে! এর আগে কখনো এরকম সূক্ষ্মভাবে, সরলাকারে, স্রেফ দুটো পরমাণু পাকড়ে একপিস্ অণু তৈরী করা যায় নি। মানুষ এই প্রথম এভাবে অণু তৈরী করতে শিখলো। বা বলা চলে অণু তৈরী নিয়ন্ত্রণ করতে শিখলো। যে জিনিস ভাগ্য বা প্রকৃতির হাতে ছাড়া হয়েছিলো, তার উপরে মানুষের কন্ট্রোল এলো, অত্যন্ত ক্ষুদ্র পরিমাণ হলেও। মানুষ এরকম ভাবে অণু তৈরী শিখলে আশা করা যায় আণবিক কম্পিউটার তৈরী করতে বেশী বছর লাগবে না। </p>
<p dir="ltr">সাধারণ কম্পিউটার যে পরিমাণ তথ্য ধরতে পারে তার মূলে থাকে বাইনারি বিট ব্যবস্থা, 0 আর 1 শুধু এই দুই অবস্থা দিয়ে সেটা চলে। পরমাণু, ফোটন বা ইলেকট্রন দিয়ে যখন সেই তথ্য ধরা বা আদানপ্রদানের কাজটা চলে তখন তাদের বলে কিউবিট। কিউবিট শুধু 0 আর 1 নয়, এমনকি তাদের মাঝামাঝি অনেকরকম অবস্থায় থাকতে পারে। কাজেই বিটের সাহায্যে যে পরিমাণ তথ্য জমানো যায়, কিউবিটের মাধ্যমে তার থেকে বহুগুণ বেশী তথ্য ধরবে। মানে অনেক ছোট হয়ে যাবে কম্পিউটিং ব্যবস্থা। কিউবিট ব্যবস্থা কোয়াণ্টাম কম্পিউটারের মূল অস্ত্র। তাই এককভাবে অণু তৈরী করার চেষ্টার পিছনে আসলে আছে সেই অণুকে কিউবিট হিসেবে ব্যবহার করার উদ্দেশ্য। ইলেকট্রন বা ফোটনের তুলনায়, একটি অণু কিউবিট হিসেবে অনেক সুবিধাজনক।</p>
<p dir="ltr">বিজ্ঞাপনে ক্যাডবেরির আমেজ ফুরানোর পরে শাশুড়ি বউমার মিলমিশ টিকেছিলো কি না দেখায় নি, তাই বলে বিজ্ঞানীরা হাল ছাড়েন নি-- স্বাভাবিক অবস্থার একটিমাত্র অণু হাতে গরম তৈরী করা যায় কিনা তা জানতে ক্যাং কুয়েন নি এর টিম এখনো গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছেন। ব্যাংকের ভল্টে উন্নত কোয়ান্টাম পাসওয়ার্ড দিয়ে সুরক্ষিত আপনার টাকাপয়সার জন্য, ভবিষ্যতে, একদিন হয়তো এইসব নিরলস মানুষদের মন থেকে থ্যাংকিউ জানাবেন।</p>
<p dir="ltr">© শ্রুতিসৌরভ বন্দ্যোপাধ্যায়<br>
@https://chemssb.blogspot.in</p>
SHRUTI SAURABHhttp://www.blogger.com/profile/06397705002239295269noreply@blogger.com2tag:blogger.com,1999:blog-4503579633352654506.post-21586148724524241832018-05-04T04:45:00.001-07:002018-05-04T05:48:41.283-07:00তৃতীয় পর্ব: পৃথিবীর সবচেয়ে সরল রাসায়নিক বিক্রিয়া<p dir="ltr">  <b><i>পৃথিবীর সবচেয়ে সরল রাসায়নিক বিক্রিয়া</i></b><br>
                       <br>
                          পর্ব. তিন: <br>
         আলোর চিমটে কিভাবে কাজ করে</p>
<p dir="ltr">                “যে তোমায় ছাড়ে ছাড়ুক <br>
              আমি তোমায় ছাড়বো না, মা!”</p>
<p dir="ltr">পরমাণু বা অণুর মধ্যে ইলেকট্রন যখন নাচানাচি করে তখন তার থেকে হয় শক্তি বেরোয়, নয় তাতে শক্তি ঢোকে। উল্টোটাও সত্য। মানে শক্তি ঢোকা বেরনো হলে ইলেকট্রন নাচানাচি করে। যাই হোক, যদি চার্জওয়ালা ইলেকট্রন নাচে তো তার আশেপাশে থাকা ইলেকট্রিক অঞ্চলটাও নাচতে থাকবে আর সেই নিয়মে তার সাথে নব্বই ডিগ্রি কোণে একটা চৌম্বক জায়গাও তৈরী হয়ে নাচতে থাকবে ম্যাক্সওয়েল সাহেবের কথা মেনে। এইরকম নাচতে থাকা ইলেকট্রন যখন শক্তি ছাড়ে, তখনো ওই ছেড়ে দেয়া শক্তি, ওই দুই ইলেকট্রিক আর চৌম্বক অঞ্চলদের বয়ে নিয়ে চলে! এইরকম শক্তিকে আমরা বলি-- আলো। শক্তির নেই ওজন, নেই আধান, তবু কি অদ্ভূত, ইলেকট্রিক আর ম্যাগনেটিক ফিল্ড বা অঞ্চল বা ক্ষেত্র তাকে ছাড়তে চায় না, সত্যিকারের শক্তি উপাসক! শক্তির ঢেউ যদি x অক্ষ বরাবর ছোটে, নাচতে থাকা ইলেকট্রিক ক্ষেত্র থাকে y বরাবর আর চৌম্বক ক্ষেত্র z বরাবর।</p>
<p dir="ltr">আলোর এই ইলেকট্রিক ক্ষেত্রের গুণেই পরমাণুদের ধরতে পারি আমরা। বস্তুত, যে জিনিসে চার্জ থাকবে + বা -, তাদের আলো ধরতে ওস্তাদ। আয়ন ধরা খুব সোজা শক্তিশালী আলো দিয়ে। তবে দুটো লেজার আলোকে অভিসারী করতে হবে ভালো লেন্স দিয়ে আর তারা মিলবে যেখানে মানে ফোকাস পয়েন্ট যেটা ওইটে হলো আলোক চিমটের আগা। এখন, পরমাণুতে আছে দুরকম চার্জ, সমান সমান। আলোর ইলেকট্রিক ফিল্ডের বিকর্ষণে পরমাণুর ইলেকট্রন যাবে একদিকে সরে। আর পরমাণুর নিউক্লিয়াস এগিয়ে আসবে ইলেকট্রিক ফিল্ডের টানে! অর্থাত্ একটু আগের সুন্দর ফুটবলের মতো পরমাণুর গঠনটা যাবে ধেবড়ে। একটু আগেও যেটা ছিল নিস্তড়িত্ এখন সেটাই হয়ে যাবে একটা দ্বিমেরু বিশিষ্ট চুম্বক বা বৈজ্ঞানিক ভাষায় ‘ডাইপোল’! বড়ো চুম্বকের চারপাশে যেমন অদৃশ্য চৌম্বক ক্ষেত্র থাকে, যার কাছে একটু লোহার পেরেক আনলেই তাকে সড়াত্ করে টেনে নেয় চুম্বক, এও অনেকটা এরকম। আলোর সাহায্যে জন্ম নেয়া ডাইপোলের নাম-- অপটিক্যাল ডাইপোল।</p>
<p dir="ltr">কিন্তু এখানে আবার আরেকটু মুশকিল আছে! আলো যে পরমাণুকে ইলেকট্রিক ফিল্ড দিয়ে শুধু যে টানছে তা নয়, আলোর ফোটন কণা আবার পরমাণুটাকে ক্রমাগত গুঁতোচ্ছে। ফিল্ড বলছে আয় আয়, ফোটন বলে পালা পালা! যখন এইদুটো বিপরীতমুখী বল একে অন্যকে ব্যালান্স করতে পারবে, তখন শুরু হলো লেজারের ফাঁদে পরমাণুদের আটকে পড়া। পোশাকি ভাষায় যাকে বলে অপটিক্যাল ডাইপোল ট্র্যাপ। আলোর চিমটে যতভাবে মানুষ কাজে লাগায়, এটা হলো তার একটা পদ্ধতি।</p>
<p dir="ltr">এভাবেই পরমাণুদের হাঁড়ি থেকে শক্তিশালী লেজার ব্যবহার করে তোলা হয়েছিল একটা পরমাণুকে। এটা অনেকটা হাত মুঠো করে বালি তুলে সেই হাত থেকে সব বালি ফেলে আঙুলের ফাঁকে একটিমাত্র বালুকণা রেখে দেবার মতো ব্যাপার, যতক্ষণ না একটি পরমাণু চিমটের আগায় ধরা যাচ্ছে ততক্ষণ কাজটা চলছিল। ঠিকঠাক মাপ করে তুলতে হতো একটা সিজিয়াম আর একটা সোডিয়াম পরমাণুকে। সিজিয়াম বাঁশকাঠি চালের দানা হলে সোডিয়াম হল গোবিন্দভোগ চালের দানা। কাজেই একরকমের চিমটেতে কাজ চলবে না! </p>
<p dir="ltr">পরমাণু যত বড় হয় তাকে ধেবড়ে ডাইপোল বানাতে আলোর তত কম শক্তি লাগে। এ হিসেবে সোডিয়াম ধরতে বেশি শক্তির আর সিজিয়ামের জন্য কম শক্তির লেজার আলো লাগবে। এখন আলোর ঢেউ গুলোর মধ্যে দূরত্ব কম হলে আলোর শক্তি বেড়ে যায়। সাধারণত, এই দূরত্ব মাপে ন্যানোমিটারে (1 মিটারের 100 কোটি ভাগের 1 ভাগে)! এর বৈজ্ঞানিক নাম তরঙ্গদৈর্ঘ্য। এই কারণে সোডিয়াম পরমাণু ধরতে বেশি শক্তির 700 ন্যানোমিটার আর সিজিয়াম পরমাণু ধরতে কম শক্তির 976 ন্যানোমিটার তরঙ্গদৈর্ঘ্যের লেজার আলো ফেলা হল। একটা চিমটেয় সোডিয়াম আর একটা চিমটেয় সিজিয়াম পরমাণু ধরার পরে বিজ্ঞানীরা বন্ধ করে দিলেন ছয়দিক থেকে পড়া লেজারের ঝর্ণাধারা আর চারমুখো সেই চৌম্বক ক্ষেত্রটাকে, পরমাণুর হাঁড়ি, গোদা বাংলায় বলা চলে, ফেটে গেলো! প্রায় বায়ুশূন্য স্থানে ভেসে রইলো সোডিয়াম আর সিজিয়ামের একটি একটি পরমাণু, লেজার চিমটের ডগায়।</p>
<p dir="ltr">শাশুড়ি সিজিয়াম পরমাণু আর বউমা সোডিয়াম পরমাণুর মধ্যে দূরত্ব এখন কত হতে পারে, আন্দাজ?</p>
<p dir="ltr">© শ্রুতিসৌরভ বন্দ্যোপাধ্যায়</p>
SHRUTI SAURABHhttp://www.blogger.com/profile/06397705002239295269noreply@blogger.com0tag:blogger.com,1999:blog-4503579633352654506.post-21518060856082224762018-05-01T12:33:00.001-07:002018-05-01T12:36:58.633-07:00পৃথিবীর সবচেয়ে সরল রাসায়নিক বিক্রিয়া :পর্ব 2<p dir="ltr">     <i>পৃথিবীর সবচেয়ে সরল রাসায়নিক বিক্রিয়া</i></p>
<p dir="ltr">                                দুই.</p>
<p dir="ltr">           “খাঁচার ভিতর অচিন পাখি<br>
                ক্যামনে আসে যায়<br>
             ধরতে পারলে মন-বেড়ি,<br>
                দিতাম পাখির পায়!”</p>
<p dir="ltr">পাখি মানে পরমাণু শান্তশিষ্ট না হলে ধরা মুশকিল! আগে ওকে ঠান্ডা মাথায় ঠান্ডা করতে হবে, সাধক বুঝেছিলেন।</p>
<p dir="ltr">সুপারসোনিক জেটের থেকেও দ্রুতগামী পরমাণুদের ছয় দিকের লেজারের ঝর্ণাধারায় ধুইয়ে শীতল করলে তাদের বেগ কমে নিদেনপক্ষে অলিম্পিক স্প্রিন্টারদের মতো হয় (“লেজারের ঝর্ণাধারায়” দ্রষ্টব্য)! আলোকীয় এই চিটেগুড়ে পরমাণুপুঞ্জ যখন ছটফটাচ্ছে তখন এর সাথে সঠিক দিক থেকে সঠিক মাপের চারমুখো চৌম্বকক্ষেত্র (সাধারণ চুম্বক দুইমুখো, উত্তর আর দক্ষিণ মেরু) বসিয়ে দিলে ষোলকলা পূর্ণ। পরমাণুগুলো এখন পিঁপড়ের মতো হেঁটে বেড়াবে, আলো আর চুম্বকের সম্মিলিত খাঁচার ভেতর! অবশ্য খাঁচা না বলে একে তিহার জেলখানাও বলা যায়। বাই চান্স কোন পরমাণু পাঁচিল টপকে পালাতে গেলে লেজারের ফোটন পুলিশ তাকে লাথি মারতে মারতে একেবারে ফাঁদের মধ্যিখানে এনে ফেলবে। একেবারে আঁটোসাঁটো নিরাপত্তা ব্যবস্থা! গোপন কথাটি হলো, ক্ষারধাতুর পরমাণুগুলোকে সহজে এমন জেলে বন্দি বানানো যায়। আর একটা লোমহর্ষক ব্যাপার, জেলখানার ভেতর বাতাসের চাপ আমাদের ঘরের চাপের দশ লক্ষ কোটি ভাগের মাত্র এবং মাত্র-- একভাগ! সুতরাং পরমাণুগুলো নিজেদের মধ্যে মারামারি বা ধাক্কাধাক্কি করতে পারে না। এতে করে ওরা খুব শান্ত শিষ্ট হয়ে যায়। তাপমাত্রা নেমে যায় এক কেলভিনের দশলক্ষভাগের একভাগে!! ছয়দিক থেকে আসা লেজার রশ্মি আর চারমুখো চুম্বকের ফাঁদে পড়ে প্রায় বায়ুশূন্য একটা স্থানে মেঘের মতো ভেসে থাকে একগোছা পরমাণু। মোটের উপর এই হলো গিয়ে মোট-- MOT Magneto Optical Trap. </p>
<p dir="ltr">আর এইটাই হলো বিজ্ঞানীর জন্য “পরমাণুর হাঁড়ি”!! এই পরীক্ষায় দুটো এরকম হাঁড়ি আছে যার একটার মধ্যে ফেলা আছে কয়েকদানা বাঁশকাঠি চালের মতো সিজিয়াম পরমাণু আর অন্যটাতে কয়েকদানা গোবিন্দভোগ চালের মতো সোডিয়াম পরমাণু। “জল” মানে ফাঁকা জায়গা এতো বেশী হাঁড়িতে যে চালের দানাগুলো খুব দূরে দূরে থেকে লাফালাফি করছে! আপনাকে একটা কাঠি দিয়ে চাল তুলে দেখতে বলা হলো চাল সেদ্ধ হয়েছে কি না? </p>
<p dir="ltr">লাফালাফি করা চালের দানাকে আপনি একটা কাঠিতে তুলতে হিমসিম খেতে পারেন, কিন্তু যদি আপনাকে দুটো কাঠি বা একটা চিমটে দেওয়া হয় তবে আপনি আরো ভালো ভাবে একটা চালের দানা তুলে দেখতে পারবেন, এ বিষয়ে হলফ করে বলা যায়। চিমটে দিয়ে আপনি তাহলে ঠিক কি করেন? তাগ্ করেন বা ফোকাস করেন চালের দানাকে। <br>
ঠিক একইভাবে পরমাণুর আপাতঠান্ডা হাঁড়ি থেকে একটা পরমাণুকে তুলতে বিজ্ঞানীর চাই শক্তপোক্ত ফোকাসওয়ালা লেজার রশ্মি। এটাই হলো গিয়ে আলোকীয় চিমটে।</p>
<p dir="ltr">দৃশ্যটি ভাবুন। যেন মহাকাশযান থেকে লেজার রশ্মি নীচে পড়লো আর চোখের পলকে তুলে নিল গরু মোষ নেতা এমনকি আপনাকেও! কল্পবিজ্ঞানের মধ্যে বিজ্ঞানের হালকা ছোঁয়া তো থাকবেই। </p>
<p dir="ltr">এগিয়ে আসুন, যতই উদ্ভট শোনাক, আলোকীয় চিমটে কিন্তু সত্যি।</p>
<p dir="ltr">© শ্রুতিসৌরভ বন্দ্যোপাধ্যায়</p>
SHRUTI SAURABHhttp://www.blogger.com/profile/06397705002239295269noreply@blogger.com3tag:blogger.com,1999:blog-4503579633352654506.post-8735289045179495992018-04-29T05:40:00.001-07:002018-04-29T05:40:19.506-07:00পৃথিবীর সবচেয়ে সরল রাসায়নিক বিক্রিয়া<p dir="ltr">   <i><b>পৃথিবীর সবচেয়ে সরল রাসায়নিক বিক্রিয়া</b></i></p>
<p dir="ltr">                              এক.</p>
<p dir="ltr">              "আমার মনের পরমাণুর সনে, <br>
              মিলন হবে সেকেন্ডের ভগ্নাংশে!"</p>
<p dir="ltr">হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়নবিদ্ ক্যাং কুয়েন নি এর পরীক্ষায়, সূঁচের ডগার থেকেও অনেক ছোটো হাওয়া বাতাসহীন একটা জায়গায়, আলো দিয়ে আটকানো একপিস্ সোডিয়াম পরমাণু বসে বসে এই ভাবছিলো! মিলেছিলো চোখের পলকেই, তবে মনের মতো পরমাণু পায় নি সোডিয়াম। সোডিয়ামের যেমনি ক্ষারালো স্বভাব, তেমনি আরেকটা ক্ষার ধাতুর পরমাণু, নাম সিজিয়াম, আরেকটা ওমনি জায়গায় আলো দিয়ে আটকানো ছিলো আর অপেক্ষা করছিলো ফোটন নামে এক পুলিশের। এখন সোডিয়াম যদি হালকা ফুলকো মেজাজের বউমা হয়, সিজিয়াম তবে একটু ভারিক্কি গোছের শাশুড়ি। স্বাভাবিক অবস্থায় এদের মধ্যে যে খুব বনিবনা হবে না, সেটা টিভির সিরিয়াল-বিজ্ঞানীরা ভালো জানেন! কিন্তু ফোটন পুলিশের সিগন্যাল পেয়ে মিললো তারা, এবং তৈরী করলো একটাই অণু, কিছুটা খ্যাপাটে অবস্থায় যদিও, যার সাক্ষী 12 ই এপ্রিল 2018 সালের সায়েন্স পত্রিকার একটি রিপোর্ট ( doi: 10.1126/science.aar7797)।</p>
<p dir="ltr">ক্যাডবেরির বিজ্ঞাপনে শাশুড়ী বউমার সেই সাত সমুন্দর নাচের কথা মনে আছে নিশ্চয়! </p>
<p dir="ltr">একটা পরমাণু আরেকটা পরমাণুর সঙ্গে মিশে একটাই অণু জন্ম দিলো -- এ যেন ইস্কুলের বিজ্ঞান বইতে লেখা A + B = C এইরকম ব্যাপার! বাস্তবে রাসায়নিক বিক্রিয়া আগে কখনো এতো সরল হয় নি। বিক্রিয়া মানেই ট্রিলিয়ন বিলিয়ন পরমাণু কৌরব পাণ্ডবদের মতো আক্রমণ বলে একে অন্যের উপরে ঝাঁপিয়ে পড়া! “তারপর কী হইলো জানে শ্যামলাল” মানে রসায়নবিদ্। সেখানে বেশীরভাগ সময় প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রয়োজনীয় অণু পরমাণু বেশী তৈরী হয়। এরকম আলোর চিমটে করে দুটো পরমাণু তুলে ধরে আলো ফেলে ওদের মিশিয়ে দিয়ে নূতন অণু তৈরী, এটা মানুষের পক্ষে একটা অকল্পনীয় ব্যাপার বটে!</p>
<p dir="ltr">চিমটে কী করে আলোর হয়??</p>
<p dir="ltr">© শ্রুতিসৌরভ বন্দ্যোপাধ্যায়</p>
SHRUTI SAURABHhttp://www.blogger.com/profile/06397705002239295269noreply@blogger.com1tag:blogger.com,1999:blog-4503579633352654506.post-20593657114848276092018-04-22T03:38:00.001-07:002018-04-22T03:39:35.327-07:00ফোটনের ফাঁদে<p dir="ltr"> লেজারের ঝর্ণাধারায়</p>
<p dir="ltr">বিলম্বিত শুভ নববর্ষ!</p>
<p dir="ltr">আলো বাড়ছে, গরম বাড়ছে। বৈশাখ শুরু হলো। সূর্যের আলো মাথা গরম করে দিচ্ছে আমাদের। আলো আর তাপ যেন দুই বন্ধু। যেখানে আলো পড়ে সেখান গরম হতে শুরু করে। আবার কখনো কখনো তাপ দিতে দিতে জিনিস জ্বলে গিয়ে আলো বিকিরণ করতে শুরু করে। আলো আবার অনেকরকম, সব আলোকে মানুষ চোখে দেখতে পায় না। তবে যন্ত্রে ধরতে পারে। সব আলোই একরকমের শক্তি। জানলে আশ্চর্য লাগবে, তাপও একরকমের আলো। আমাদের দেহ থেকে এই বেরোনো তাপ বা আলো কুকুর বেড়ালরা অন্ধকারে দেখতে পায়। </p>
<p dir="ltr">আলোর শক্তি দিয়ে সাধারণতঃ জিনিস বা জিনিসের কণাগুলোকে খ্যাপানোই হয়। আলো ভূত বা পদার্থ নয় বরং বলা যায় অদ্ভূত। কখনো আলোকে ভরহীন কণার স্রোত বলে কল্পনা করা যায়। কখনো বলা হয় আলোর শক্তি ঢেউ হয়ে একজায়গা থেকে অন্য জায়গায় যায়। ঢেউ বড়ো ছোট হতে পারে। ঢেউগুলো যত কাছাকাছি থাকে শক্তি তত বেশী হয়। আর দূরে দূরে থাকলে শক্তি কম। ঘনঘন আসা ঢেউ এর ধাক্কা কেমন তা সমুদ্রে স্নান করা লোক মাত্রেই জানবেন। আলোর সব ঢেউ আবার একতল দিয়ে চলে না। কেউ উপরে কেউ নীচে বিভিন্ন বেগে ছোটে। সাধারণ আলোতে এইরকম ঢেউ থাকে। একই মাপের একই বেগে চলা ঢেউ একরঙের আলো তৈরী করে, যদিও তারা একই তলে থাকে না। সেইজন্য এইরকম আলো ছড়িয়ে পড়ে বেশীদূর যেতে পারে না। যদি এইরকম আলোর ঢেউকে জোর করে একইতলে একসাথে চালানো যায় তবে সেটা যে শক্তিশালী হবে সন্দেহ নেই। একতা আছে বলেই ওরা অনেকদূর যেতে পারে। এরকম আলোর নাম লেজার (Light Amplified Stimulated Emission of Radiation, LASER) রশ্মি, মাত্র 0.001 মিলিমিটার চওড়া।</p>
<p dir="ltr">গোয়েন্দা গল্পে এবং সিনেমায় লেজার আলোর ব্যবহার দেখলে তাকে বেশ মারকুটে বলেই মনে হয়। জেমস্ বন্ড লেজার দিয়ে লোহার বন্ধ দরজা কেটে ফেললেন। নায়িকার পোষা বেড়ালের লেজ কেটে দিলো লেজার। লেজার দিয়ে সুরক্ষিত ব্যাঙ্কের ভল্ট। লেজার বোমা প্লেন থেকে ছুটে এসে ধ্বংস করলো বাড়ী। বাস্তবে প্রচুর শক্তিশালী লেজার দিয়ে ঝালাই পর্যন্ত করা যায়। লেজার মানেই সবসময় জিনিস পুড়িয়ে দেবে এমন কিন্তু নয়। শক্তিশালী লেজার পদার্থকে ঠান্ডাও করে দিতে পারে।<br>
ঠিক কতটা ঠান্ডা জানতে গেলে আগে জানতে হবে ঠান্ডা কী? </p>
<p dir="ltr">ঠান্ডা মানে তাপের অভাব। তাপ কিরকম? </p>
<p dir="ltr">জিনিস যা দিয়ে তৈরী সেইসব অণুপরমাণু কোনো সময় স্থির নেই, জিনিস যতই স্থির হোকনা কেন। ভেতর ভেতর এই যে ছোটাছুটি চলছে, ওটাই বাইরে তাপ হিসেবে ধরা দেয়। ছোটাছুটি যত বেশী, তাপের মাত্রা তত বেশী। সূর্যের পিঠের তাপমাত্রা 6000 কেলভিন, লোহা 1800 কেলভিনে গলে। 373 কেলভিনে জল ফোটে, 303 কেলভিন আমাদের ঘরের উষ্ণতা। জল বরফ হয় 273 কেলভিনে। 200 কেলভিনে কার্বন ডাই অক্সাইড বরফ হয়, 50 কেলভিন নামার আগে বাতাস তরল হয়ে যায়। মহাকাশের গড় তাপমাত্রা 3 কেলভিন। </p>
<p dir="ltr">প্রায় সাড়ে তিন দশক ধরে মানুষ চেষ্টা করে যাচ্ছে তাপমাত্রা 0 কেলভিনের কাছে আরো কাছে নিয়ে যেতে। লেজার রশ্মির সাহায্যে 0.000001 কেলভিন থেকে 0.000000001 কেলভিন তাপমাত্রার সৃষ্টি করা যায়। ক্ষার ধাতুর গ্যাসগুলো এই কাজের জন্য সবথেকে উপযোগী। লিথিয়াম, সোডিয়াম, পটাসিয়াম, রুবিডিয়াম, সিজিয়াম, ফ্রান্সিয়াম -- এই সাতটা মৌল হলো রসায়নের ভাষায় ক্ষার ধাতু। ফ্রান্সিয়াম তেজস্ক্রিয়, তাই ওকে না ঘাটানোই ভালো। তা বাদে বাকি ধাতুগুলো গ্যাসীয় অবস্থায় নিয়ে গিয়ে দেখা যায় পরমাণু গুলো নিজেদের মতো স্বাধীন ভাবে ছোটাছুটি করছে। সোজা নিয়ম হলো, গ্যাসের তাপমাত্রা কমাতে গেলে পরমাণুদের ছোটাছুটি থামাতে হবে। তার জন্য ধাতব গ্যাসটাকে এমন একটা কাচের ঘরে আটকাতে হবে যেটা নিঁখুতভাবে বায়ুশূন্য। </p>
<p dir="ltr">ধরা যাক ওই ঘরে সোডিয়াম বাষ্প ভর্তি। ভেতরের চাপ অনেক অনেক কম। তাই সোডিয়ামের নিস্তড়িত্ পরমাণু গুলো একটা আরেকটার থেকে অনেক দূরে দূরে নিজের মতো করে ছুটছে। আমরা ধরলাম একটা পরমাণুকে কোন দিব্যচোখ দিয়ে। দেখছি সেটা ডানদিকে ছুটছে। আমি ডান দিক থেকে কণাটার ঠিক মুখোমুখি একটা লেজার রশ্মি চালিয়ে দিলাম। লেজারটার শক্তি এমন যে তা পরমাণু শোষণ করতে পারে না। </p>
<p dir="ltr">পরমাণু খুব নিয়মনিষ্ঠ কণা। যে কোন শক্তি মাত্রা পেলেই সে শোষণ করবে বা খাবে এমনটা নয়। পরমাণুর ভেতরে নিউক্লিয়াসকে ঘিরে বিভিন্ন কক্ষপথে থাকে ইলেকট্রন। বাইরে থেকে শক্তি পেলে ইলেকট্রন উত্তেজিত হয়ে বেশী শক্তির কক্ষে চলে আসে। উত্তেজিত হবার জন্য যতটুকু শক্তি প্রয়োজন ততটুকুই পরমাণু নেবে। প্রতিটা পরমাণুতে হালকাভাবে আটকানো ইলেকট্রন এক বা একের বেশী আছে। সেইমতো প্রতিটি পরমাণু উত্তেজিত হতে একটা ন্যূনতম শক্তি লাগে। এরথেকে একটু খানি কম শক্তির আলো পরমাণুতে পড়লেও পরমাণু সে আলোর ফোটনকণা খায় না। তবে ফোটনের সাথে মুখোমুখি ধাক্কা খেয়ে ওর বেগ কমে। কিন্তু পরমাণুটা এখনো ওই ডানদিকে ছুটছে। ছুটতে ছুটতে সে আশ্চর্য হয়ে লক্ষ করলো তার সাপেক্ষে লেজারের ফোটনের শক্তি যেন ক্রমেই বেড়ে চলেছে। ডানদিক থেকে মুখোমুখি ছুটে আসা ফোটনগুলো যেন হর্ন বাজানো (শক্তি) অ্যাম্বুলেন্স, যত কাছে যাচ্ছে হর্ন বেড়ে যাচ্ছে মনে হচ্ছে। পরমাণু ভাবে, এ ডপলার সাহেবের কৃপা। ডপলার এফেক্ট। ফোটনের শক্তি বাড়ছে মানে পরমাণু একসময় তাকে খেতে পারে, যেটা আগে হচ্ছিলো না। পরমাণু ছোটাছুটি করার আগ্রহ হারালো, ডানদিকে গেলেই খাবার মতো ফোটন পাওয়া যায় যখন তখন এদিক ওদিক ছোটাছুটি করে কী লাভ! এদিকে উল্টোদিক থেকে আসা ফোটন গিললে পরমাণুর বেগ যে কমবে সেটা ফুটবলার মাত্রই বোঝেন। বেশী জোরে নিজে ছুটলে বলটা ফসকাবে। কাজেই পরমাণুর বেগ কমতে হলো। পরমাণুর অস্থিরতা যেন কমছে! আবার সঠিক শক্তির ফোটন গিললে পরমাণুর ইলেকট্রন উত্তেজিত হবেই। বেশীক্ষণ এরকম অবস্থায় না থেকে পরমাণু সেই ফোটন ছেড়ে স্বাভাবিক হতে চাইবে। ফোটন বেরোনোর সময় পরমাণু উল্টোদিকে ধাক্কা খায়, ঠিক গুলি বেরোলে বন্দুক যেমন সরে আসে। এ সময় পরমাণুর অস্থির হয়ে যাবার কথা। কিন্তু ফোটন বেরনোর দিকের যেহেতু কোনো ঠিক নেই, তাই সবদিকের সম্ভাব্য ধাক্কা একে অন্যকে কাটাকুটি করে দেয়। পরমাণুর অস্থিরতা বাড়তে দেয় না।</p>
<p dir="ltr">কিন্তু পরমাণুটা যদি খালি ডান দিকে না চলে? তবে উপায়?</p>
<p dir="ltr">বেশ, তাহলে বাঁদিক ডানদিক সামনে পেছনে উপরে নীচে x y z তিনটে অক্ষ বরাবর লেজার রশ্মি দিয়ে আক্রমণ শানাও। পরমাণু আর ছোটাছুটি করতে পারবে না। আলোকীয় ফাঁদের পাল্লায় পড়ে পরমাণু প্রায় স্থির হয়ে পড়েছে এখন। তাপমাত্রা নামছে হু হু করে। লেজার দিয়ে মাইক্রোকেলভিন তাপমাত্রায় শীতলীকরণের এই পদ্ধতি আবিষ্কারকে 1997 সালে মানুষ সম্মান জানিয়েছে পদার্থবিদ্যায় নোবেল দিয়ে। কেন, সে গল্পের জন্য তো পুরো নতুন বছর রইলোই। </p>
<p dir="ltr">এক কেলভিনের দশ লক্ষ ভাগের এক ভাগ পর্যন্ত ঠান্ডা করা পরমাণুপুঞ্জ আটকে আছে আলো দিয়ে বানানো এক চিটেগুড়ে, লেজারের ঝর্ণাধারায় ধুইয়ে শীতল করা কী একেই বলে?</p>
<p dir="ltr">©শ্রুতিসৌরভ বন্দ্যোপাধ্যায়</p>
SHRUTI SAURABHhttp://www.blogger.com/profile/06397705002239295269noreply@blogger.com1tag:blogger.com,1999:blog-4503579633352654506.post-79071438891512982772018-04-22T03:30:00.001-07:002018-04-22T03:30:47.423-07:00পরমাণুর কথা<p dir="ltr">পরমাণুর ভালো বাসা</p>
<p dir="ltr">পরমাণুর ভিতরের অধিকাংশ স্থানই ফাঁকা, আর এর ঠিক মধ্যিখানে দলা পাকিয়ে আছে নিউক্লিয়াস। তাকে ঘিরে আছে ইলেকট্রনের মেঘ। এ দুয়ের মাঝে অনেকটা জায়গাই স্রেফ্ শূন্য। </p>
<p dir="ltr">দুটো পরমাণু একে অন্যকে কতটা ভালোবাসলে একটার ভেতরে আরেকটা সেঁধিয়ে যেতে পারে? নির্দিষ্ট দূরত্বে থাকলে না হয় হলো রাসায়নিক বন্ধন, 'অন্যায়' করে হলে আয়নীয়, আর 'সম্ ঝোতা' করে হলে সমযোজী, কিন্তু ওই অব্দিই। বেশী কাছে এগোলে ইলেকট্রনের মেঘগুলো একে অন্যকে ঠেলাঠেলি করতে শুরু করবে। ধাতব বন্ধনী অবশ্য একটু উদার। সেখানে ইলেকট্রন মেঘগুলো বড়ো আলগা, নিজেরা হাত ধরাধরি করে ইলেকট্রনের সমুদ্র বানায়, তাতে ভেসে থাকে সেতুবন্ধনের পাথরের মতো ধনাত্মক আয়নগুলো। এসবই সাধারণ চাপ আর তাপমাত্রার ধারণা। </p>
<p dir="ltr">একটু অসাধারণ তাপমাত্রায় আসা যাক। বজ্রপাতের সময় বাতাসের তাপমাত্রা হয়ে যায় প্রায় 28000 কেলভিন। ওই ভয়ানক গরমে বাতাসের অণু পরমাণু থেকে ইলেকট্রন খুলে বেরিয়ে আসে, পরমাণু হয়ে যায় আয়ন, বাতাস হয়ে যায় আয়নিত। এমনি বাতাসের থেকে এর আচরণ আলাদা। এটা হলো পদার্থের চার নম্বর অবস্থা, প্লাজমা।</p>
<p dir="ltr">তাপমাত্রা কমালে? পরম শূন্য বা জিরো কেলভিনের কাছে যাওয়া বেশ কষ্টসাধ্য ব্যাপার। 1995 সালে রুবিডিয়াম নামে এক ধাতুকে গ্যাসীয় অবস্থায় নিয়ে গিয়ে তার উষ্ণতা 0.00000017 কেলভিন পর্যন্ত নামানো হয়েছিলো। এতো কম তাপমাত্রায় পরমাণুগুলো বোসন কণার মতো আচরণ করে। বোসন কণা অনেকটা শেয়ালদের মতো। সব শেয়ালের যেমন এক রা, তেমনি একগাদা বোসনের সবাই একই শক্তিমাত্রায় থাকতে পারে, একই কোয়ান্টামীয় বাসা শেয়ার করতে পারে। মোট কথা একেবারে গলায় গলায় ভাব! যদি ওদের সাথে প্রতিদিন বাজার করতে গিয়ে দেখা হতো, দেখতাম বাবা মা মাসী মেসো, পিসী, পিসে, মামা কাকা সবাই একরকম দেখতে, কারো থেকে কাউকে আলাদা করে চেনার জো নেই। পরমাণু যতক্ষণ সাধারণ ভাবে ছিলো, ততক্ষণ এমনটি হয়নি। জিরো কেলভিনের ঠ্যালায় পড়ে সবাই যেন অনেক দেহ, এক প্রাণ। 'একই সূত্রে বাঁধিয়াছে সহস্র জীবন'। দেখা গেলো, প্রায় 2000 খানা রুবিডিয়াম পরমাণু এই অবস্থায় ভালোবাসাবাসি করে থাকতে পারে। এরা আর সাধারণ আলাদা আলাদা পরমাণু নেই, সৃষ্টি হয়ে গেছে বোসনীয় মহাপরমাণু! নিঃসন্দেহে এটাও পদার্থের আরেকটা নূতন অবস্থা। একে বলা হয় 'বোস-আইনস্টাইন ঘনীভূত অবস্থা', পদার্থের পঞ্চম অবস্থা। </p>
<p dir="ltr">কিন্তু এখনো পরমাণুরা একে অন্যকে এতোটাও ভালোবাসতে পারে নি যে একে অন্যের ভিতরে হৃদয়ে ঢুকে যাবে! স্বাভাবিক বুদ্ধি বলে, তাহলে একটা পরমাণুকে আকারে অস্বাভাবিক বড়ো হতে হবে। তবে ওর মধ্যে আরেকটা পরমাণু সেঁধোতে পারবে। কিন্তু তাইবা হবে কি করে? পরমাণুদের পাম্প দিয়ে ফোলানো যায়? যায় বটে, তবে শক্তি পাম্প করতে হবে। শক্তি দিয়ে পরমাণুকে খেপিয়ে দিলে ইলেকট্রনের মেঘেরা ছটফট করতে করতে নিউক্লিয়াস থেকে বেশ দূরে সরতে পারে। পরমাণুর সীমানা তো তদ্দুরই যদ্দুর ইলেকট্রন মেঘ বিস্তৃত। খ্যাপা পরমাণুতে ইলেকট্রনমেঘ যত নিউক্লিয়াস থেকে দূরে ছড়িয়ে যাবে ততই পরমাণুর আকার বাড়বে। বেশী খেপালে আবার ইলেকট্রন বিরক্ত হয়ে পাকাপাকি ভাবে পালাবে। তাই সাবধান! পরমাণু ফুলুক, কিন্তু যেন না ফাটে। ফাটলেই আয়ন হয়ে যাবে! পরীক্ষা করে দেখা গেছে যে ইলেকট্রনগুলোকে নিউক্লিয়াস থেকে সরালে সবচাইতে বেশী প্রায় কয়েকশো ন্যানোমিটার (0.000000001 মিটার) ফাঁকা জায়গা মেলে। তার মধ্যে প্রায় 500 খানা সবচেয়ে ছোটো যে পরমাণু,হাইড্রোজেন, তারা ধরে যাবে! এইরকম অস্বাভাবিক ফুলকো পরমাণুকে বলে রিডবার্গ পরমাণু। রিডবার্গ পরমাণুদের আচার আচরণ স্বাভাবিক পরমাণুদের মতো যে হবে না তা বলাই বাহুল্য! এইরকম পরমাণুদের তৈরী করার সবচেয়ে আধুনিক উপায় হলো নির্দিষ্ট শক্তির লেজার রশ্মি ছোঁড়া। লেজারের শক্তি থেকে পরমাণু শক্তি নিয়ে খেপে ফুলে উঠবে। জন্ম হবে রিডবার্গ পরমাণুর। </p>
<p dir="ltr">আমেরিকার টেক্সাসে, রাইস বিশ্ববিদ্যালয়ে একটু অন্যরকম ভাবে রিডবার্গ পরমাণু তৈরী করা হলো। 2018 সালের ফেব্রুয়ারির শেষদিকে বিজ্ঞানীরা জানালেন তারা কী কী করতে সক্ষম হয়েছেন। প্রথমে স্ট্রনসিয়াম ধাতুর পরমাণুদের জিরো কেলভিনের খুব কাছাকাছি বোস-আইনস্টাইন ঘনীভূত অবস্থায় নিয়ে আসা হলো। অর্থাত্ পরমাণু গুলো এখন আর আলাদা আলাদা পরমাণু হিসেবে কাজ করছে না,<br>
ভালোবাসায় তারা মাখোমাখো হয়ে একটাই মহাপরমাণু বা সুপারঅ্যাটম হয়ে গেছে। খুব কাছাকাছি ঘন হয়ে বসেছে তারা। এমনি সময় নির্দিষ্ট শক্তির লেজার রশ্মি ফায়ার করা হলো। মহাপরমাণুর জোটের ভিতরে ধরাযাক একটি পরমাণু রিডবার্গ পরমাণু হয়ে ফুলতে লাগলো। মোটা বন্ধুর ঘামের গন্ধে বাকিদের পালানোর কথা! কিন্তু ভালোবেসে ফেলেছে যে, যাবে কোথায়! বর্ণালীবিক্ষণ যন্ত্র জানালো বিজ্ঞানীদের, ফুলে ওঠা রিডবার্গ পরমাণুর মধ্যে ঢুকে পড়েছে অন্তত 170 টার মতো স্ট্রনসিয়ামের পরমাণু, বোস-আইনস্টাইন ঘনীভূত অবস্থা থেকে! এই পরিস্থিতি যে হতে পারে তা কম্পিউটার-নির্ভর তাত্ত্বিক গণনায় আগেই জানা গেছিলো 2016 সালে। এখন প্রমাণও পাওয়া গেলো।</p>
<p dir="ltr">শেষমেষ তাহলে পরমাণুর পেটেও পরমাণু দলবল নিয়ে ঢুকে পড়লো! এখন তাহলে অবস্থাটা কী? স্বাভাবিকের থেকে বেশী ফোলা একটা পরমাণু, তার মধ্যে একটা নিউক্লিয়াস আছে, আর সেই নিউক্লিয়াসকে ঘিরে ঘুরছে শুধু ইলেকট্রনগুলো নয়, 170 খানা এমনি পরমাণু! মা পরমাণুর পেটের ছানা পরমাণু গুলোর সাথে একরকম পারমাণবিক বন্ধনীও আছে। এই আনকোরা অদ্ভূত বন্ধনীর নাম দেওয়া হয়েছে 'রিডবার্গ পোলারন'। পদার্থের অবস্থার লিস্টিতে নবতম সংযোজন এই অতিশীতল অবস্থা।</p>
<p dir="ltr">মহামানবেরা অনেক আগেই বলে গেছেন, ভালোবাসায় সব হয়! </p>
<p dir="ltr">© শ্রুতিসৌরভ বন্দ্যোপাধ্যায়<br>
</p>
SHRUTI SAURABHhttp://www.blogger.com/profile/06397705002239295269noreply@blogger.com0tag:blogger.com,1999:blog-4503579633352654506.post-18609810961296404612014-04-15T09:00:00.003-07:002014-04-15T09:00:57.177-07:00Do Not Fear<div dir="ltr" style="text-align: left;" trbidi="on">
<div class="MsoNormal">
“Nothing in life is to be feared, it is only to be
understood. Now is the time to understand more, so that we may fear less.” <br />
― <a href="http://www.goodreads.com/author/show/126903.Marie_Curie">Marie Curie</a></div>
</div>
SHRUTI SAURABHhttp://www.blogger.com/profile/06397705002239295269noreply@blogger.com0